বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষা ও উপজাতীয় আনুগত্য
আতিকুর রহমান বাঙ্গালী জাতি সত্তার ইচ্ছা ও প্রাধান্যই বাংলাদেশকে পৃথক এক স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে দেশভিত্তিক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ গৃহীত হলেও বাস্তবে এই সমন্বিত জাতি সত্তার ৯৯% হলো বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সমন্বিত। এই বাস্তবতার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিকভাবে সংগঠিত উপজাতীয় প্রাধান্য মন্ডিত জুম্ম জাতীয়তাবাদ ও তাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা। এতদাঞ্চলে বাংলাদেশী চরিত্র আরোপই এর সমাধান। বিবেচ্য বিষয় হলো: বিশেষ জাতিসত্তার আধিপত্য মন্ডিত এলাকাসমূহে স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার বা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার দাবী উত্থিত হয়, তার পক্ষে আন্দোলন গড়ে উঠে এবং চুড়ান্ত পর্যায়ে সশস্ত্র বিদ্রোহের অবতারণা হয়ে থাকে। এই আন্দোলন সংঘাত ও সংঘর্ষের পরিণতিতে ঐ অঞ্চলে অশান্তি, দুর্ভোগ ও মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। তাতে লোকেরা বিপুল সংখ্যায় হতাহত হয় এবং আত্ম রক্ষার্থে দেশ ত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় শান্তি স্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। কোন কোন মুরব্বী রাষ্ট্র এমন কি জাতিসংঘ পর্যন্ত তাতে হস্তক্ষেপ করে। এর সাম্প্রতিকতম নিদর্শন হলো বসনিয়া, ক্রোশিয়া ও সার্ভিয়ার পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া, গণভোটে প্রদত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের ভিত্তিতে পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতা লাভ এবং বিদ্রোহী দক্ষিণ সুদানেরও অনুরূপ সম্ভাবনার দিকে অগ্রযাত্রা। অনুরূপ জাতিগত উত্তেজনার প্রধান ক্ষেত্র হলো ফিলিস্তিন ও কাশ্মীর। বাংলাদেশের উপজাতীয় অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামও অনুরূপ একটি অশান্ত অঞ্চল। এখানেও ভিন্ন জাতিগত প্রাধান্যে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা ক্রিয়াশীল। একে নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকার উপায় নেই। দাতা মুরব্বী রাষ্ট্রসমূহকে পার্বত্য জনসংহতি সমিতি, তাদের ক্ষমতা লাভের পক্ষে উত্যক্ত করে চলেছে। সে ক্ষমতা শান্তি চুক্তি ভিত্তিক হলেও, তাতে তারা সীমাবদ্ধ থাকছে না। চুক্তির বাহিরে তারা দাবি জানিয়ে আসছে- প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলের পুণর্বাসিত বাঙ্গালীদের প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এবং চুক্তির অন্যতম দফা স্থানীয় আদি ও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। মূল পাঁচ দফা দাবীনামায় এ দাবিও ছিলো যে, ১৯৪৭ সালের পরবর্তী বসতি স্থাপনকারী বাঙ্গালীদের সবাই অনুপ্রবেশকারী এবং তাদের সহায়-সম্পত্তিও বেআইনী। উপজাতীয় বুদ্ধিজীবীরা যুক্তি দেখাচ্ছেন, ১৯৪৭ পর্যন্ত এতদাঞ্চলে বাঙ্গালীদের সংখ্যানুপাত ছিলো ২.৫০% যা বর্তমানে হয়ে দাঁড়িয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ। উপজাতীয়দের ভূমিহীন সংখ্যালঘু করার এই প্রক্রিয়াকে জোরদার করছে বাঙ্গালী শাসন-প্রশাসন ও বাহিনী প্রাধান্য। এসবের উপজাতীয়করণ আবশ্যক। নতুবা উপজাতীয়রা নির্যাতন ও অবিচার থেকে রেহাই পাবে না। বাঙ্গালী উপনিবেশবাদ ও ইসলামী করণে তারা অতিষ্ঠ। তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, মানবিক অধিকার ও অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। এই এক তরফা অভিযোগের তীব্রতায় তাদের প্রতি অধিকাংশ মুরব্বী রাষ্ট্র সহানুভূতিশীল। তাদেরই চাপের মুখে অসম শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এবং তারাই অবাস্তবায়িত দফা সমূহ বাস্তবায়নে চাপ দিচ্ছেন। এখন বাংলাদেশ কেবল উপজাতীয়দের চাপে জর্জরিত নয়, মুরব্বী রাষ্ট্রসমূহের অসন্তোষ বিদ্ধও বটে। উপজাতীয় রাজনৈতিক বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে বিপুল অকাট্য যুক্তি আছে, এবং ভুল যুক্তি ও তথ্যের উপর উপজাতীয় দাবি ও আন্দোলন পরিচালিত এবং তাতে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এ বিষয়গুলোর আগাগোড়া পুনর্মূল্যায়ন আবশ্যক। উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ ও তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বীরা, পূর্ব তিমুরের মত গোলের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হচ্ছেন। অশান্তি দমন করার উদ্দেশ্যে তারা প্রথমেই জোর দিচ্ছেন বসতি স্থাপনকারী বাঙ্গালীদের প্রত্যাহার করে, পূর্বাবস্থা বহাল এবং চুক্তি অনুযায়ী ভোটার তালিকাও সংশোধিত হোক। অতঃপর দাবী উঠবে স্থানীয় রাজনৈতিক আকাঙ্কা নিরূপনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। বাংলাদেশ তো চুক্তির মাধ্যমে ফাঁদে পড়েই আছে এবং সাহায্য নির্ভরতা হেতু মুরব্বী রাষ্ট্রসমূহকে অবজ্ঞা করতে অক্ষম। সুতরাং তার পক্ষে করুন অসহায় অবস্থা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। পাকিস্তান, ভারত, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মত বাংলাদেশ দৃঢ় হতে পারবে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তান, ভারত, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের অবস্থা দৃঢ়। ফিলিস্তিন বাদে বর্ণিত তিন রাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রের জোরে বলিয়ান। তাদেরকে চাপিয়ে দেয়া মীমাংসায় বাধ্য করা যায়নি এবং যাবেও না। কিন্তু দরিদ্র দুর্বল বাংলাদেশের সে শক্তি অবস্থান নেই। তার নেতৃত্বের আসনেও শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব নেই। এ পর্যন্ত তার পক্ষে ঐতিহাসিক ও তথ্যগত এ যুক্তি প্রদর্শনও সম্ভব হয়নি যে, আত্ম নিয়ন্ত্রনকামী পার্বত্য উপজাতীয়রা স্থানীয় আদিবাসিন্দা নয়। তাদের আদি জাতীয় ভূমি আরাকান, বার্মা, মিজোরাম, ত্রিপুরা ইত্যাদি বাহিরাঞ্চল। তারা বৃটিশ আমলের অভিবাসী নাগরিক। এর পক্ষে অকাট্য দলিল ও ইতিহাস বিদ্যমান। তাদের প্রতি নির্যাতন ও অবিচার অনুষ্ঠানের দাবি অতিরঞ্জিত। বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে তারা অশিক্ষিত অস্বচ্ছল আর পশ্চাদপদ ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশ আমলে গত কয়েক দশক সময়ের মধ্যে অতি দ্রুততার সাথে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও উপজাতীয়দের বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হয়েছে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের হার উপজাতীয়দের মাঝে সর্বাধিক। আর্থিক সঙ্গতি আর ভূমি সংস্থানের হারও তাদের মাঝে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের শহর, বন্দর ও রাজধানীর অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসালয়, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থা ইত্যাদিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্র-শিক্ষক ইত্যাদি পদে উপজাতীয়রা গিজ গিজ করছে। তাদের সাজ-পোশাক, স্বাস্থ্য-স্বাচ্ছন্দ্য ঈর্ষণীয়। তারা এখন আদিম ও পশ্চাদপদ নয়। এই অঞ্চলে পাকা রাস্তা, বাড়িঘর, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি প্রচুর। দেশের অলংঘনীয় সর্বোচচ আইন সংবিধানে সমাধিকার, সমান পদ মর্যাদা ও মৌলিক মানবাধিকার সবার জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু চুক্তির আওতায় তাতেও শৈথিল্য প্রদর্শন করে, উপজাতীয়দের সম্পত্তি লাভ, কর্মসংস্থান, উচ্চ শিক্ষা, জনপ্রতিনিধিত্ব ইত্যাদিতে অগ্রাধিকার, এবং মন্ত্রীপদ, ও পরিষদীয় চেয়ারম্যান পদে একাধিকার মঞ্জুর করা হয়েছে। আইনত এটা অন্যান্য জনগোষ্ঠীর জন্য অবিচার। ভৌগোলিকভাবে পার্বত্য অঞ্চল, চট্টগ্রামের অংশ। চট্টগ্রামী জনগোষ্ঠী হলো এর আদি বাসিন্দা। স্থানীয় উপজাতীয়রা নিজেদের আদি চট্টগ্রামী বলে দাবীও করে না। মগেরা নামেই আরাকানী, মারমারা বর্মী, লুসাই ও মিজোরা মিজোরামবাসী, ত্রিপুরারা ত্রিপুরা রাজ্যবাসী, চাকমা মগ ও অন্যান্যরা বিতাড়িত আরাকানী এবং নিজেদের কথা-কাহিনী অনুযায়ী চাকমারা কোন এক অজ্ঞাত চম্পকনগর রাজ্যের প্রতি অনুগত অভিবাসী। বাংলাদেশ তাদের জাতিগত স্বদেশই নয়। এখানে উপজাতীয়দের সবাই আশ্রিত। এ দেশে তাদের সংখ্যা প্রাধান্যের ভিত্তিতে স্বাধিকার, স্বায়ত্তশাসন বা আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকারের প্রয়োগ হতেই পারে না। বৃটিশ আইন পার্বত্য শাসন বিধির ৩৫নং ধারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে ৫টি সার্কেলে বিভক্ত করেছে, ৪৬৫২ বর্গমাইল ব্যাপ্ত জাতীয় সম্পত্তি, যা রাষ্ট্রীয় বন, সংরক্ষিত বন, পাহাড়, ও হ্রদে বিভক্ত। গোটা ৫০৯৩ বর্গমাইল সম্বলিত পার্বত্য চট্টগ্রাম তিন উপজাতীয় সার্কেল তথা চাকমা সার্কেল, মাং সার্কেল, ও বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত নয়। আদিকাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহদাংশ জাতীয় বন ভূমি। আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকারের ভিত্তিতে এই গোটা অঞ্চল উপজাতীয়দের প্রাপ্য নয়। তারা দেশীয় জনসংখ্যার মাত্র আধা শতাংশ। জনসংখ্যা অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য ভূমির অনুপাত ৫০০ বর্গমাইলের বেশী হয় না। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের এক দশমাংশ। এখানকার জাতীয় অঞ্চলে ভূমিহীন বাঙ্গালীদের বসতি বিস্তারের অধিকার প্রাপ্য। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৬ ও ৪২ ধারা তাদের সে অধিকার মঞ্জুর করেছে। এটা দুঃখজনক যে, দেশের অখন্ডতা রক্ষায় ইতিহাস, ঐতিহ্য, আইন ও যুক্তিকে কাজে লাগান হচ্ছে না, নিশ্চুপ সময় ক্ষেপন করা হচ্ছে, এবং একদল রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী উপজাতীয়দেরই মদদ যোগাচ্ছেন, যা আত্মহত্যারই শামিল। কেউ কেউ এই অভিমত পোষণ করেন যে, সেনা মোতায়েন ও বাঙ্গালী বসতি স্থাপনের কারণেই উপজাতীয়রা নিজেদের ভূমি অধিকার ও অস্তিত্ব বিপন্ন মনে করছে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে এর কোন প্রতিকার না হওয়ার হতাশাতেই তারা বিক্ষুব্ধ ও বিদ্রোহী। শান্তিচুক্তি সম্পন্ন হলেও তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এতেও অশান্তি অব্যাহত রয়েছে। এখন উপজাতীয়দের সন্দেহ আর অবিশ্বাস না করে, পরিপূর্ণ ভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন করাই সঙ্গত। উপজাতীয় কল্যাণ ও তাদের প্রতি সদিচ্ছা পোষণের আন্তরিকতা প্রমাণ করার লক্ষ্যে চুক্তির অতিরিক্ত কিছু সুযোগ-সুবিধাও দেয়া যেতে পারে। যাতে তারা আশ্বস্ত হয় যে, তারা বঞ্চনা আর ষড়যন্ত্রের শিকার নয়, বাংলাদেশ তাদের প্রতি বাস্তবিকই আন্তরিক। বসতি স্থাপনকারী বাঙ্গালী উচ্ছেদ ও সেনা প্রত্যাহার, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে চুক্তি না হলেও এগুলো উপজাতীয়দের প্রধান দাবি। তাদের ক্ষোভ, অসন্তোষ ও বিদ্রোহ দমাতে, ও বাংলাদেশের প্রতি আস্থাশীল করে তুলতে, এই অতিরিক্ত দাবীগুলো পূরণ উপকারী হতে পারে। তখন অশান্তি অব্যাহত থাকলে, এবং বিচ্ছিন্নতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলে, চরমপন্থা অবলম্বন যুক্তি যুক্ত হবে। পরীক্ষামূলকভাবে হলেও বর্ণিত তিন দাবী বাঙ্গালী ও সেনা প্রত্যাহার, ও চুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন তথা স্বায়ত্তশাসন অধিকার মঞ্জুর করা উচিত। এই চরম উদারতার ব্যর্থতাতেই চরম পন্থা অবলম্বিত হতে পারে। উপরোক্ত পরামর্শগুলো যথার্থ নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় সংখ্যা প্রাধান্য প্রতিষ্ঠারই পদক্ষেপ হবে বাঙ্গালী প্রত্যাহার, যা বাংলাদেশের স্বার্থ পরিপন্থী, এবং তাতে এটাও সুনিশ্চিত হবে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অবাঙ্গালী প্রধান অঞ্চল। ভারতবিভাগ কালে তার বাংলাদেশ ভুক্ত হওয়া, এখানকার ভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীভুক্ত লোকদের রাজনৈতিক অধিকারের পক্ষে নেতিবাচক। স্থানীয় জনমত স্বাধিকারের পক্ষপাতী বলে শান্তি ও কল্যাণের স্বার্থে এই দাবীর প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রদেয় হবে। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় প্রধান অঞ্চল হলে, তারপক্ষে রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ খোলাসা হয়ে যাবে। তৎপর প্রয়োজনে সামরিক নিয়ন্ত্রণ ও বাঙ্গালী আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে কঠিন। বাংলাদেশের এক দশমাংশ অঞ্চল, তখন নীতিগতভাবে হবে বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখী। উপজাতীয়রা যে সুযোগে স্বাধীনতা চাইবে না, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং বাঙ্গালী ও সেনা প্রত্যাহার মানে, এতদাঞ্চল থেকে চরিত্রগতভাবে বাংলাদেশকে প্রত্যাহার করে নেয়া। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ নীতি আর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন স্বাধীনতা এই প্রত্যাহারের দ্বারা বিসর্জিত হবে। দেশ বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ এতদাঞ্চলে উপজাতীয়দের স্বতন্ত্র স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না। ঐ মৌলিকত্বকে বানচাল করার কৌশল হবে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীদের এতদাঞ্চলে দূর্বল আর অকার্যকর করে তোলা। এই রাজনীতি ধ্বংসাত্মক। বাংলাদেশের এ ব্যাপারে কঠোর হওয়ার আরো যুক্তি হলো: এতদাঞ্চলে উপজাতীয় প্রাধান্য কৃত্রিম। তারা স্থানীয় চট্টগ্রাম মূলের লোক নয়, বহিরাগত অভিবাসী বংশধর। নিজ জাতীয় অঞ্চল না হওয়ায়, এতদাঞ্চলে তাদের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রন প্রাপ্য নয়। তারা দেশীয় জনসংখ্যা বিস্তারে আপত্তি জানাবার অধিকারীও নয়। এটা তাদের বাড়াবাড়ি। শান্তি স্থাপনে উপজাতীয় বাড়াবাড়ির বিপরীতে গ্রহণীয় উপায় মাত্র ২টি। (১) বাঙ্গালী বসতি স্থাপন, (২) চট্টগ্রামের সাথে এলাকাগত পুর্নবিন্যাস বা যোগ-বিয়োগ। অতীতের প্রশাসনিক বিন্যাসেরই ফল পার্বত্য চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সাথে পার্বত্য তিন জেলার এলাকা যোগ-বিয়োগ বা পূনবিন্যাস অতি সহজেই করা সম্ভব। কক্সবাজারের পূর্বাংশ আগে পার্বত্য চট্টগ্রামেরই অংশ ছিল। রামুতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সর্বপ্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির অবস্থিত, এটি পার্বত্য উপজাতীয়দের দর্শনীয় অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান। পর্বতাঞ্চলের সীমান্তে অবস্থিত এই উপজেলাটির সাথে বান্দরবন জেলার পুনঃসংযোগ ঘটালে এই অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক জনসংখ্যায় ভারসাম্য রচিত হবে। চট্টগ্রামের পূর্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণাংশে অবস্থিত শুকবিলাস ও রাজভিলা, যা আগে চাকমা প্রধানদের তরফে শুক দেব নামীয় বন্দোবস্তিভুক্ত এলাকা ছিলো। পরে সেখান থেকে চাকমা রাজবাড়ী উত্তর রাঙ্গুনিয়ার রাজানগরে স্থানান্তরিত হয়েছে। এটি চাকমা ঐতিহ্য মন্ডিত অঞ্চল। রাঙ্গামাটি জেলার সাথে রাউজানসহ এই অঞ্চলের আংশিক সংযোগ ঘটালেও উপজাতীয় সংখ্যাধিক্যের অবসান হবে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী উপজেলা হলো উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি। এটি অনেকাংশে পাহাড়ময় ও উপজাতি অধ্যুষিত। এই অঞ্চলটি আংশিকভাবে রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষীছড়ির সাথে জুড়ে দিলে, খাগড়াছড়ি জেলায় ও উপজাতীয় সংখ্যাধিক্য লোপ পাবে। এলাকা বিন্যাসের এই কৌশল অবলম্বন করা হলে, বাঙ্গালী পুনর্বাসন বা বসতি বিস্তারের প্রয়োজন হবে না। এমনিতেই স্থানীয় বাঙ্গালী অধিবাসীদের দ্বারা উপজাতীয়রা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে যাবে, এবং এটি ত্বরিত গতিতে করাও সম্ভব। তৎপর সংবিধান পরিপন্থী আইন ও চুক্তি ধারাসমূহ ঝেড়ে ফেলা ও গণতন্ত্রকে বিনা বাধায় কার্যকর করা হবে সহজ। বিদ্রোহ আর বিচ্ছিন্নতাকে এভাবে অসম্ভব করে তোলার পথ অবলম্বনই একান্ত দরকার। এ পথে সময় ক্ষেপণ মারাত্মক। আতিকুর রহমান: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মৌলিক গবেষক ও বহুগ্রন্থ প্রণেতা।