বান্দরবানে ভূমি দস্যুতার দায় এড়াতে গ্রাউস কর্মকর্তাদের সংবাদ সম্মেলন
বান্দরবানে ভূমি দস্যুতার অভিযোগের দায় এড়াতে তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) গ্রাউসের কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা গ্রাউস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তাদের ভোগদখলীয় জমি দখল ও তাদেরকে উচ্ছেদের অভিযোগ এনে মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় মহলে তোলপাড় শুরু হলে গ্রাউসের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য তড়িগড়িকরে গতকাল সোমবার দুপুরে বান্দরবান প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে দায়সারা লিখিত বক্তব্য এবং ভুল তথ্য দিয়ে সাংবাদিক, প্রশাসন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। তবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকরা যখন ভূমি দস্যুতার অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তারা দ্রুত সংবাদ সম্মেলন শেষ করে চলে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, বান্দরবান সদর উপজেলার বালাঘাটা মৌজার উজিপাড়া এলাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রাউস ও তাদের কর্মকর্তারা জমি ক্রয় ও মৌজা হেডম্যান থেকে রাবার বাগান সৃজনের কথা বলে আরো ৫ একর ভূমিসহ বিপুল পরিমাণ ভূমি দখল করে নেয়। এতে করে স্থানীয় প্রায় ৫০ পরিবার তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের আশংকায় আতংকে রয়েছে। এমন পরিস্থিতি স্থানীয় বাসিন্দারা সম্প্রতি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করলে সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এছাড়া গত রোববার সকালে উজিপাড়ার ক্ষতিগ্রস্থ মারমা পরিবাররা বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে।
গতকাল এ ঘটনা পার্বত্য নিউজে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হলে বিপাকে পড়ে গ্রাউস ও এর নির্বাহী পরিচালক চাইসিমং ও তার সহযোগীরা। এতে তারা তড়িগড়ি করে পরের দিন সোমবার দুপুর ১২টায় বান্দরবান প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গ্রাউসের নির্বাহী পরিচালক চাইসিং মং মারমা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গ্রাউসের স্থায়ীত্ব ও আত্মনির্ভরশীলতার জন্য গত ২০/০৬/২০১১ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) এর নামীয় হোল্ডিং নং- ১৩৫, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০, ২৬৮, ১৭৯ একং খতিয়ান নং ২০এর বিভিন্ন দাগের জমিসহ প্রায় ৩০ একর জমি বায়নানামা সম্পন্ন করে। এছাড়া বালাঘাটা মৌজা হেডম্যান থেকে আরো ৫ একর জমি বন্দোবস্তীর জম আবেদন করে। এই ৩৫ একর জমিতে তারা রাবার বাগান সৃজন করে দুই বছর যাবত তত্ত্বাবধান করে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, উজিপাড়ার যেসব লোক গ্রাউস ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুরা অভিযোগ এনেছে তাদের সাথে গ্রাউস ও কর্মকর্তাদের বিরোধ রয়েছে। এ জন্য তারা ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত গ্রাউসের সুনাম ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে। এদিকে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রাউস এনজিও’র নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। তারা ঢাকার বিভিন্ন বড় এনজিও থেকে মেয়াদী প্রকল্পে বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে বান্দরবানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। তাহলে প্রায় ৩০ একর জমি কোন প্রকল্পের অধিনের অর্থ থেকে ক্রয় করা হয়েছে এবং রাবার বাগান সৃজনের মাধ্যমে কাদের লাভ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিকরা এসব প্রশ্ন করলে গ্রাউসের নির্বাহী পরিচালকসহ অন্যরা সদুত্তর দেয়নি।
এমনকি যে বিপিকেএস (এনজিও) থেকে জমি ক্রয়ের কথা বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনে ওই বিপিকেএস এর সাবেক সমন্বয়কারী (বান্দরবান) চাগ্যহ্লা চাকও উপস্থিত ছিলেন। তাকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তিনি বিপিকেএস এর ঢাকা কার্যালয়ের নির্দেশে স্থানীয় সমন্বয়কারী হিসেবে জমি বিক্রি কার্যক্রমে ছিলেন, এর বেশি তিনি আর কিছু জানেন না। তবে মৌজা হেডম্যান এর কাছে ৫ একর জমির বন্দোবস্তির আবেদন করেই তাতে রাবার বাগান সৃজন কেন করা হলো এ প্রশ্নেরও কোনো উত্তর দেয়নি গ্রাউস কর্মকর্তারা।