মাটিরাঙার তাইন্দং ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর উপহারে নানা অনিয়মের অভিযোগ

fec-image

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবিরের বিরুদ্ধে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি অর্থয়ানে নির্মিত হলেও ‘অফিস খরচ’ এর নামে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পযর্ন্ত আদায় করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের কাছে এই অর্থ জমা দেয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এছাড়া গৃহহীন ও হতদরিদ্রদের বঞ্চিত করে নিজের আত্মীয় স্বজনদের ঘর বরাদ্দ দিয়েছে চেয়ারম্যান। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির।

মাটিরাঙ্গা সদর উপজেলা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের জনপদ তাইন্দং। সীমান্তঘেষা তাইন্দং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাঘমারা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম তিনি বলেন, ‘ঘর বরাদ্দ পেতে পরিষদের কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি। অথচ এখন বলছে ঘরের কাঠ আমাকে কিনে দিতে হবে। বাথরুমও আমাকে বানাতে হবে।’

তাইন্দং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের খোরশেদা বেগম জানান, ‘এক মাস আগে ঘরের জন্য সেলিম সর্দারের মাধ্যমে চেয়ারম্যান হুমায়ন কবিরকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। ঘরে গরু বেঁচে এই টাকার ব্যবস্থা করেছি। ঈদের পরে ঘরের কাজ শুরু হওয়ার কথা কিন্তু এখনো হয়নি।

তাইন্দং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বটতলী এলাকার সরবত আলীর ছেলে রমজান আলী বলেন, ‘আমি শুনেছি টাকা ছাড়া ঘর পায় না। দুই মাস আগে স্থানীয় ইন্দ্রিসের মাধ্যমে হুমায়ন চেয়ারম্যানকে ২২ হাজার টাকা দিয়েছি। বলেছে আরও ৮ হাজার টাকা লাগবে। ঈদের পরপর ঘর আসবে।’

একই এলাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল মিয়া জানান, ‘ঘরে জন্য চেয়ারম্যান হুমায়ন কবিরকে ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। চেয়ারম্যান হুমায়ন করিব বলেছে ঘর পেতে সরকারি কিছু খরচ আছে। টাকা দেওয়ার পরও ঘর নির্মাণের জন্য ৬ বস্তা সিমেন্ট কিনে দিয়েছি।’

বাঘমারা বাসিন্দা হাফেজ মিয়া জানান, সরকরিভাবে ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পরও আমার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার টাকার কাঠ কিনেছি, ১৫ বস্তা সিমেন্ট কিনে দিয়েছি, ৩ গাড়ি বালু কিনে এনেছি। ঘর নির্মাণের শুরুতে একজন সরকারি অফিসার এসে ঘুরে গেছে । এরপর আর কেউ আসেনি।’

এছাড়া নিজের বসতবাড়ির উঠানে মামা আবুল হাশেমের নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দিয়েছে চেয়ারম্যান।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে অনিয়ম প্রসঙ্গে মাটিরাঙা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হলেও কোন ইউনিয়নে কত ঘর বরাদ্দ দিয়েছে তাও জানি না। এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ফোন করে ঘরে অনিয়মের বিষয়ে অবগত হচ্ছি। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমি জানাব।’

অভিযোগের বিষয়ে তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির জানান ,‘আমার ইউনিয়নে ৪১টি ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। ঘরের জন্য আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি। কেউ যদি অভিযোগ করে ঘর নির্মাণের জন্য চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েছে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি কোন টাকা নেইনি।

স্বজনপ্রীতি প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির বলেন, ‘আমি আমার দূর সম্পর্কের মামাকে একটি ঘর দিয়েছি। কেউ যদি বলে এটা স্বজনপ্রীতি হয়েছে, তাহলে আমি এটা বুঝিনা। যারা ঘর পাওয়ার উপযোগী তারা ঘর পেয়েছে। উপজেলা থেকে ট্যাগ অফিসার এসে যাচাই বাছাই করে ঘর দিয়েছে।’

মাটিরাঙা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। এখনো আমরা ঘরের সব টাকা দেইনি। শতভাগ গুনগত মান রেখে ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ না হলে আমরা বিল পরিশোধ করব না।’

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান মুঠোফোনে জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘর নিয়ে কোন অনিয়ম দুর্নীতিকে প্রশয় দেয়া হবে না।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চেয়ারম্যান, তাইন্দং ইউপি, মাটিরাঙা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন