মিজোরাম হয়ে মিয়ানমারে ঢুকছে ‘পশ্চিমা যোদ্ধারা’


পশ্চিমাদের ‘ভাড়াটে যোদ্ধারা’ ভারত হয়ে মিয়ানমারে প্রবেশ করছে—বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ১০ মার্চ এমন কথা বলে বসেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা।
ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর সাবেক এ কর্মকর্তা সেদিন বলেন, “আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য আছে। সেটা হল, ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অভিজ্ঞ যোদ্ধারা ভারতের মিজোরাম হয়ে মিয়ানমারের চিন রাজ্যে ঢুকছে।
“সেখানে গিয়ে তারা সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে, যারা মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে।”
তিনি বলেন, “গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মিজোরামে প্রায় দুই হাজার পশ্চিমা দর্শনার্থী ঢুকেছেন, কিন্তু আইজল (মিজোরামের রাজধানী) শহরের রাস্তায় বিদেশি পর্যটক খুব একটা চোখে পড়ে না।”
হিন্দু লিখেছে, মুখ্যমন্ত্রীর এমন আশঙ্কার পর গত ২১ এপ্রিল মিজোরামের লেংপুই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে নেয় সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ)।
এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামকে নতুন করে ‘প্রটেক্টেড এরিয়া রেজিম’ ঘোষণা করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মূলত এসব অঞ্চলে বিদেশিদের গতিবিধিতে নজরদারি চালাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নিজের দাবির পক্ষে বিধানসভায় সেদিন কিছু ঘটনাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা।
তিনি বলেন, বিস্ফোরকসহ গেল বছরের ১৯ জুন মিজোরামের বিমানবন্দরে এক ব্রিটিশ নাগরিক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আইজল সফর নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু চিন প্রদেশের বিদ্রোহীদের পক্ষ নেওয়া লালদুহোমা কেন এ ধরনের তথ্য দিলেন, তা বিশ্লেষকদের কাছে স্পষ্ট নয়।
তিনি কেন্দ্রকে জানিয়েই বিধানসভায় এসব বলেছেন, সেটাও বিশ্বাস করেন কেউ কেউ।
লালদুহোমার এমন ‘বিস্ফোরক’ তথ্যের পর অনুসন্ধানে নামে একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
এর মধ্যে গেল ৬ এপ্রিল একটি সরেজমিন প্রতিবেদন ছাপে টাইমস অব ইন্ডিয়া, যার শিরোনাম ছিল, ‘মিজোরাম যেভাবে ভাড়াটে সৈনিকদের মিয়ানমারে ঢোকার প্রবেশপথ হয়ে দাঁড়িয়েছে’।
সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, মিয়ানমারের চিন প্রদেশের অনেক বিদ্রোহীর সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে, যারা মার্কিন ও ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
বর্তমানে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় বিদেশিদের গতিবিধিতে নজরদারি বাড়িয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
চলমান এই নজরদারির মধ্যেও গেল মাসের শুরুতে মিজোরামে আটক হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই মার্কিন নাগরিক। আইজলের লেংপুই বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয় তাদের।
ভারতীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ, চট্টগ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সূচনাকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মিজোরামের সঙ্গে মিয়ানমারের প্রায় ৫১০ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সীমান্তবর্তী এসব এলাকায় অস্থিরতা চলছে। হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছে মিজোরামের শরণার্থী শিবিরগুলোতে।
মিজোরামের সংখ্যাগুরু মিজো, মণিপুরের কুকি-জোমিস, মিয়ানমারের চিন এবং বাংলাদেশের কুকি-চিন সম্প্রদায়ের সবাই জো জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত।