বিলাইছড়িতে অগ্নিকাণ্ডে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের দাবি স্থানীয়দের
কাপ্তাই লেক এবং পাহাড় ঘেরা অনিন্দ্য সুন্দর উপজেলা রাঙামাটির বিলাইছড়ি। পর্যটনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা বছর এই উপজেলায় আসেন শত শত পর্যটক। বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্গম ইউনিয়ন বড়থলি ইউনিয়ন এই উপজেলায় অবস্থিত। উপজেলা সদর হতে একমাত্র নৌ পথে জেলা শহর কিংবা আশেপাশের উপজেলায় যাতায়াত করা সম্ভব। তবে এই উপজেলায় বড় কোন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নেই কোন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। যার ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন জনগণ এবং ব্যবসায়ীরা।
তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় ঘটে যাওয়া উপজেলা সদর হাসপাতালের নীচে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সেদিন বিলাইছড়ি উপজেলায় হাসপাতাল এলাকার আলোরঞ্জন দেওয়ানের বাসার পাশে বসবাসরত ৬ জনের বাসা-বাড়ি একেবারেই ভস্মীভূত হয়ে যায় আগুনের লেলিহিন শিখায়।
এদিন বিটুময় চাকমা, ভীমসেন, সন্ধ্যা, সাত্তারেরসহ মোট ৬টি ঘর একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে জানান ১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান। তিনি জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হতে এই আগুনে সূত্রপাত। এই ঘটনায় প্রায় ৭৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবার এবং এলাকাবাসী।
শুধু সেই দিনের ঘটনা ছাড়াও গত বছরের ৮ মে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে কেংড়াছড়ি বাজার। এসময় কেংড়াছড়ি বাজারের একটি চায়ের দোকান হতে আগুন লেগে ৮০টি দোকান এবং বসতবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। সম্প্রতি পুড়ে গেছে দুর্গম পাংখোয়া পাড়ার কিছু ঘর বাড়ি।
স্থানীয় জনগণ, ভুক্তভোগী পরিবার, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা সকলে বলেন, বিলাইছড়ি উপজেলায় কোনো ফায়ায় সার্ভিস স্টেশন বা অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় আগুন লাগার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণ। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই লেকের পানির স্তর অনেক নীচে নেমে যাওয়ায় লেক হতে পানি নিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা দূরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। উপজেলাটি দুর্গম হওয়ায় আগুন লাগার সাথে সাথে জেলা সদর বা কাপ্তাই উপজেলা হতে ফায়ার সার্ভিস পৌছাঁতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টা
বিলাইছড়ি বাজার এলাকার বাসিন্দা ডি কে রুবেল চৌধুরী, সৈকত, বিপ্লব বড়ুয়া সহ অনেকে বলেন, আমাদের চোখের সামনে সেদিন আগুন লেগে সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমরা কিছুই করতে পারলাম না। আজকে যদি বিলাইছড়িতে একটা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকতো তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যেতো।
বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুকুমার চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহীদুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে বিলাইছড়ি উপজেলায় একটি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন করা খুবই জরুরি।
বিলাইছড়ি থানার ওসি আকতার হোসেন বলেন, গত ২৭ মার্চ বিলাইছড়ি হাসপাতাল এলাকায় আগুন লাগার সাথে সাথে পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক সংগঠন এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় দেড়ঘণ্টা পর আগুন নিভানো সম্ভব হয়েছে। তবে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলে আরো দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যেতো।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন যদি বিলাইছড়ি উপজেলায় থাকতো তাহলে অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হতো। আমরা উপজেলা পরিষদ এর পক্ষ হতে প্রয়োজন হলে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দিব।
বিলাইছড়ি পাংখোয়া পাড়ার বাসিন্দা রাঙামাটি জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রেমলিয়ানা পাংখোয়া বলেন, গত ২৭ মার্চ বিলাইছড়ি বাজারসহ এর আগে কেংড়াছড়ি বাজার, পাংখোয়া পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় যেসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যদি একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে থাকতো তাহলে দ্রুত আগুন নেভানো সম্ভব হতো। বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে একটি স্থায়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের জন্য আমরা আমাদের গণ মানুষের নেতা রাঙামাটির সাংসদ দীপংকর তালুকদার এর সাথে কথা বলবো।