‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আরেকটি নতুন খেলা শুরু হচ্ছে’
নানা সন্দেহের মধ্য দিয়ে আগামী ২২ আগষ্ট শুরু হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এই নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। জানা গেছে, মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স গতকাল বৃহস্পতিবার এ খবর জানিয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে রোহিঙ্গাদের অবস্থান বাংলাদেশে দীর্ঘায়িত করার এটি আরেকটি নতুন খেলা বলেই মনে করা হচ্ছে।
এর আগে গত নভেম্বরে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার একটি উদ্যোগ ভেতরের উস্কানীতে রোহিঙ্গাদের কারণে ব্যর্থ হয়। রোহিঙ্গারা নিজভূমি আরাকান (রাখাইনে) ফেরত যাওয়ার আগে মিয়ানমারের নাগরিকত্বসহ কিছু দাবি জানিয়েছে। এসব দাবি এখনো পূরণ হয়নি। ফলে এবারও তারা স্বেচ্ছায় যাবে কিনা তা অনিশ্চিত।
জাতিসংঘের মতে রাখাইনের পরিবেশ এখনো রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার উপযোগী হয়নি। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, প্রত্যাবাসনের আগে রাখাইনের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের কাছে তুলে ধরবেন তারা।
এ সব কারণে আস্কারা পেয়ে রোহিঙ্গারা বারবার প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতা চালিয়েছে। জানা গেছে, এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে এবারো রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতা শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলো সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কিছু সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বাংলাদেশের ক্যাম্পে আর থাকতে চায়না। তারা দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু আল একিন নামধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে তারা জিম্মী। তারা আরো জানায়, এই গোষ্ঠীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতার পাশাপাশি চাঁদাবাজী, অপহরণ, খুন, গুম, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিন্ট থু বলেন, ‘আগামী ২২ আগস্ট তিন হাজার ৫৪০ জনের প্রত্যাবাসনে আমরা সম্মত হয়েছি।’ বাংলাদেশ সম্প্রতি ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই শেষে দেশটি তিন হাজার ৫৪০ জনকে ফেরত নেয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে মাত্র তিন হাজার ৫৪০ জনকে ফেরত নেয়ার হাস্যকর বিষয়টি বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতা একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। এটি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করার নতুন আরেকটি খেলা বলও মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, এটি একটি ছোট আকারে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা। তিনি আরও বলেন, ফেরত যাওয়ার জন্য কাউকে জোর করা হবে না। বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্থিতিশীল প্রত্যাবাসন হউক।
এসব কারণে নানা সন্দেহের মধ্য দিয়েও আগামী ২২ আগষ্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নতুন তারিখ নির্ধারন করা হল।
মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩৪ টি শিবিরে অবস্থান করছে। তাদের কারণে স্থানীয় অধিবাসী নানাভাবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এছাড়াও এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা। তাই বারবার দাবি উঠছে দ্রুত প্রত্যাবাসনের।