রাজস্থলীতে পাহাড়ি ঝাড়ু ফুলের কদর, চাহিদা পূরণ হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের

fec-image

শীত মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চলে ঝাড়ু ফুল ফোটার পূর্ণাঙ্গ সময়। প্রকৃতিগতভাবে পাহাড়ের ঢালু জমিতে এ ফুল ফুটে বলে পাহাড়ে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ই সেটি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বাজারে এনে বিক্রি করে চলে তাদের পরিবার ।

ঝাড়ু ফুল পরিবারের গৃহস্থালির পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্রাম থেকে শহরে এমনকি বিত্তবানদের ঘরে এই ঝাড়ু ফুল আঁটি বেঁধে বেশ আগ্রহের সহিত সংরক্ষণ করা হয়। যাহা পরিচ্ছন্নতার যত আধুনিক ও বিকল্প পণ্য থাকুক না কেন, ঝাড়ু ফুলের কোন বিকল্প নেই।

রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া ঝাড়ু ফুল অত্র এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা মেটাচ্ছে। প্রাকৃতিক এই ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে বহু পরিবার জীবন নির্বাহ করছে। একই সাথে ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠছেন এ অঞ্চলের নারী-পুরুষরা। পাহাড়ের উর্বর মাটিতে পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঝাড়ু ফুলের আবাদ করা হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

রাজস্থলী উপজেলার সাপ্তাহিক হাটে দেখা যায়, মূল সড়কের পার্শ্বে ঝাড়ু ফুলকে আঁটি বেঁধে সাজিয়ে সারি সারি করে ক্রেতার আশায় দাঁড়িয়ে আছেন তারা। অনেকে আবার পাইকারদের কাছ থেকে ক্রয় করে লাভে বিক্রির আশায় ফুল নিয়ে অপেক্ষায় আছেন। তবে এই হাটে অনেককেই এই ফুল খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করতে দেখা যায়।

উপজেলার বলি পাড়া, নারাইছড়ি, মিতিংগা ছড়ি, কিস্ত পাড়া, মাঘাইনপাড়া, কুইক্যাছড়ি পাড়া, বগাছড়ি পাড়া, শিলছড়ি, জান্তিমইন, ঘিলামুখ নতুন পাড়া সহ বিভিন্ন গহীন অরণ্যের পাদদেশ থেকে এসব ফুল সংগ্রহ করে বিক্রির আশায় সাপ্তাহিক হাটের দিন নিয়ে আসেন তারা। দুরত্ব বেশি বিধায় অনেকে হোন্ডায় বা বিভিন্ন সিএনজি চাঁদের গাড়ী করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন রাজস্থলীর, ইসলামপুর গাইন্দ্যা বাজারে, বাঙ্গালহালিয়া বাজারে, ও রাজস্থলীর ঐতিহ্যবাহী বাজারে।

২০ /৩০ শলাকা ফুল দিয়ে একটি ঝাড়ুর আটি বাঁধা হয়। প্রতিটি আটি আকার ও মানভেদে ৩০/৪০টাকা বিক্রি করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে হাত বদলে ঝাড়ু ফুলের এই স্টিক ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এক বান্ডিল ফুলে ৫০/১০০ টি আটি থাকে। প্রতিটি বান্ডিল ১হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। মানভেদে এর দাম কমবেশি হতে পারে।

পাহাড়ি নারীরা জুমচাষ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাহাড় থেকে ফুল ঝাড়ু সংগ্রহ করে মাথায় করে নিয়ে এসে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করে। তারা সংসারে বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে এটিকে বেছে নিয়েছে।

ঝাড়ু ফুল বিক্রেতা রজিনা তনচংগ্যা বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝাড়ু ফুল কেটে আঁটি তৈরি করে প্রতি সপ্তাহের বুধবারে রাজস্থলী বাজারে বিক্রি করি। যা পাই তা দিয়ে পরিবারের জন্য বাজার সদায় করে আবার নিজ বাড়ীতে চলে যায় ।অপর দিকে ছেলে মেয়েদের পগা শুনার খরচ বহন করি।

অপর দিকে আরেক বিক্রেতা ললিমহন ও আকর্ষণ মালা তনচংগ্যা এ প্রতিনিধি কে জানান, কাঁচা ফুলের ৩০/ ৩৫টি শলাকা দিয়ে তৈরি প্রতিটি আঁটি ৩০/৪০ টাকা করে বিক্রি করি। আমি প্রতি সপ্তাহে ঝাড়ু বিক্রি করে সংসারে বাড়তি টাকা রোজগার করে আমার সংসার টিকে রাখি। এটি আমার পরিবারের বাড়তি আয়।

এদিকে রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি-যেমন মারমা, তনচংগ্যা ত্রিপুরা ও খিয়াং সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাইকারি দামে ঝাড়ু ফুল কিনে রোদে শুকিয়ে ঝাড়ুর আঁটি বানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে সরবরাহ করছেন কয়েকজন চট্রগ্রামের রাঙ্গুনিয়া রোয়াজার হাট, ইছাখালী, শিলক, সৈয়দবাড়ী, মরিয়মনগর থেকে আসা ব্যবসায়ী। এগুলোকে রোদে ভালভাবে শুকিয়ে শক্ত ঝাড়ু করার মতো সম্পূর্ণ উপযুক্ত করে বাঁধা হয়। এরপর ঝাড়ুফুল গুলোকে বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয়।

ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ী পারভেজ জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পাহাড়ের নিম্ন আয়ের লোকজনদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ঝাড়ু ফুলের আঁটি কিনে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম-ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। সময় আসলে আমি ঝাড়ু ফুলের ব্যবসা করি আবার সময় চলে গেলে গরুর ব্যাবসা করি।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মন্তব্য করে রাজস্থলী উপজেলার বিশিষ্ট জনরা বলেন, পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া ঝাড়ু ফুল দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। প্রাকৃতিক এই ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঝাড়ু ফুলের আবাদ করা হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা মনে করেন। এ বিষয়ে রাজস্থলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো উলফুল ঝাড়ু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ অঞ্চলে পিছিয়ে পরা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখছে।এলাকার জনসাধারণের অর্থনৈতিক চাঙ্গা ও পরিবারের ভরনপোষন মিটাচ্ছে।ফলে সরকারি সুযোগ সুবিধা যাতে তারা বঞ্চিত না হয় সে ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস সর্বাথক সহযোগিতা অব্যাহত থাকিবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন