রোহিঙ্গা সমাবেশে মদদদাতা সেবা সংস্থা ‘কারিতাস’

fec-image

মিয়ানমারের নানান নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে গত ২৫ আগস্ট। এ উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের নামে ক্যাম্পে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের একাধিক সংগঠন উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের এক্স-৪  ব্লকে বিশাল এই সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশে ক্যাম্পে কর্মরত কারিতাস সংস্থার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত সেবা সংস্থা ‘কারিতাস’ ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সমাবেশে মদদদাতাদের মধ্যে অন্যতম হলেও কৌশলে পার পেয়ে যাচ্ছে। সমাবেশ চলাকালীন কুতুপালং এক্স-৪ এ কারিতাসের যেসব অফিস, সেট ছিল তা অঘোষিত ভাবে বন্ধ রেখে We want justice for Rohingya নামের একটি সংগঠনকে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে কারিতাসের কর্মকর্তারা।

কারিতাস সংস্থার চট্টগ্রামস্থ প্রকল্প পরিচালক মাজহারুল ইসলাম জানায়, কারিতাস এমন কোন কাজ করেনা যা রাষ্ট্র বিরোধী। তাই ২৫ আগস্ট আমাদের লোকজন ক্যাম্পে ছিল এবং কার্যক্রমও চলমান ছিল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা তা খতিয়ে দেখছি। এছাড়াও অন্যান্য যেসব এনজিও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে রোহিঙ্গা সমাবেশে মদদ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সুত্রে জানা গেছে, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সমাবেশকে ঘিরে বেশ কিছু দেশী-বিদেশী এনজিও সংস্থা এবং রোহিঙ্গাদের সংগঠন তৎপর ছিল। প্রশাসনের অগোচরে বিদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের নিকটাত্নীয়দের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ এনে সমাবেশে ব্যয়ে করেছে। এমনকি অনেক এনজিও, আইএনওজি অঘোষিত ভাবে ওইদিন তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সমাবেশে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গার উপস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে। দেশের নিরাপত্তার পাশাপাশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকার।

এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ নিয়ে তদন্তে নামে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ছাড়াও যেসব এনজিও সংস্থা এবং সমাবেশে মদদ দিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

গোপন সুত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে গঠিত ‘রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটি (আরআরসি), ভয়েস অব রোহিঙ্গা, আরকাইন রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউমিনিটি রাইটস (এআরএসপিএইচ) এবং এনজিও সংস্থা ‘এডিআরএ’ ও ‘আল মারকাজুল ইসলামী সংস্থা’ নামে দুটি এনজিও রোহিঙ্গা সমাবেশে টি-শার্ট ও ব্যানার সরবরাহ করেছে।

এছাড়াও গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের সমাবেশের পূর্বে ‘এডিআরএ’ নামক একটি এনজিও সংস্থা গত ১৯ ও ২১ আগস্ট কক্সবাজার কলাতলিস্থ শালিক রেস্তোরাঁয় বৈঠক করে আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে আড়াই লাখ টাকা অনুদান দেয়। এছাড়া ‘আল মারকাজুল ইসলামী সংস্থা’ সমাবেশে রোহিঙ্গাদের জন্য টি-শার্ট তৈরিতে সহযোগিতা করে।

রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, কুতুপালং ক্যাম্প এক্স-৪ এর ‘ই’ ব্লক এলাকায় সবচেয়ে বড় সমাবেশ ছাড়াও রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে ফুটবল খেলার মাঠ ডি-৫ ব্লক মাঠে ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের পক্ষে সমাবেশ ও র‌্যালি করা হয়। সমাবেশ সফল করতে ডি-৫ ব্লক ‘রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটি’ (আরআরসি) সংগঠনের চেয়ারম্যান সিরাজুল মোস্তফার বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সমাবেশকে কেন্দ্র করে ‘ভয়েস অব রোহিঙ্গা’ এবং রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটির (আরআরসি) পক্ষ থেকে বেশ কিছু টি-শার্ট, ব্যানার ছাপানো হয়। যা তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট স্বীকার করেছেন। তৎমধ্যে ভয়েস অব রোহিঙ্গা ৭০০ সাদা হাফ টি-শার্ট ও ২৮টি ব্যানার করেন বলে স্বীকার করে উখিয়া মসজিদ মার্কেটের নিশাত প্রিন্টার্স ও মিডিয়া প্রিন্টার্স। তাছাড়া রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিউনিটির (আআরসি) ১০০ হাফ টি-শার্ট ছাপানো হয় কক্সবাজার বাজারঘাটা শাহ মজিদিয়া প্রিন্টার্স থেকে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কারিতাস, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন