তুমব্রু সীমান্ত রোহিঙ্গামুক্ত, শেষ ২৪২ জনকেও স্থানান্তর

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে অবস্থানরত শূন্যরেখার আরও ৬৭ পরিবারের ২৪২ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে আনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্থানান্তর কার্যক্রমের সময় উপস্থিত ছিলেন কুতুপালং ৭নং ক্যাম্পের সিআইসি (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) প্রীতম সাহা ও ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ।

রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত ৮ম দফায় উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজার থেকে বাসে করে তাদের উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্টে আনা হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তর করা হয়।

গত এক মাসে আরও সাত দফায় ৪৬৩ পরিবারের দুই হাজার ২৮৫ রোহিঙ্গাকে উখিয়ায় হস্তান্তর করা হয়েছিল। এই এক মাসে সেখান থেকে মোট দুই হাজার ৫২৭ রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে আনা হয়েছে।

রবিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শূন্যরেখা থেকে তুমব্রুতে আশ্রিত সব রোহিঙ্গাকে উখিয়ায় সরিয়ে আনার কাজ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ আজকে ৬৭ পরিবারের ২৪২ রোহিঙ্গাকে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্টে আনা হয়। সব মিলিয়ে ৫৩০ পরিবারের দুই হাজার ৫২৭ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর সম্পন্ন হয়েছে। তুমব্রুতে আর কোনও রোহিঙ্গা নেই।

আরআরআরসি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গাদের দুটি সশস্ত্র সংগঠনের সংঘর্ষে বসতবাড়ি পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের গত ৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকালে প্রথম দফায় ১৮০ রোহিঙ্গাকে তুমব্রু থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে আনার পরে টোকেনের মাধ্যমে পরিচয়পত্র দিয়ে বাসে করে উখিয়ার কুতুপালংয়ে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ট্রানজিট পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর একই প্রক্রিয়ায় দফায় দফায় ৫৩০ পরিবারের দুই হাজার ৫২৭ রোহিঙ্গাকে হস্তান্তর করা হয়। এরপর কার্যক্রম শেষে তাদের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠানো হবে।

সীমান্ত বসবাসকারীদের মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গারা যখন দলে দলে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢুকছিল, তখন কিছু রোহিঙ্গা আটকা পড়েন মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের মাঝামাঝি ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায়। পাঁচ শতাধিকের বেশি রোহিঙ্গা এতদিন সেখানেই বসবাস করছিল। যেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু গত ১৮ জানুয়ারি রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) মধ্যকার সংঘর্ষে একজন নিহত হন, ক্যাম্পে আগুনে পুড়ে বসতবাড়ি হারিয়ে তুমব্রু গ্রামে প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নেন। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি একটি কমিটি ওই রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে তাদের হস্তান্তর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রায় এক মাসে তুমব্রু থেকে সব রোহিঙ্গাকে হস্তান্তর কাজ শেষ হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আলী আকবর, জামাল সওদাগর ও মো. আলম বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্তের কারণে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু গ্রাম থেকে সব রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া শেষ হয়েছে।

কক্সবাজারস্থ আরআআসি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মাসের ৫ তারিখ প্রথম দফা রোহিঙ্গাদেরকে ট্রানজিট ক্যাস্পে আনা হয়। এতে পরিবারের সংখ্যা ছিলো ৩৬ পরিবারের ১৮৪ জন রোহিঙ্গা। এভাবে গত রোববার নতুনদের ( ২৬ ফেব্রুয়ারি) সর্বশেষ ২৪২ জন রোহিঙ্গাকে নেয়া হয় । এভাবে ৮ম দফায় মোট রোহিঙ্গা স্থানান্তর করা হয় ২৬২৯ জন রোহিঙ্গাকে। কিন্তু ১৮ জানুয়ারি মিয়ানমারের দু’ সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কারণে শূন্যরেখা থেকে প্রায় সোয়া হাজার রোহিঙ্গা কোনার পাড়া ও তুমব্রু গ্রামে পালিয়ে আসার ১ সপ্তাহ পর সরকার তাদের গুণে পেয়েছিলেন ২৯৮৬ জন রোহিঙ্গাকে। যাদের মধ্য থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ৭ কিস্তিতে কুতুপালং সংলগ্ন ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া ২ হাজার ৩৮৭ জনকে। তখন স্পটে হদিস মিলে নি ৯৭ পরিবার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গার । এ সময় কিছু রোহিঙ্গা অনিবন্ধিত ছিলো। যা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা পড়ে বিড়ম্বনায়। কারণ এরা আসলো কোথেকে? ফলে নতুন করে গণনা করা হয় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার। এখানে গুণে পাওয়া য়ায় ২৪২ জন নতুন আশ্রিত রোহিঙ্গাকে । তাদেরকেই রোববার ( ২৬ ফেব্রুয়ারি) ঘুমধুমের সেই আলোচিত ট্রানজিট ক্যাম্পে সরানো হয়।

ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) সোহাগ রানা জানান, শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ড ও দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের আগে (১৭ জানুয়ারি) সেখানে (শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে) রোহিঙ্গা ছিল ৪ হাজার ৩০০ জনের মতো। তুমব্রু এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল তিন হাজারের মতো। অবশিষ্ট এক হাজারের মতো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে চলে গিয়েছিল। তাদের কেউ কেউ তুমব্রুতে ফিরে এসেছেন। সবাইকে আজ রোববার উখিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তুমব্রুতে এখন কোনো রোহিঙ্গা নেই। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে সেখানে (তুমব্রুতে) থাকতে দেওয়া হবে না। শূন্যরেখার কোনো রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির কোথাও আশ্রয় নিলে তাঁদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের তুমব্রু থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথম দফা মালামালসহ ১৩০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে  ট্রানজিট ক্যম্পে পৌছায় ১টি বাস ও ১টি ট্রাক। আর বেলা ২টার দিকে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়া হয় সেই একই ক্যাম্পে। সেখানে আর কোনও রোহিঙ্গা নেই। এখন সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড কমে আসবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: তুমব্রু, রোহিঙ্গা, সীমান্ত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন