বিশ্ব মাতাচ্ছেন বাংলাদেশিরা

fec-image

১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ আজ তাক লাগিয়ে দিচ্ছে গোটা বিশ্বকে। বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলো ছড়িয়েছেন হ্যানসেন ক্লার্ক, আনোয়ার চৌধুরী, ড. রায়ান সাদী, মনিকা ইউনুস, জোয়াদ করিম, সালমান খান, সুমাইয়া কাজী, লুৎফর রহমান, রোশনারা আলী, মনজিলা পলা উদ্দিন, সায়রা খান, টিউলিপ সিদ্দিক, দুরদানা, মাহজাবিন, আনিশা, আশিক -এরকম একগুচ্ছ নাম। বিদেশ বিভূঁইয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছেন তারা প্রত্যেকেই। তাদের কারণে বিদেশের বুকে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ।

আজকের এই প্রতিবেদনে তাদের কৃত কর্মের ফিরিস্তি আলোকপাত করা হয়েছে। প্রথমেই আসা যাক বৃটেনে বসবাসরত কৃতী বাংলাদেশীদের প্রসঙ্গ।

রোশনারা আলী
বৃটিশ বাংলাদেশীদের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ে অবদান বেশি রাখলেও অনেকে জাতীয়ভাবেও বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রোশনারা আলী। ইনিই প্রথম ব্যক্তি ও নারী হিসেবে বৃটেনে ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে বেথনাল গ্রীন ও বো থেকে ১০,০০০ ভোটের বেশি ব্যবধানে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেন। যদিও তিনি ২০১৪ সালে লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগপত্রে তিনি উল্ল্যেখ করেন, তার দল ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে একমত হয়ে ইরাকে যে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে তা কোনও সমাধান নয় এবং তা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করবে। তিনি এ ধরনের যুদ্ধ কখনওই সমর্থন করতে পারেন না।

রুশনারা আলী ১৯৭৫ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিশ্বনাথে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ৭ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনের পূর্ব প্রান্তে অভিবাসিত হন। তিনি মালবেরি স্কুলস অব গার্লস ও টাওয়ার হ্যামলেট কলেজ-এ শিক্ষা লাভ করেন। টাওয়ার হ্যামলেটে বেড়ে ওঠার সময়ে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজে তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন।

ব্যারোনেস মনজিলা পলা উদ্দিন

আরেকজন হলেন- ব্যারোনেস মনজিলা পলা উদ্দিন। বৃটিশ লেবার পার্টির রাজনীতিক, সমাজকর্মী। বৃটেনের রাজনীতিতে বাংলাদেশের এক গর্বিত নারী প্রতিনিধি। অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পিয়ার হিসেবে অধিষ্ঠিত প্রথম মুসলিম নারী। যিনি প্রথম বাংলাদেশী মুসলমান নারী হিসেবে হাউস অব লর্ডসে প্রবেশ করেন। এমনকি তিনি নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ীই হাউস অব লর্ডসের সদস্য হিসেবে শপথ নেন। ১৯৯৮ সালে টনি ব্লেয়ারের উদ্যোগে ওই মর্যাদায় অভিষিক্ত হন তিনি।

মনজিলার জন্ম রাজশাহীর একটি গ্রামে। ১৯৭৩ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে পিতামাতার সঙ্গে বৃটেনে যান তিনি। বড় হয়েছেন লন্ডনের ইস্ট এন্ড-এ। ইস্ট হ্যাম-এর প্ল্যাশেট স্কুলে ও ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডনে পড়েছেন। ডিপ্লোমা নিয়েছেন সমাজকর্মে। তার স্বামী কমর উদ্দিন। বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। তাদের চার পুত্র এবং এক কন্যা। সপরিবারে তারা থাকেন টাওয়ার হ্যামলেটস বরা’র ওয়াপিং-এর এক বাসায়।

আনোয়ার চৌধুরী

তৃতীয়জন হলেন- ব্রিটিশ বাংলাদেশী কূটনীতিবিদ আনোয়ার চৌধুরী। যিনি ২০০৪ সালে বাংলাদেশে বৃটিশ হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। বৃটেনের ইতিহাসে তিনিই প্রথম অশ্বেতাঙ্গ হিসেবে কূটনীতিক পদে নিয়োগ পান। তিনিই প্রথম কোন বাঙালি যিনি ব্রিটিশ হাই কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেন। এর পরে বৈদেশিক ও কমনওয়েলথ অফিসে একজন ব্যবস্থাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে তিনি পেরুতে ব্রিটিশ হাই কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি ১৯৫৯ সালের ১৫ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার পাটলী ইউনিয়নের প্রভাকরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলাতেই তিনি তার বাবা মায়ের সঙ্গে লন্ডনে পাড়ি জমান। ব্যক্তিগত জীবনে আনোয়ার চৌধুরী মোমেনা চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারা দুই মেয়ে এবং এক ছেলে সন্তানের জনক-জননী।

টিউলিপ সিদ্দিক

পুরো নাম টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেবার পার্টি এবং কো-অপারেটিপ পার্টির রাজনীতিবিদ। তিনি ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এর পূর্বে তিনি রিজেন্ট পার্কের কাউন্সিলর এবং ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলের কালচার অ্যান্ড কমিউনিটির সদস্য ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ১৯৮২ সালে লন্ডনের মিচামে সেন্ট হেলিয়ার হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত এবং সিঙ্গাপুরে। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি হ্যাম্পস্টিড ও কিলবার্নে বসবাস করছেন। এই এলাকায় স্কুলে পড়েছেন ও কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হওয়া টিউলিপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন অথরিটি এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গেও কাজ করেছেন। ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে তিনি স্বামী ক্রিস পার্সির সঙ্গে লন্ডনে বসবাস করেন। তাদের ঘরে মেয়ে আজালিয়া জয় পার্সি ও রাফায়েল মুজিব সেন্ট জন পার্সি নামে দুটি সন্তান রয়েছে।

লুৎফর রহমান

লুৎফুর রহমান একজন সমাজকর্মী ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একজন স্থানীয় রাজনীতিবিদ। তিনি বর্তমানে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেট পৌর অঞ্চলের মেয়র। ২০১০ সালে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন এবং তিনি এই অঞ্চলের ইতিহাসে প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মেয়র। মেয়র নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনি একই অঞ্চলের পৌর পরিষদের নির্বাচিত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার জন্ম বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে। তার খুব কম বয়সে তার পিতা সপরিবারে যুক্তরাজ্যে আসেন ও লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

আনিশা ফারুক

যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভোলার মেয়ে আনিশা ফারুক। চলতি বছরের জুলাইয়ে অক্সফোর্ডের ওয়েস্টন লাইব্রেরিতে ঘোষিত নির্বাচনী ফলাফলে আনিশাকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি ঘোষণা করা হয়।

ব্রিটেনে আনিশাই প্রথম কোন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থী, যিনি ১৫২৯ ভোট পেয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। আনিশার বাবা মেজর ফারুক আহামেদ একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলার চর ফ্যাশন উপজেলায়।

এছাড়া আরও আছেন ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী। যিনি বৃটেনের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংগঠন মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুরাদ কুরেইশি, যিনি লেবার পার্টির রাজনীতিবিদ হিসেবে গ্রেটার লন্ডন অ্যাসেম্বলিতে দায়িত্ব পালন করছেন।

এবার আসা যাক যুক্তরাষ্ট্র প্রাবসী বাংলাদেশী বংশোদভূতদের মধ্যে যারা খ্যাতিমান তাদের বিষয়ে। এদের মধ্যে আছেন- মার্কিন কংগ্রেসম্যান হ্যানসেন এইচ. ক্লার্ক, সালমান খান, আবু হেনা সাইফুল ইসলাম, সায়রা খান, জাবেদ করিম প্রমুখ।

হ্যানসেন এইচ ক্লার্ক

জন্ম ১৯৫৭ সালের ২রা মার্চ। প্রথম আফ্রিকান বংশোদভূত প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা নির্বাচনে যখন চমক সৃষ্টি করেন, তখনই হ্যানসেন ক্লার্কও ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তিনিই হন প্রথম বাংলাদেশী বংশোদভূত মার্কিন কংগ্রেসম্যান। তিনি বারাক ওবামার ডেমোক্রেট দল থেকে মিশিগানের ১৩তম কংগ্রেশনাল জেলার একজন কংগ্রেসম্যান।

তার পিতা বাংলাদেশের নাগরিক মোজাফ্‌ফর আলী হাশিম। যিনি বিয়ে করেছিলেন আফ্রিকান এক নারী থেলমা ক্লার্ককে। তাদের ঔরসে হ্যানসেন ক্লার্ক জন্ম নেয়ার পর বেড়ে ওঠেন শহরের পূর্ব প্রান্তে। হ্যানসেন ক্লার্কের শিশুকালেই তার পিতা মারা যান। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। তার স্ত্রী কোই পামস-কোহেন। ২০০৭ সালের মধ্যভাগে তাদের সাক্ষাত। তারপর প্রেমের এক ঝড়ো ৩ সপ্তাহের ইনিংস শেষে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হ্যানসেন ক্লার্ক বেড়ে উঠেছিলেন মুসলিম হিসেবে। কিন্তু পরে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে ক্যাথলিজম বেছে নেন।

ড. রায়ান সাদী

আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়- এ বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৯২ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমানো ড. রায়ান সাদী (৪৭) সারাবিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞান জগতে ১০০ সেরা ব্যক্তিত্বের একজনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। লাইফ-সায়েন্স (জীন-বিজ্ঞান) ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পারদর্শিতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যাথলিন সেবিলিয়াসের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য পদ লাভ করেছেন এবং তিনিই একমাত্র বাংলাদেশী-আমেরিকান যিনি এমন উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

সারাবিশ্বে খ্যাতনামা কর্পোরেশন এবং শিল্প কারখানার শীর্ষ কর্মকর্তা ফোরামের মুখপাত্র ‘ফার্মা ভয়েস’ ১০০ জন সেরা উদ্দীপ্তের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে গত বছর- সেখানে রয়েছেন ড. রায়ান সাদী। ড. সাদী কাজ করছেন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির কর্ডিস কর্পোরেশনের হেল্‌‌থ ইকনোমিক্স, রিইমবার্সমেন্ট অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক প্রাইসিং বিষয়ক ওয়ার্ল্ডওয়াইড ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। ধারণা করা হচ্ছে, এত বড় কোন পদে তিনিই প্রথম বাংলাদেশী-আমেরিকান। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার শাহাপুর গ্রামের প্রিন্সিপাল তৈয়ব হোসেন এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আসমা বেগমের একমাত্র পুত্র তিনি।

মনিকা ইউনুস

নোবেল জয়ী মোহাম্মদ ইউনুসের বড় কন্যা মনিকা ইউনুসের জন্ম ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামে। বাংলাদেশি-রাশিয়ান-আমেরিকান মনিকা বিশ্বের প্রখ্যাত সব অপেরাতে সঙ্গীত পরিবেশনকারী হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাত। ড. ইউনুসের সাবেক স্ত্রী ভেরা ফরোসটেনকোর কন্যা মনিকার দিনা ইউনুস নামে আরেকজন সৎবোন রয়েছে। ড. ইউনুস ভ্যানডারবিল্ট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সময় ভেরা ফরোসটেনকোর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটেছিল। এরপর ১৯৭০ সালে সালে তাদের বিয়ে হয়। মনিকার জন্মের কয়েক মাস পরেই তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ভেরা ফরোসটেনকো মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। বর্তমানে নিউইয়র্কের বাসিন্দা মনিকা ইউনুস মানবিক সহযোগিতার জন্য তহবিল সংগ্রহকারি সিং ফর হোপের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

জোয়াদ করিম

জোয়াদ করিম অনলাইনে ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। যে তিনজনের হাত ধরে ইউটিউবের যাত্রা শুরু হয় তার মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। বাংলাদেশি হলেও জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন জোয়াদ। পরবর্তীতে ১৯৯২-এ পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে পেপালে কাজ করার সময় দু’জন সহকর্মী চাড হারলে ও স্টিভ চিনের সঙ্গে মিলে ২০০৫ সালে ভিডিও শেয়ারিং-এর ধারণা নিয়ে ইউটিউব প্রতিষ্ঠা করেন। ইউটিউবের আপলোড করা প্রথম ভিডিওটি ছিলো সান ডিয়েগো চিড়িয়াখানায় জোয়াদ করিমের ভ্রমণের চিত্র।

সালমান খান

না, বলিউডের অভিনেতা সালমান খান নন। তিনি বাংলাদেশী বংশোদভূত একজন মার্কিনি। টাইম ম্যাগাজিন নির্বাচিত বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি অনলাইন ফ্রি লাইব্রেরি খুলে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তার লাইব্রেরির নাম দিয়েছেন খান একাডেমি। এই খান একাডেমিই তাকে এনে দিয়েছে জগতজোড়া খ্যাতি। তার জন্ম ১৯৭৬ সালে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সালমান খান নিজের বাসায় বসে একটি ছোট্ট অফিস খুলেছিলেন। সেই অফিস এখন খান একাডেমিতে রূপ নিয়েছে। এই একাডেমিকে আছে ৩ হাজারেরও উপরে ফ্রি শিক্ষামূলক ভিডিও। তাতে আছে অংক, আছে বিজ্ঞান।

সালমান খানের জন্ম লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্সে। তার পিতার আদি নিবাস বরিশালে। সালমানের মা কলকাতার। সালমান খান নিউ অরলিন্সে তার মায়ের কাছে বড় হতে থাকেন। হার্ভার্ড থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। ২০০৪ সালের দিকে তিনি তার কাজিন নাদিয়াকে অংক পড়ানো শুরু করেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এতে তিনি ব্যবহার করেন ইয়াহুর ডুডল নোটপ্যাড। এতে তিনি বেশ সফলতা দেখান। তা দেখে তার অন্য আত্মীয় ও বন্ধুরা তাকে তাদের সন্তানকে পড়ানোর আহ্বান জানান। এ অবস্থায় তিনি আরও বেশি বেশি নোট করা শুরু করেন এবং তা ছেড়ে দেন ইউটিউবে। এতে তিনি এত সাড়া পান যে তাকে ২০০৯ সালের শেষের দিকে হেজ ফান্ড এনালিস্টের চাকরি ছেড়ে দিতে হয়।

তিনি টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির একজন নির্বাচিত হয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। তার স্ত্রী মেডিকেল স্পেশালিস্ট। তাদের রয়েছে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। তাদের বসবাস ক্যালিফোর্নিয়ায়।

সুমাইয়া কাজী

সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন তোলা সুমাজি নেটওয়ার্কের উদ্যোক্তা সুমাইয়া কাজী। সান ফ্রান্সিকো ভিত্তিক তার এই স্টার্ট-আপ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতে নিয়েছে। তবে সুমাজির আগেও তিনি তরুণ পেশাদারদের জন্য ‘দ্য কালচার কানেক্ট’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। সুমাজি মূলত একটি ইন্টেলিজেন্ট সোশ্যাল নেভিগেশন সিস্টেম। এটি ফেসবুক ও লিংকডইনের মাধ্যমে একটি নতুন লেয়ার তৈরি করে। ফলে ব্যক্তিগত ও পেশাদার নেটওয়ার্ককে সমন্বয় করা যায় সুমাজির মাধ্যমে। হলিউডে জন্মগ্রহণ করা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুমাইয়া কাজী ক্যালিফোর্নিয়ায় বেড়ে ওঠেন। ডিগ্রি অর্জন করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে। এরপর সান মাইক্রো সিস্টেমসে কাজ শুরু করেন।

সায়রা খান

নরওয়েতে খ্যাতি কুড়িয়েছেন বাংলাদেশী সায়রা খান। তিনিই প্রথম নরওয়ের পার্লামেন্টের বাংলাদেশী সদস্য। তিনি লেবার পার্টি থেকে ২০০৫ সালে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। তা নিয়ে বাংলাদেশীরা গর্ব করতেই পারেন। তার পর পর আখতার চৌধুরী নামে আরেক বাংলাদেশী সেখানকার পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আবু হেনা সাইফুল ইসলাম

যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীতে প্রথম বাংলাদেশী ইমাম আবু হেনা সাইফুল ইসলাম। তার জন্ম ১৯৬৩ সালে। জন্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশী। উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। পড়াশোনা করেন সাউদার্ন নিউ হ্যাম্পশায়ার ইউনিভার্সিটিতে। ১৯৯২ সালে অর্জন করেন এমবিএ ডিগ্রি। একই বছর তিনি যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কোরে। আগেভাগেই তিনি ডিভি লটারিতে আবেদন করেছিলেন। তাকে ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেয়া হয়। তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীতে নিয়োজিত। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তিনি নেভি চ্যাপলাইন কোরের ইমাম হওয়ার মিশনে কাজ শুরু করেন। এ জন্য সেখানে একটি প্রশিক্ষণ কোর্স করতে হয়। সাইফুল ইসলাম সেই কোর্স শেষ করেন দু’বছরে। ১৯৯৮ সালে তার সামনে সুযোগ আসে। তিনি এ বছর কমিশন লাভ করেন। এ সময় তার প্রধান কাজ ছিল ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের খুব আনুগত্য পেয়েছিলেন।

ডলি বেগম

ডলি বেগম কানাডার একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ২০১৮ সালে কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের টরেন্টো এলাকার স্কারবরো সাউথওয়েষ্ট আসন থেকে জয়ী হন। নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) এমপি হিসেবে ডলি বেগম প্রথমবারের মতো প্রোভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। তিনি অন্টারিও নিউ ডেমক্রেটিক পার্টির সদস্য হিসেবে স্কারবো সাউথওয়েস্ট এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। ডলি বেগম প্রাদেশিক সংগঠন কিপ হাইড্রো পাবলিক ক্যাম্পেইনের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। এছাড়া স্কেয়ারবোরো হেলথ কোয়ালিশনের সহ-প্রধান ছিলেন তিনি।

ডলি বেগমের জন্ম বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায়। তার বাবার নাম রাজা মিয়া এবং মায়ের নাম জবা বেগম। মহসিন মিয়া নামে তার এক ভাই আছেন। তিনি শিশু বয়স থেকেই কানাডায় বেড়ে ওঠেন।

দুরদানা ইসলাম

বাংলাদেশী ডলি বেগমের পর দুরদানা ইসলামের প্রার্থীতা কানাডিয়ান বাংলাদেশীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে। কেননা
দুরদানা ইসলামের ব্যক্তিগত যোগ্যতার মাপকাঠিটাও বেশ জোরালো। দুরদানা ইসলাম একুশের পদক পাওয়া বংশীবাদক ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের মেয়ে।

কুমিল্লার মেয়ে দুরদানা বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করে কানাডায় অভিবাসী হয়েছেন। এসএসসির সম্মিলিত মেধা তালিকায় কুমিল্লা বোর্ড থেকে প্রথম স্থান অধিকার করা দুরদানা, অষ্ট্রেলিয়া এবং কানাডা থেকে দুটি মাষ্টার্স ডিগ্রী নিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে পিএইচডি করেছেন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কানাডার মূলধারায় পুরষ্কার বিজয়ী গবেষক হিসেবে।

মাহজাবীন হক

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন সিলেটের মেয়ে মাহজাবীন হক। তার বাবা সৈয়দ এনামুল হক পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। তাদের গ্রামের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার কদমরসুল গ্রামে।

মাহজাবিন হক এ বছরই মিশিগান রাজ্যের ওয়েন স্টেইট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি একমাত্র বাংলাদেশি নারী যিনি নাসায় নিয়োগ পেলেন।

পেইন্টিং ও ডিজাইনে পারদর্শী মাহজাবীন হক ২০০৯ সালে বাবা-মার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যান। কর্মসূত্রে বাবা সৈয়দ এনামুল হক সিলেটে অবস্থান করলেও মা ফেরদৌসী চৌধুরী ও একমাত্র ভাই সৈয়দ সামিউল হক মাহজাবীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

রুবাব খান

পৃথিবীর ১০ হাজার আলোকবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের নাম ‘এটা ক্যারিনাই’। সূর্যের প্রায় দেড় শ গুণ বড় এই নক্ষত্রের সমকক্ষ কিছু আছে বা থাকতে পারে, তা ছিল ধারণার বাইরে। তবে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় কর্মরত একদল বিজ্ঞানী এমন অন্তত পাঁচটি নক্ষত্রের খোঁজ পেয়েছেন, যেগুলোকে এটা ক্যারিনাইয়ের ‘যমজ’ বলা হচ্ছে। এই বিজ্ঞানী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশি তরুণ রুবাব খান। নাসায় কাজ করছেন মাত্র তিন বছর। বয়সটাও ত্রিশের ঘরেই। আর এরই মধ্যে তার এ আবিষ্কার রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে।

ঢাকায় বেড়ে ওঠা রুবাব খানের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের পাকুন্দা গ্রামে। ঢাকার উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি এবং নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাবির ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। বৃত্তি নিয়ে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান (অ্যাস্ট্রোফিজিকস) বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেলে ২০০৪ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। স্নাতক শেষে ২০০৮ সালে ভর্তি হন ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে ২০১০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং ২০১৪ সালে পিএইচডি করেন। পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল প্রকাণ্ড সব নক্ষত্রের বয়স। এরপরেই মেরিল্যান্ড রাজ্যের গ্রিনবেল্টে অবস্থিত নাসা গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে তিন বছর গবেষণার সুযোগ পান তিনি। হাবল, স্পিৎজার ও হার্শেল টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে মহাজাগতিক বস্তুর অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে সাহায্য করে রুবাবের গবেষণা। এরই ফসল তার এই আবিষ্কার।

আশিক আহমেদ

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার তরুণ শীর্ষ ধনীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন এক বাংলাদেশি যুবক। ৩৮ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম আশিক আহমেদ। গত ২৪ অক্টোবর ব্যবসা ও অর্থ বিষয়ক দৈনিক ‘অস্ট্রেলিয়ান ফিন্যান্সিয়াল রিভিউ’ দেশটির শীর্ষ তরুণ ধনীদের তালিকা প্রকাশ করে। ১০৩ জনের এই তালিকায় আশিকের অবস্থান ২৫তম।

ডেপুটি নামের একটি সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। যে সফটওয়্যার দিয়ে কর্মক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা সহজ করা যায় ও কর্মীদের প্রতিদিনের কাজের হিসাব রাখা সহজ হয়। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান আশিক। এরপর মেলবোর্নের একটি ফাস্টফুড চেইনে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকেই আশিকের উঠে আসার গল্প শুরু। বর্তমানে ১৪৮ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে আশিকের। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ এক হাজার ২৫০ কোটি টাকারও বেশি।

সূত্র: etvonline

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ব মাতাচ্ছেন বাংলাদেশিরা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন