পেকুয়ায় গ্রাম পুলিশকে হত্যার চেষ্টা : বসতবাড়ী ভাঙচুর

fec-image

পেকুয়ায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুবৃর্ত্তদের কবল থেকে প্রাণে বেঁচে গেল ইউপির মনছুর আলম (৩৬) নামের এক গ্রাম পুলিশ। এ সময় ভাড়াটে দুবৃর্ত্তরা ওই গ্রাম পুলিশের নির্মিত একটি বসতবাড়িও গুড়িয়ে দেয়। ভাড়াটে বহিরাগত দুবৃর্ত্তরা ধারালো কিরিচ ও দা’সহ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে গ্রাম পুলিশের বাড়ি ঘিরে ফেলে।

এ সময় মুঠোফোনে বিষয়টি পুলিশ ও স্থানীয়দের অবহিত করা হয়েছে। খবর পেয়ে বাজার থেকে শত শত লোকজন ওই স্থানে ছুটে যান। এ সময় অবরুদ্ধ অবস্থায় ওই গ্রাম পুলিশকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। তবে স্থানীয়দের উপস্থিতি আঁচ পেয়ে হামলাকারী দুবৃর্ত্তের ভাড়াটে লোকজন সটকে পড়ে। এ সময় ভাড়াটে লোকজন কিরিচ, দা ও দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়।

রবিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা পূর্বপাড়া এলাকার জালাল আহমদের পুত্র গ্রাম পুলিশ মনছুর আলম (৩৬) এর বসতবাড়িতে এঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সোনাইছড়ি মৌজার বিএস ৪৪৮ নং খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক নুরুল হুদার ছেলে হামিদুল হক মানিক থেকে গ্রাম পুলিশ মনছুর আলমের ছোট ভাই মিজবাহ উদ্দিন বাহার ১৩.৮১ শতক জায়গা খরিদ করে। ২৫ নভেম্বর ওই জায়গা কবলা সম্পাদন হয়। যার কবলা নং ২০৯০। ক্রেতা মিজবাহ উদ্দিন বাহার চট্টগ্রামস্থ একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ (আইসিওর) ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত।

মূলত জমিটি মনছুরকে বাড়ি করিয়ে দিতে ছোট ভাই খরিদ করেন। টইটং ইউপির কর্মরত গ্রাম পুলিশ মনছুর আলম মহল্লাদার হিসেবে এলাকার আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে কর্মরত। প্রতি সপ্তাহে দু’দিন ইউপিতে নৈশ প্রহরী দিতে হয়। এ ছাড়া টইটংয়ের জনপ্রতিনিধি ও থানা পুলিশকে সহায়তা দিতে যে কোন মুহুর্তে তাকে ডাকানো হয়। পৈত্রিক বাড়ি পাহাড়ি দুর্গম এলাকায়। সেই হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তার জন্য দু:সাধ্য হয়ে যায়।

এবিসি সড়কের পাশে জায়গাটি কিনে বড় ভাইকে বাড়ির জন্য কিনে দিয়েছিলেন ছোট ভাই। এ দিকে জায়গা ক্রয় করার এক সপ্তাহের মধ্যে গভীর রাতে একটি চক্র সেখানে অনুপ্রবেশ করে একটি কুঁড়েঘর তৈরি করে। মৃত শামশুল আলমের পুত্র মুবিনুল হকের নেতৃত্বে একটি দখলবাজচক্র সেখানে ভাড়াটে লোকজন নিয়ে জবর দখল পাঁয়তারা করে। মনছুর আলমও বসতির জন্য বাড়ি নির্মাণ করে।

২০ ডিসেম্বর সকালে মুবিনুল হকের নেতৃত্বে একদল ভাড়াটে লোকজন মনছুর আলমের বসতবাড়িতে হানা দেয়। এ সময় তারা বাড়িটি গুড়িয়ে দেয়। মনছুর আলম ও তার স্ত্রী রিনা বেগম তাণ্ডব না চালাতে বাধা দেয়।

এ সময় মুবিনুল হকের ভাড়াটে লোকজন কিরিচ নিয়ে ধেয়ে যায়। মনছুর আলমকে প্রাণনাশ চেষ্টা চালায়। মুঠোফোনে মনছুর আলম স্থানীয়দের সহযোগিতা চাইলে ধনিয়াকাটা ষ্টেশন থেকে লোকজন ও পূর্ব ধনিয়াকাটা থেকে তার নিকটতম আত্মীয় স্বজন মহিলারা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। পরিস্থিতি আঁচ পেয়ে ভাড়াটে দুবৃর্ত্তরা দেশীয় তৈরী কিরিচ ও দা ফেলে সটকে পড়ে।

মনছুর আলম জানান, মানুষ না আসলে আমাকে নিশ্চিত হত্যা করা হতো। মনছুর আলমের স্ত্রী রিনা আক্তার জানান, তারা আগে থেকে কিরিচ, দা ও অস্ত্র সস্ত্র মজুদ করে রাখে। আমাকেও শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালানো হয়।

মিজবাহ উদ্দিন বাহার জানান, আমরা ৩ ভাই চট্টগ্রামে থাকি। চৌকিদারকে ঘর বেঁধে দিতে জায়গাটি কিনেছি। মুবিন মামলাবাজ ও দখলবাজ প্রকৃতির লোক। তার বাবা যেমন জায়গা পাবেন তেমনি তার চাচা, জেঠারাতো পাবেন। আমার জায়গায় হস্তক্ষেপ করা তার কোন অধিকার নেই। সৎ মা রোহেনা বেগম জানান, আমরা ছুটে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করেছি। কলেজ ছাত্রী আখি আক্তার জানান, মুবিনের ভাড়াটে দুবৃর্ত্তদের হাতে কিরিচ ছিল। আমরা গিয়ে মামা মনছুরকে উদ্ধার করেছি। ধনিয়াকাটার কামাল, আজগর আলী, ফিরোজ আহমদ, জাহাঙ্গীর, মিনারসহ আরও অনেকে জানান, আমরা দোকানে ছিলাম। মনছুরকে আক্রমণ করা হচ্ছে। এ খবরে আমরা ছুটে গিয়েছি যাওয়ার পর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। কিরিচ, দা মুবিনুল হক আগে থেকে মজুদ করে।

বাহারের স্ত্রী মুনিরা বেগম ময়না জানান, আমার স্বামীর জায়গা থেকে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। টইটং ইউপির ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, মুবিন অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করছে। চাচাতো ভাই জায়গা বিক্রি করলে মুবিনের সমস্যা কি।

ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান হাজী শাহাব উদ্দিন জানান, মনছুর পরিষদে বিচার দায়ের করে। মুবিনকে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছিলাম। শুনানীতে অনুপস্থিত ছিল।

পেকুয়া থানার এ,এস,আই জসিম উদ্দিন জানান, চৌকিদার মনছুর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমি ছুটিতে আছি। এরপরও সমস্যা হলে একজন অফিসারকে তাগিদ দিয়ে এসেছি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পেকুয়া, হত্যাচেষ্টা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন