রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসির উচ্চ পর্যায়ের টিম উখিয়া-টেকনাফে

fec-image

উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থ্রিজি-ফোরজি’র সার্বিক নিয়ন্ত্রণের জন্য বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেরটি কমিশন) এর একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম এখন উখিয়া-টেকনাফে কাজ করছেন। টিমে বিটিআরসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, টেকনিক্যাল পার্সন, রবি, গ্রামীণ, বাংলালিংক, টেলিটক অপারেটর কোম্পানির প্রতিনিধি, টেকনিক্যাল ও অভিজ্ঞ লোকজন রয়েছেন।

এই টিমটি গত শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অবস্থান করছেন। তারা আগামী সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প এরিয়ায় প্রয়োজনীয় কাজ করবেন। বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প এলাকায় মোবাইল ফোনের সিম বিক্রি বন্ধ আছে কিনা, ফোর জি, থ্রি জি বন্ধ আছে কিনা এগুলো তারা ভালভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে দেখবেন। টিমটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে ক্যাম্পের ভিতরে নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার বিষয়ে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক সচল রাখার জন্য সুপারিশমালা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবেন। ৩২ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প এরিয়ায় প্রয়োজনে আধুনিক মোবাইল জ্যামার বসানো হবে। এই টিম মোবাইল অপারেটর গুলোর স্থানীয় এজেন্টদের সাথে বসবেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী অধ্যূষিত এলাকায় মোবাইল সীম ও নেটওয়ার্ক সামগ্রী বিপননে রেস্টিকশন ও আইনী বিধি নিষেধের কথা জানিয়ে দেবেন। অবৈধ এজেন্টদের উঠিয়ে দিতে তারা প্রশাসনকে সুপারিশ করবেন।

উখিয়া সার্কেলের এডিশনাল এসপি নিহাদ আদনান তাইয়ান আরো বলেন-এখানে কমর্রত উচ্চ পর্যায়ের বিটিআরসির টিম রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে দূরে রাখতে তাদের বাস্তবসম্মত সুপারিশমালা নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, রোহিঙ্গা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে বৈঠক করবেন। টিমটি সরেজমিনে কাজ করার পর বিস্তারিত করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পেশ করার কথা রয়েছে।

প্রতিবেদন ও সুপারিশমালার উপর ভিত্তি করেই রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের বিষয়ে শীঘ্রই নজিরবিহীন পরিবর্তন আসবে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান জানিয়েছেন।

প্রয়োজনে সরকারের কাছে রাষ্ট্রের স্বার্থে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এরিয়ার জন্য সেলুলার নেটওয়ার্কের আলাদা বিধিমালাও প্রনয়ণ করার সুপারিশ করা হতে পারে বলে বিটিআরসি টিমের একজন সদস্য জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সদস্য আরো বলেন-বিশ্বায়ানের যুগে সেলুলারের তরঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন কাজ। তারপরও দেশের স্বার্থে ব্যয়বহুল হলেও এ কাজ গুলো আমরা সফলভাবে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে এদেশের নেটওয়ার্ক পাওয়া এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিকাশ জাতীয় মোবাইলে লেনদেনের যে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, সেটাও আমরা গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখছি।

এদিকে, গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে উখিয়া টেকনাফে রাতের বেলায় থ্রি জি এবং ফোর জি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার পর রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প গুলোতে স্থানীয় দোকানদারদের কাছ থেকে ওয়াই ফাই কানেকশন নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের নেটওয়ার্ক সচল রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু স্থানীয় জনগোষ্ঠী নেটওয়ার্ক না পেয়ে এখন চরম ভোগান্তিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন উখিয়ার গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নুর মোহাম্মদ সিকদার।

ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক কানেকশন দিয়ে স্থানীয় অসাধু ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের অর্থ কামাই করেছেন বলে উল্লখ করে তিনি বলেন, অন্যান্য বিষয়ের মতো রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা এখন মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক নিয়ে চরম সংকটে আছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ক্যাম্পে তাদের নেটওয়ার্ক ওয়াই ফাই কানেকশন নিয়ে সচল রাখার বিষয়ে অতিরিক্ত আরআরআরসি এবং আরআরআরসি কার্যালয়ের মুখপাত্র শামশুদ্দোজা নয়ন (জ্যেষ্ঠ উপসচিব) এর কাছে জানতে চাইলে, তিনি বিষয়টি জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও বিটিআরসির দায়িত্ব বলে জানান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেটওয়ার্ক বন্ধ করার জন্য, কারণ রোহিঙ্গা ছোটখাট ঘটনা থ্রিজি-ফোরজি ব্যবহার করে বিশ্বের কাছে পৌছে দিচ্ছে। যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু নেটওয়ার্ক কোম্পানী গুলো রোহিঙ্গার ক্যাম্প এলাকাসহ পুরো উখিয়া-টেকনাফে থ্রিজি-ফোরজি বন্ধ রেখেছে।

নেটওয়ার্ক কোম্পানী রবি আজিয়াটা লিমিটেডের হেড অফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম বলেন, বিটিআরসি থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছে উখিয়া-টেকনাফে থ্রিজি-ফোরজি বন্ধ রাখতে। সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তাই পুরো উখিয়া-টেকনাফ থ্রিজি-ফোরজি বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন