কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে কাজ

পেকুয়ায় সরকারি শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কেটে চেয়ারম্যানের বাগানের রাস্তা নির্মাণ

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ায় গহীন অরণ্যে জনবসতিহীন এলাকায় সরকারি কর্মসৃজন প্রকল্পে নিয়োজিত তিন ওয়ার্ডের শ্রমিকদের দিয়ে পাহাড় নিধন করে নিজের ব্যক্তিগত বাগানের রাস্তা নির্মাণ করছেন শিলখালী ইউপির চেয়ারম্যান কামাল হোসাইন।

রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিলখালী ইউনিয়নের তারাবুনিয়া বেটবেড়ির মাথায় গহীন পাহাড়ে বন্যহাতির অভয়ারণ্যে পাহাড় কেটে চেয়ারম্যান কামাল হোসাইনের ব্যক্তিগত বাগানের রাস্তা নির্মাণ করছেন।

আর এ রাস্তায় কাজ করছেন সরকারি কর্মসৃজন প্রকল্পের ৬, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের নিয়োজিত শ্রমিকরা। সরকারি বনভূমি উজাড় করতে চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করছেন তারা। নিয়মনীতি ভঙ্গ করে এক ওয়ার্ডের ৪৫ জন করে তিন ওয়ার্ডের ১২৫ জন শ্রমিককে এক জায়গায় জোরপূর্বক কাজ করাচ্ছেন। যেখানে রয়েছে চেয়ারম্যান কামাল হোসাইন ও তার ভাই মাস্টার জামাল হোসাইনের লেবু ও মাল্টা বাগান। এমনকি সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে পাচার করার সুযোগ করছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, একটি ওয়ার্ডে অন্য একটি ওয়ার্ডের শ্রমিকদের প্রয়োজন হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের পিসকে আবেদন করে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া এক ওয়ার্ডের শ্রমিক অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে একত্রে কাজ করার কোন সুযোগ নেই। সূত্রে আরো জানায়, কর্মসৃজন প্রকল্পে ওই ইউপি চেয়ারম্যান পরিকল্পিতভাবে ওই গহীন অরণ্যে জনবসতিহীন এলাকায় সরকারি কর্মসৃজনে তার প্রকল্প দিয়েছেন। সে প্রকল্পে পাহাড় কেটে তার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন।

জনবসতিহীন এলাকায় পাহাড় কেটে কেন কাজ করছেন প্রকল্পের কাজ করা শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, আমরা গরিব মানুষ তাদের ইচ্ছে মত আমরা কাজ না করলে হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখায়। আমরা এখানে কাজ করতে চাইনি কিন্তু চেয়ারম্যান আমাদের গালিগালাজ করছে। আমাদের পূর্ব পুরুষদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। আমরা অপারগ হয়ে এসেছি কাজ করতে।

৯নং ওয়ার্ডের মাঝি মানিক বলেন, মেম্বার জানে না। আমি আর চেয়ারম্যান সাহেব জানি। তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যানের নিদের্শে পাহাড় কাটতেছি।

৬ ও ৮ নং ওয়ার্ডের মাঝিরা বলেন, চেয়ারম্যান আমাদেরকে পাহাড় কাটতে বলছে।

শীলখালী ইউপির ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ও প্রকল্পের পিসি হোছনে আরার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শ্রমিকরা কোথায় কাজ করছে আমি জানি না, এটি চেয়ারম্যান সাহেব জানেন।

এ বিষয়ে শিলখালী ইউপির চেয়ারম্যান কামাল হোসাইনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে পাহাড় কেটে রাস্তা নিমার্ণ করার বিষয়ে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ওই এলাকায় লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। পাহাড় কাটার অধিকার কারো নেই। আমি ইউএনও ম্যাডামকে জানিয়েছি। পাহাড় কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু তাহেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি জেনেছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। প্রকল্পটি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চেয়ারম্যান, পাহাড়, পেকুয়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন