পর্যটকের ফেলে যাওয়া বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ

fec-image

মেরিন ড্রাইভ সড়ক লাগোয়া সারি সারি ঝাউগাছের সবুজ বাগান; তারই পশ্চিমধারে বিস্তীর্ণ নীল দরিয়া; বাতাসের লেজ ধরে খেলা করছে ঝরঝরে বালু- সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে এখানে বেড়াতে আসেন শত শত ভ্রমণবিলাসী।

উখিয়া উপজেলার অন্তর্গত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের একটি অংশ সোনারপাড়া সৈকত। দিন দিন এই সৈকত প্রিয় হচ্ছে স্থানীয় দর্শনার্থী ও পর্যটকদের কাছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মানুষ এখানে প্রিয়জন ও পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন। বিশেষ করে, স্থানীয় তরুণদের ঝটিকা সফর ও সৈকত ঘিরে গড়ে ওঠা ঝুপড়ি দোকানগুলোয় সন্ধ্যাকালীন আড্ডায় সরব থাকে এই সৈকত। এ ছাড়া ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবারে বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিচ ফুটবলে মেতে ওঠেন।

কিন্তু জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমানে দূষিত হচ্ছে এই সৈকতের পরিবেশ।

বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ আদালত মানুষের বিবেক; তবে এ কথা যে সবসময় সত্য নয়, তারই যেন প্রমাণ পাওয়া গেল সোনারপাড়া সৈকতে গিয়ে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। সৈকতজুড়ে প্লাস্টিকের বোতল, চিপস-চানাচুরের প্যাকেট, খাবারের প্যাকেট, পলিথিন, কাগজ ও ডাবের বাকলসহ বিভিন্ন পরিবেশ বিধ্বংসী বর্জ্যপদার্থ পড়ে আছে। দর্শনার্থীরা যেখানে-সেখানে এগুলো ফেলছেন। এমনকি, মানুষের মলমূত্রের দেখা মিলেছে বালিয়াড়িতে; যেন পাবলিক শৌচাগার। এ ছাড়া ভোজন শেষে দর্শনার্থীদের ছুড়ে ফেলা নষ্ট খাবারগুলো ঢেউয়ের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে সাগরে। সবমিলিয়ে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখা দিয়েছে। এসব কারণে একদিকে যেমন দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্য।

সচেতন পর্যটকরা মনে করছেন, অব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন সোনারপাড়া সৈকতের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভ্রমণপ্রিয় মানুষগুলো মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

সোনারপাড়া সৈকতে নিয়মিত দর্শনার্থীরা ভিড় করলেও এখানে নেই কোনো বিচকর্মী, নেই টুরিস্ট পুলিশ। একপ্রকার অভিভাবকহীনতায় রয়েছে।

উখিয়া নাগরিক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরিবেশবাদী জসিম আজাদ বলেন, দেশের পর্যটন শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। এই সৈকত দেখভালের জন্য বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি রয়েছে; যাদের কাজ সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। দেশি-বিদেশি ও স্থানীয় পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সৈকতে সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। পরিবেশ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকলেও এই সৈকতে দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো বিচকর্মী নেই। তবে জেলা পর্যায়ে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি রয়েছে। সমুদ্রসৈকতে কোনো অসংগতি দেখা দিলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।

সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা ব্র্যান্ডিং ও পর্যটন সেল) তামজীদুর রহমান তন্ময় বলেন, ওদিকে এখনো আমাদের বিচকর্মী দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আমাদের মাথায় থাকবে। এ ছাড়া সৈকতের পরিবেশ দূষিত হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, পরিবেশ দূষণ, সমুদ্র সৈকত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন