নির্বিকার প্রশাসন

মাতামুহুরী’র ১৮ পয়েন্টে চলছে বালু উত্তোলন

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রবাহমান মাতামুহুরী নদীর অন্তত ১৮টি পয়েন্টে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিন-রাত চলছে বালু লুটের মহোৎসব। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন ছড়া ও খাল থেকেও চলছে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা।

এসব বালু প্রতিদিন শত শত ডাম্পার ও ট্রাকে ভরে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে প্রভাবশালী সিন্ডেকেট।

মাতামুহুরী নদী থেকে এভাবে অবৈধভাবে দিনের পর দিন বালু উত্তোলনর অপকর্ম অব্যাহত থাকলেও পরিবেশ অধিদফতর কিংবা ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অবৈধ বালু লুটেরা চক্রের অনৈতিক বাণিজ্যের কারণে বর্তমানে রাজস্ব দিয়ে সরকারিভাবে বালু উত্তোলনের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি পাওয়া চকরিয়া উপজেলার অন্তত ১৩টি ইজারাদার প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে বালু বিক্রি করতে গিয়ে দরপতনের কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে।

অপরদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গায় বিদ্যমান মাতামুহুরী সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

এই অবস্থায় যান চলাচল সচল রাখতে এবং স্থায়িত্ব ধরে রাখতে সেতুটির কাছে নদীর উজান এবং ভাটির এক কিলোমিটার এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ছয় লেনের দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতুর প্রকল্প পরিচালক।

এ সংক্রান্ত একটি পত্র কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশিষ্ঠ দফতরে প্রেরণ করেছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পূর্ব) সুপ্তা চাকমা।

প্রেরিত পত্রে বিষয়টি অতীব জরুরি । এই তৎপরতা অব্যাহত থাকলে অবকাঠামোগত দিক দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেও অবহিত করা হয়।

পত্রটি গত এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখ ইস্যু করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে।

প্রশাসনের ধীরগতির এ্যাকশন পদ্ধতির কারনে এখনো সেতুর একেবারে কাছ থেকে এস্কেভেটর দিয়ে অবৈধভাবে বালি ও মাটি কেটে ১০ চাকার ৩০ টন ওজনের ডাম্পার ভর্তি করে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে পরিবহন চলছে।

প্রেরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, জাইকার অর্থায়নে ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (বাংলাদেশ) আওতায় মাতামুহুরী নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

বর্তমানে সেতু নির্মাণের স্থানে নদী শাসন ও নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য নিয়োজিত ঠিকাদার কর্তৃক যথাযথ ডিজাইন অনুসরণ করে কনসালটেন্ট ও সওজের প্রতিনিধির নির্দেশনা মোতাবেক বালি উত্তোলন বন্ধ ও নদী খননসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু কতিপয় লোকজন কনসালটেন্ট ও সওজের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সেতুর সন্নিকটে বালি উত্তোলন করছে এবং মাটি কেটে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে যা সেতুটির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে সরকারি দলের প্রভাব বিস্তার করে একাধিক চক্র মাতামুহুরী নদীর অন্তত ১৮ পয়েন্টে শক্তিশালী ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ কয়েকদিন আগে নদীর বাটাখালী সেতুর একেবারে নিচে একাধিক মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের অপকর্ম শুরু করেছেন স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র।

সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এনামুল হক এ অবৈধ বালু উত্তোলনের কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থার কারনে বাটাখালী সেতুর তলদেশ যে কোন মুর্হুতে তলিয়ে গিয়ে সেতুটির বড়ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। বাটাখালী সেতু পয়েন্টে ছাড়াও বর্তমানে বালু উত্তোলন চলছে অন্তত ১৮ পয়েন্ট থেকে। বিশেষ করে নদীর উজানে মানিকপুর থেকে শুরু হয়ে উত্তর পশ্চিমে কোনাখালী বিএমচর ইউনিয়ন ও দক্ষিণ পশ্চিমে পালাকাটা রাবার ড্যাম পর্যন্ত এলাকাজুড়ে চলছে বালু উত্তোলন। তবে দিনরাত বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে চকরিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দিগরপানখালী, পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা, পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আমান্ন্যারচ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড মাতামুহুরী ব্রিজের দক্ষিণ পাশসহ উপজেলার ফাঁসিয়াখালী, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, চিরিঙ্গা, সাহারবিল, পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে।

পাশাপাশি উপজেলার খুটাখালী, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বনবিভাগের অধীন বিভিন্ন ছড়াখালে নিষিদ্ধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু উত্তোলন।

এতে রহস্যজনক নিরব ভূমিকা পালন করছে বন বিভাগ। গত মাসে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল এলাকায় বগাছড়ির ছড়াখালে বালু উত্তোলনে সৃষ্ট গর্তে পানিতে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কর্তৃক দেওয়া পত্রটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। পত্রে বলা হয়েছে মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা সেতুর এক কিলোমিটার নিচে এবং উপরের অংশ থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। তাই বিষয়টির আলোকে এবং মাতাতুহুরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন