ট্রাম্পের হাতে শান্তির পতাকা


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ নিয়ে বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। ফেসবুক পোস্ট থেকে হুবহুব লেখাটি তুলে ধার হলো।
(১) হুথি (আনসারুল্লাহ)-আমেরিকাঃ আমেরিকা কোন হুথি টার্গেটের উপর হামলা করবে না; হুথিরা লোহিত সাগর আর বাব-আল-মান্ডবে চলাচলকারী আমেরিকান এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক জাহাজ এর উপর হামলা চালাবে না। এই যুদ্ধবিরতি ইস্রায়েলি জাহাজগুলির উপর প্রযোজ্য নয়। এই ডিলের ব্রোকার ছিল ওমান।
গত এক মাসে হুথি বিরোধী যুদ্ধে আমেরিকার খরচ ছিল ১ বিলিয়ন ডলার তাই এই আক্রমন চালিয়ে নিতে ট্রাম্প রাজি নয়। গতকাল হুথিরা ফের ইসরায়েলে মিসাইল আক্রমন করেছে, এবং আমেরিকা তাতে কোন রিএকশান দেখায়নি।
(২) হামাস-আমেরিকাঃ আমেরিকা যুদ্ধ বিরতি সহ গাজা স্থিতিশীল করতে এবং হিউমেনিটেরিয়ান এইড ডেলিভারি নিশ্চিত করার জন্য হামাসের সাথে ডাইরেক্ট আলোচনা করছে, যার বিনিময়ে হামাস আমেরিকান-ইসরায়েলি ডুয়াল সিটিজেন আলেকজান্ডারকে গতকাল মুক্তি দিয়েছে। এখানে কাতার আর ইজিপ্ট ব্রোকার হিসাবে কাজ করছে।
(৩) ইরান-আমেরিকাঃ ইসরায়েলের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও আমেরিকা ফের ইরানের সাথে তাদের পারমাণবিক প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান চাচ্ছে আমেরিকা যেন তাদের সকল স্যাঙ্কশান তুলে নেয়, যার সাথে ইরানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করছে।
বদলে আমেরিকা চাচ্ছে ইরান তাদের পারমাণবিক ফ্যাসিলিটিগুলো ফের আন্তর্জাতিক সারভেইলেন্সের আওতায় এনে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক এনার্জি প্রডাকশনের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এই ডিলের ব্রোকার ওমান।
বরং ইসরায়েল চাচ্ছে আমেরিকা যেন ইরানের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটিগুলো ধ্বংস করে। ট্রাম্প এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের আর কোন অঞ্চলে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হোক তা চায় না।
(৪) সউদি-আমেরিকাঃ
আজ থেকে শুরু হয়েছে ট্রাম্পের মেজর আন্তর্জাতিক সফর, সাথে করে নিয়ে গেছে সেক্রেটারি অফ স্টেট আর সেক্রেটারি অফ ডিফেন্সকে, আরও সাথে আছে ঈলন মাস্ক, স্যাম অল্টম্যানের মতন বিলিয়নিয়ার বিজনেসম্যান্স।
সফর করবে কেবল তিন দেশ, সৌদি আরব, কাতার, আর আরব আমিরাত। সফরের লখ্য এই তিন দেশের সাথে ট্রিলিয়ন ডলারের বিজনেস আর ডিফেন্স ডিল। যা হতে যাচ্ছে। এই সফরের ঠিক আগেই কাতার ট্রাম্পকে s৪০০ মিলিয়ন ডলার বিশাল প্লেইন, যাকে বলা হচ্ছে ফ্লোটিং রাজপ্রাসাদ। আরব দেশগুলো এসব করে ট্রাম্প কে হাতে রাখতে চাচ্ছে, যা এখন পর্যন্ত কাজ করছে বলেই মনে হচ্ছে।
এই যাত্রায় ট্রাম্প যেমন ইসরায়েলে যাচ্ছে না, তেমন সৌদি আরবের সাথে এব্রাহাম একর্ড নিয়েও কোন আলোচনা করছে না। তার উপর দুই সপ্তাহ আগে ট্রাম্প তাকে এড়িয়ে তার আড়ালে নাতানিয়াহুর সাথে ইরান আক্রমনের প্ল্যান করার জন্য ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার মাইক ওয়াল্টযকে বরখাস্ত করেছে। এটা ইসরায়েলের জন্য কঠিন সতর্কবার্তা। এতে করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের মাতম শুরু হয়েছে, যা দেখার মতন।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আর ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের নেতৃত্বে ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জুন ১৭-২০ তারিখে জাতিসংঘে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন করবে। ফ্রান্স এই সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন আর সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিবে। আমেরিকার স্বীকৃতি দেয়ার সম্ভাবনা যদিও খুব কম, তবে জার্মানির কিছুটা সম্ভাবনা আর যুক্তরাজ্যের ভালো সম্ভাবনা আছে।
২০২৫ সালের মার্চ অবধি, ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন আর সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের ১৪৭ টি রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্স হবে ১৪৮ তম রাষ্ট্র।
অধিকাংশ মুসলিম দেশ, বিশেষ করে আরব লীগ এবং OIC সদস্যরা, ১৯৮৮ সালের ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার ঘোষণার পর থেকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কেবল বাহরাইন ছাড়া।
(৫) সিরিয়া-আমেরিকাঃ ট্রাম্প আজ সৌদি সফরকালে সিরিয়ার উপর আরপিত সকল মার্কিন স্যাঙ্কশান তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিরিয়া শক্তিশালী হবে, যা ইসরায়েল চায় না। এরপর ইসরায়েল যদি এইচটিএস বা সিরিয়ার উপর বড় বা মাঝারি কোন আক্রমণ করে তা ট্রাম্প ভালোভাবে নিবে না, বরং ট্রাম্প এবং গালফ দেশগুলোকে ক্রোধান্বিত করবে। সৌদি আরব আর তুরস্কের চাপে ট্রাম্প সিরিয়ার সকল স্যাঙ্কশান তুলে নিচ্ছে।
(৬) হামাস-আমেরিকাঃ হামাস বলেছে তারা তাদের সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্র না করলেও গাযা পরিচালনার ভার অন্য কেউ নিতে পারবে। আমেরিকা সেই জায়গায় টেম্পোরারি মার্কিন প্রশাসনের ভুমিকা নেয়ার প্রস্তাব রেখেছে। এ নিয়ে আলোচনা শেষ পর্যন্ত কোন ফল নিয়ে আসে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে তাদের ডেমক্রেটিক আর সভ্য দেশ হওয়ার যেই ন্যারেটিভ এতদিন ধরে এক্সটেন্সিভ প্রচারণা করে বিশ্বের দরবারে দাড় করিয়েছিল, তা এখন খসে পড়েছে।
তারপরেও ফিলিস্তিনিদের কষ্ট শেষ হওয়ার এখনও অনেক দেরী।ইসরায়েলিরা গাযার উপর তাদের বম্বিং বাড়িয়ে দিয়েছে।
যদিও ফেব্রুয়ারি মাসেই গাযাবাসিরা ডিসিশন নিয়েছে বাঁচি আর মরি গাযা ছাড়ব না, আর সেই লক্ষ্যে তারা নর্থ গাযা থেকে শুরু করে সাউথ গাযা সব খানেই যারযার জায়গায় ফিরে গেছে। তার উপর অনেক চেষ্টা করেও ইসরায়েল তৃতীয় কোন দেশকে গাজাবাসিদের জায়গা দেয়ার জন্য রাজি করাতে পারছে না। তাহলে বাকি থাকল গাযাবাসিদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলা।
কিন্তু“আর স্মরণ করো, যখন কাফেররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল, যাতে তারা তোমাকে বন্দী করে, অথবা তোমাকে হত্যা করে, অথবা তোমাকে বহিষ্কার করে। তারা ষড়যন্ত্র করছিল, আর আল্লাহও পরিকল্পনা করছিলেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।” সূরা আল-আনফাল (৮ নম্বর সূরা), আয়াত ৩০।
সূত্র : লেখাটি লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া