দুই যুগ ধরে সংস্কার বঞ্চিত মগনামা স্কুল সড়ক

fec-image

দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে সংস্কার বঞ্চিত হয়েছে কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামা হাই স্কুল সড়কটি। দীর্ঘ সময় সংস্কার বঞ্চিত হওয়ায় জনগুরুত্বপুর্ন গ্রামীন এ সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। সরকার যায়, আর আসে। কিন্তু সড়কটির কোন ধরনের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আশ্বাসের মধ্যে পার করেছে দুই যুগ সময়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের বিপুল অংশ থেকে উঠে গেছে ইট। প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ জুড়ে সড়ক থেকে মাটিও সরে গেছে। প্রায় এক কিলোমিটারে কিছু অংশে ইট রয়েছে। পুরো সড়কটি খানাখন্দকে ভরপুর। ৩/৪টি গ্রামের ৮/৯ হাজার মানুষের একমাত্র চলাচল মাধ্যম এই সড়কটি। প্রতিনিয়ত মানুষ এ সড়কের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে সড়কটির সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ থেমে গেছে। হাইস্কুল সড়কটি মগনামার এক সময়ের প্রধান যাতায়াত মাধ্যম। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, মগনামা সৃষ্টিলগ্ন থেকে এ সড়কটি হয়েছিল। বৃটিশ আমলে অবিভক্ত মগনামা ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। মগনামা বাজার থেকে সড়কটি ব্যাঙওয়াল ঘোনা হয়ে মুহুরীপাড়ার মাঝখান দিয়ে বহমান। হাইস্কুল থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে গিয়ে উজানটিয়ার করিমদাদ মিয়া চৌং ঘাট পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিল। তবে উজানটিয়া পৃথক ইউনিয়ন হওয়ার পর থেকে এ সড়ক মগনামার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। হাইস্কুল সড়কটি নামকরণ করা হয়েছিল ১৯৯২ সালের দিকে।

১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস হয়। সেই সময় দুর্গত এলাকায় মানুষের যাতায়াত ও ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করতে ১৯৯২ সালের শুরুর দিকে হাইস্কুল সড়কটি সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। সেই সময় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মগনামা হাইস্কুলের নিকট মুহুরীপাড়া বাজার থেকে পূর্বদিকে ব্যাঙওয়াল ঘোনা হয়ে বাইন্যাঘোনা পর্যন্ত সড়কটিতে ইট বসানোর উদ্যোগ নেন। তবে মুহুরীপাড়া বাজার থেকে রুপাইখালের মাথা পর্যন্ত পশ্চিম অংশে ব্রিক সলিন দ্বারা উন্নয়ন হয়েছে।

এ ছাড়াও বাইন্যাঘোনা পয়েন্টে সড়ক ও জনপদ বিভাগের রাস্তা থেকে আশ্রায়ন প্রকল্পের পশ্চিম দিকে গিয়ে ১০ চেইন পর্যন্ত পূর্ব প্রান্তেও ইট বসানো ছিল। জাফর মাস্টারের ঘোনা থেকে মোজা মিয়ার ঘোনা পর্যন্ত এক কিলোমিটারে ইট বসানো ছিলনা। তবে এক কিলোমিটারসহ প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটারে সড়কটিতে ব্রিক সলিন ও মাটি খনন করে উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত ছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের দিকে হাইস্কুল সড়কের এক কিলোমিটারে পুন:সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন হয়। মুহুরীপাড়া বাজার থেকে মোজা মিয়ার ঘোনা পর্যন্ত ব্রিক সলিন অংশে পুন:সংস্কার কাজ হয়েছিল।

এরপর থেকে হাইস্কুল সড়কের বাইন্যাঘোনা থেকে মুহুরীপাড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় দু’যুগ ধরে আর কোন সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন হয়নি। সড়কটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সাড়ে তিন কিলোমিটারের মধ্যে মুহুরীপাড়া বাজার থেকে মোজা মিয়ার ঘোনা পর্যন্ত সড়কটিতে অধিকাংশ অংশে এখন আর ইট দেখা যাচ্ছেনা। এখন কাঁচা সড়কে রূপান্তর হয়েছে।

পেকুয়া কিংস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আমিন জানান, মগনামা প্রবর্তন থেকে এ সড়কটির সৃষ্টি। কিন্তু রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর উন্নয়ন থেমে গেছে। এক বছর আগে আমার বাবা মারা গেছেন। তিনি যখন অসুস্থ বোধ করছিলেন আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু সড়কটি এত খারাপ হয়ে গেছে এর উপর দিয়ে আমার বাড়িতে এ্যাম্বুলেন্স অথবা গাড়ি নিয়ে যেতে পারেনি। আমার বাড়ি থেকে মুহুরীপাড়া বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটারে সময় গিয়েছে ১ ঘন্টা। সড়কটির কারণে সঠিক সময়ে আমার পিতাকে আমরা চিকিৎসকের কাছে নিতে পারেনি।

লবণ ব্যবসায়ী মো. ইউনুছ, মনির, ইলিয়াছ মাঝি, ছরওয়ার কামালসহ আরো অনেকে জানান, ২০ বছরের বেশী সময় আমরা এ সড়ক নিয়ে চরম কষ্টে আছি। সব জায়গায় উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমাদের এ সড়কটি চরম অবহেলিত। আমরা প্রতি বছর বর্ষার সময় নিজেরা টাকা সংগ্রহ করে কিছু ইট ও বালি দিয়ে থাকি।

সমাজ কমিটির সর্দার ও ইউনিয়ন আ’লীগ সহসভাপতি নাজেম উদ্দিন জানান, মগনামার মধ্যে ৫নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশী অবহেলিত। মুহুরীপাড়ার মানুষগুলো আ’লীগ করে। বিএনপির শাসনের সময় আমরা আ’লীগ করি বলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হাই স্কুল সড়কের উন্নয়ন থেমে গিয়েছিল। এরপর এখন আমরা দলীয় এমপি পেয়েছি। কিন্তু এমপি সাহেবও বিএনপি চেয়ারম্যানের অনুকুলে চলে গেছে। রহস্যজনক কারনে সড়কটির উন্নয়ন হচ্ছেনা।

ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল এনাম জানান, আমি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় একবার সংস্কার হয়েছিল। এখানে না আসলে বুঝা যাবেনা মানুষের দুঃখ দুর্দশা কি। অপরাধ একটাই পাড়ার ভোটাররা আ’লীগ করেন। স্বাধীনতার সময় যারা আমাদের সাথে বিরোধীতা করেছে এখন ওদের সন্তানরা আমাদের দলের কিছু নেতার সাথে সম্পর্ক করেছে। এরাই মগনামার সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছে। এমপি সাহেব ধানের শীষের চেয়ারম্যানের কথায় রাস্তাটি উন্নয়নের উদ্যোগ নিচ্ছেনা।

মগনামা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলমগীর জানান, কিছু মানুষের কুদৃষ্টির মধ্যে হাইস্কুল সড়কের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ওয়াসিম চেয়ারম্যান এর জন্য দায়ী। এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান রাজু সড়কটি উন্নয়নে বিপরীত ছিল।

নাসরিন সোলতানা লিলি, মাইমুনা জন্নাত আরবি, রাকিবুল হাসানসহ শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা পাদুকা দিয়ে হেঁটে যেতে পারিনা। সড়কের সব জায়গায় এখন পানি ও কাঁদা। মনে হচ্ছে আমরা এ রাষ্ট্রের কেউ নই। আপনারা একটু দেখতে আসেন। আমরা কত দুর্ভোগের মধ্যে আছি। গাড়ি চলাচল থেমে গেছে।

চট্টগ্রাম এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আমার বাবা ক্যান্সার রোগী। অসুস্থবোধ করলে আমরা দ্রুত সময়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারিনা। কারণ এখন বর্ষার সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করলে এ সড়কটি এ ভাবে থাকতে পারেনা।

মগনামা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম জানিয়েছেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য উপজেলা এল জি আইডি স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরকে অবগত করা হয়েছে। ওনারা আশস্ত করেছেন বৃষ্টি কমলে কাজ শুরু করবে বলে।

পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আসলে সড়কটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ন। এটি বৈষম্য ও প্রতিহিংসার কারণে উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে আছে। এলজিইডির মাধ্যমে এর সংষ্কারের উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পেকুয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল আলিম জানান, আসলে সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। আমি একবার মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়েছিলাম। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন