মিয়ানমারের সঙ্গে গায়ে পড়ে যুদ্ধ বাধানোর ইচ্ছা নেই: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি মহাসচিব সেন্টমার্টিন ইস্যুতে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রবিবার (১৭ জুন) দুপুরে রাজধানী ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কথাগুলো বলেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার কখনো নতজানু আচরণ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। তবে মিয়ানমারের সঙ্গে গায়ে পড়ে যুদ্ধ বাধানোর ইচ্ছা নেই।
মিয়ানমার সীমান্ত থেকে টেকনাফ-সেন্ট মাটিন নৌপথে নৌযান লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। এ নিয়ে সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক সভায় বলেছেন, ‘মিয়ানমারের মতো একটা দেশকেও কিছু বলা যাবে না? এটা যে কতটা নতজানু, দাসসুলভ মনোভাব হতে পারে! সীমান্তে মানুষ মারছে, পানি দিচ্ছে না, অথচ সরকার একটা কথা বলে না।’
মির্জা ফখরুলের সেই বক্তব্যের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ইস্যু নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েছে। তিনি কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও কৌশলের বাইরে গিয়ে এমন কথা বলেছেন, যা শুনে মনে হয় পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের ন্যূনতম ধারণা নেই। মির্জা ফখরুল ইসলামের বলার আগেই আমি বলেছি, সরকার এখানে নিষ্ক্রিয় নয়। আক্রান্ত হলে পাল্টা আক্রমণে প্রস্তুত আছে সরকার। সেখান থেকে যুদ্ধজাহাজ ইতিমধ্যে প্রত্যাহার হয়েছে। যান চলাচল নিয়মিত হয়ে গেছে। আমরা গায়ে পড়ে ঝগড়া করব না।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘মির্জা ফখরুলকে বলতে চাই, এখানে উসকানি দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ বাধাব? সারা বিশ্ব রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। যেকোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় সরকার। রোহিঙ্গারা যখন দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছিল, ওই দিক থেকে তখনো কিছু উসকানি ছিল। আমরা উসকানিতে পা দিইনি। গায়ে পড়ে যুদ্ধ বাধানোর ইচ্ছা নেই। আলাপ-আলোচনার দরজা এখনো খোলা আছে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী শেখ হাসিনার সরকার। ভিশনারি লিডার শেখ হাসিনা জানেন কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। কোরাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন দখল হয়ে যাচ্ছে—এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিএনপি-জামায়াত এসব গুজব ছড়াচ্ছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনার নিয়ে বিএনপি বেহুদা মন্তব্য করেছিল। এখনো তারা সেটাই করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনীসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা সতর্ক আছে। সেন্ট মার্টিন সীমান্তে গোলাগুলি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আমরা সতর্ক আছি। সেন্ট মার্টিনে গুলিটা আরাকানরা করেছে, মিয়ানমার সরকার করেনি।’
সেন্ট মার্টিন সীমান্তে মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি এবং গুলির পেছনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে নতুন রাষ্ট্র গঠনে কোনো বিদেশি ইন্ধন আছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে নতুন রাষ্ট্র গঠনে প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা অমূলক নয়। আরও কিছু থাকতে পারে কি না, খতিয়ে দেখব এবং খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি। তাদের অভ্যন্তরীণ সংকটে আমাদের এখানে উসকানি কেন? আলোচনার দরজা খোলা। তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ আছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর বোঝা হয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রথম বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়েছিল বিএনপি সরকার। রোহিঙ্গাদের জঙ্গি কাজে ব্যবহার করেছে। রোহিঙ্গারা বোঝা হয়ে আছে, তাদের ফিরে যেতেই হবে। সে প্রয়াস অব্যাহত আছে। আমরা নতজানু আচরণ কখনো করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।’
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপির আন্দোলনের ব্যর্থতার মূল দায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। তিনি লন্ডনে বসে কাউকে পদায়ন ও কাউকে বাদ দিচ্ছেন। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চায় বিএনপি কতটা উদাসীন ও অনীহ, আজ সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে।
মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।