রিসোর্ট না থাকায় চন্দ্র পাহাড়ের রাতের সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পর্যটকরা
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান। নয়নাভিরাম পাহাড়ি সৌন্দর্য। এখানে যেন সৃষ্টির সবটুকু সৌন্দর্য উজাড় করে নিজের মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছেন প্রকৃতি তার আপন রুপ। প্রকৃতির স্বমহিমায় সজ্জিত নীলগিরি ও চন্দ্র পাহাড় দেখতে প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটে আসেন। পর্যটকরা উপভোগ করেন পাহাড় আর মেঘের মিতালি।
বান্দরবান শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত চিম্বুক পাহাড়ের পাশে এ চন্দ্র পাহাড়। বান্দরবানের সর্বাধিক জনপ্রিয় দুটি পর্যটন গন্তব্য নীলাচল ও নীলগিরি৷ নির্জন পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত এই জায়গা দুটিতে সারা বছরই পর্যটকরা ভিড় জমান৷ কিন্তু পর্যাপ্ত হোটেল মোটেল বা রিসোর্ট না থাকায় বেশি সময় ধরে ঘুরতে না পারা ও রাতে চন্দ্র পাহাড়ে অবস্থান করতে না পারায় আক্ষেপ জানিয়েছেন আগতরা। আর স্থানীয়রা বলছেন, উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি এখানে।
এ অবস্থায় আর এন্ড আর হােল্ডিংস লিমিটেড ও আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের যৌথ প্রচেষ্টায় চন্দ্র পাহাড়ে ২০ একর জমিতে নির্মিত হবে উন্নত নির্মাণশৈলির আদলে ফাইভ স্টার মানের সুবিধা সম্বলিত রিসাের্ট। পাহাড়ে সংযােজন করা হবে ক্যাবল কার। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ২০১৬ সালের ১২ জুন। এর আগে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ২০ একর তৃতীয় শ্রেণির জমি পর্যটন কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনার লক্ষ্যে বান্দরবানে সেনা রিজিয়নের অনুকূলে লিজ প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর বান্দরবান জেলা পরিষদ চুক্তিবদ্ধ হয়।
কিন্তু চার বছর পরে এসে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গিয়ে আপত্তির মুখে পড়েছে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এই প্রকল্পের পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। প্রকল্পের কাজ থেকে সরে আসার জন্য বিবৃতি দিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, সিএইচটি কমিশন, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
ওই প্রকল্পের পাশে ধোলাইপাড়া, কোণাইপাড়া, কাপ্রুপাড়া এলাকার উপজাতীদের চারটি গ্রাম। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ম্রোদের চারটি গ্রামের ৭০ থেকে ১১৬টি পাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ১০ হাজারের মতো জুমচাষি উদ্বাস্তু হবে বলে দাবি করে একটি বিশেষ গোষ্ঠি। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, পরিত্যাক্ত চন্দ্রপাহাড়ে ফাইভ স্টার হোটেল হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত হাজেরখানেক উপজাতীয় বাসিন্দার কর্মসংস্থান হবে। অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত যাতায়াত নিশ্চিত হবে, পাহাড়ি জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। এতে করে পাহাড়ি জনগণ তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য পর্যটকদের কাছে নায্যমূল্যে বিক্রি করার সুযোগ হবে। এছাড়া রাস্তার দুই ধারে ফলের দোকান, রেস্তোরার মাধ্যমে উপজাতীয় জনগণ তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে পারবে।
প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রকল্প এলাকা থেকে ম্রো সম্প্রদায়ের অবস্থিত কলাইপাড়া ও এরাপাড়ার দুরত্ব ৫ কিলোমিটার ও কাপ্রুপাড়া ও দোলাপাড়া যথাক্রমে সাড়ে তিন ও আড়াই কিলোমিটার। তাই এটি নির্মিত হলে স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর জমি অধিগ্রহণ বা তাদের গ্রামের কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়া তারা জুম চাষও ঠিকঠাক করতে পারবেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় লোকজন উৎপাদিত সবজি ফল ও অন্যান্য পাহাড়ে তৈরি উপকরণ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন পর্যটকদের কাছে। এছাড়া রিসোর্টকে কেন্দ্র করে থাকবে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ।
ঢাকার রামপুরা থেকে স্বপরিবারে বান্দরবানের চন্দ্র পাহাড় ও নীলগিরি ঘুরতে এসেছেন মৌসুমী। তার মতো এখানে আসা পর্যটকরা পাহাড়ের রুপে বিমােহিত হলেও রিসাের্ট না থাকায় বিশ্রাম নেয়া বা রাতে পাহাড়ে অবস্থানের সুযােগ না থাকায় ফিরে যেতে হয় ৩০ কিলোমিটার দূরে থানচিতে। তাদের মতে, এখানে হটেল, মটেল বা রিসোর্ট থাকলে ভ্রমণ আরও বেশি উপভোগ্য হতো। এছাড়া পর্যটকও আরও বাড়তো, এতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটতো।
বান্দরবান আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখানে রিসোর্টটি তৈরি হলে তা জাতীয় অর্থনীতি ও বান্দরবানের পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
রাস্তাঘাট, পানি ও বিদ্যুৎহীন চন্দ্রপাহাড়ের চূড়ায় বিশ্বের অত্যাধুনিক রিসাের্টটি তৈরি হলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ম্রো সম্প্রদায়ের পরিবারিক অর্থনীতি বেগবান হবে বলে আশা স্থানীয়দের। সেই সাথে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হবে বলেও অনেকে আশা ব্যক্ত করেন।