সম্প্রীতির মিলন মেলায় বান্দরবানে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হল তিন ধর্মের তিনটি বড় উৎসব
সম্প্রতি কুমিল্লায় দুর্গাপূজা মন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনা নিয়ে সারাদেশে উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজমান থাকা কালেই বান্দরবানে শান্তিপূ্র্ণভাবে এবং ১১টি জাতিগোষ্ঠির অংশ গ্রহনে সম্মিলিত ও শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হলো হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তিনটি বড় উৎসব দুর্গাপূজা, ঈদে মিলাদুন্নবী ও প্রবারণা পূর্ণিমা।
জেলা তথ্য অনুযায়ী, দেশের মধ্যে একমাত্র বান্দরবানেই ১১টি জাতিগোষ্ঠীর সবগুলোরই বসবাস। মারমা, চাকমা, ম্রো, ত্রিপুরা, লুসাই, খুমি, বোম, খেয়াং, চাক, পাংখো ও তঞ্চঙ্গাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মারমা সম্প্রদায়। এতগুলো সম্প্রদায় একত্রিতভাবে থাকার পরও সকলে সম্মিলিতভাবে এখানে সকল ধর্মাবলম্বীরা তাদের প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব শান্তি পূর্ণভাবে পালন করেছে।
সম্প্রতি পূজামন্ডপ ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ক্যায়ং এ গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি উৎসবেই হিন্দু ও মারমাদের পাশাপাশি মুসলিম ও খ্রীস্টানরাও যোগ দিয়েছে উৎসবে সকলেই একত্রিত হয়ে মিলে গেছে আনন্দের মিলন মেলায়।
মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জাতিগোষ্ঠির সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে সম্প্রীতির জেলা বান্দরবানে মানুষের প্রতি মানুষের আলাদা আত্মার একটি মেলবন্ধন রয়েছে। এজেলায় অন্য জেলারমত নেই কোনো ধরনের হানাহানি মারামারি। এখানকার মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ তাই অন্য সকল জেলার চেয়ে সুনামও রয়েছে সম্প্রীতির বান্দরবানের। তারা বলেন, শুধু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে নয়, এখানকার সকল কিছুতেই সকল জাতিগোষ্ঠির রয়েছে মেলবন্ধন। আর এসব কারণে বন্দরবান জেলা এখন সকল মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে। সারা বিশ্ব এখন বান্দরবানকে চিনে।
বান্দরবানে প্রবারণা পূর্ণিমায় গিয়ে মোঃ ইসহাকের সাথে আলাপ করলে সে জানায়, প্রতিবছরই হিন্দুদের বিভিন্ন পূজামন্ডপে এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সকল ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেন। কখনোই কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এবারও শান্তিপূর্ণভাবে সকলের অংশ গ্রহনের মাধ্যমে শেষ হয়েছে সকল ধর্মাবলম্বীদের তিন তিনটি ধর্মীয় উৎসব। এছাড়া আমাদের ঈদে মিলাদুন্নবীও পালন করেছি অত্যান্ত শান্তিপূর্ণভাবেই।
মারমা তরুনী উম্রাচিং জানায়, প্রবারণা পূর্ণিমায় তাদের পাশাপাশি হিন্দু এবং মুসলিমরাও অংশ নিয়েছে। সকলের অংশ গ্রহনেই শান্তিপূর্ণভাবে অত্যান্ত আনন্দের সাথেই পালিত হয়েছে প্রবারণা পূর্ণিমা। এর আগে পূজামন্ডপে গিয়েও শান্তিতে আনন্দ উৎসবে যোগ দিতে পেরে সন্তুষ্ট সে।
এ বিষয়ে রাজু কর্মকার জানায়, এবারে কুমিল্লার ঘটনায় আমরা ভীত ছিলাম কখন এখানকার পূজামন্ডপেও হামলা হয়। কিন্তু সকল ভয়কে জয় করে আবারো প্রমানিত হল বান্দরবান আসলেই একটি সম্প্রীতির জেলা। এখানে এতবড় ঘটনার পরও সকলে মিলে শান্তিতে দুর্গাপূজা শেষ করেছি। প্রবারণা পূর্ণিমাতেও সকলে অংশ নিয়েছি।
বান্দরবান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব আলাউদ্দিন ইমামী বলেন, বান্দরবান হচ্ছে একটি শান্তির জেলা। যুগ যুগ ধরে এখানে ১১টি জাতিগোষ্ঠি একত্রিত হয়ে সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে আসছে। তিনি বলেন, এখানো তার ব্যতিক্রম নয়, এখনো আমাদের সেই সম্প্রীতি রয়েছে। তিনি বলেন, বান্দরবানের মানুষ অত্যান্ত সহজসরল ও আন্তরিক। আমরা চাই সারাজীবন এখানকার মানুষ যেন এভাবে সম্মিলিতভাবে শান্তিতে থাকে।
এ বিষয়ে জ্ঞানরত্ন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সত্যজিত থের জানান, দুই দিনব্যাপী প্রবারণা পূর্ণিমায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছাড়াও মুসলিম ও হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠি অংশ নিয়েছে। সকলে একত্রিত হয়েই শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে প্রবারণা পূর্ণিমা। সকলে অংশ গ্রহণ করায় আমরাও আনন্দ পেয়েছি।
পূজা কমিটির সেক্রেটারি ও জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষীপদ দাশ জানায়, এবারের পূজা মন্ডপে মুসলিম ও বৌদ্ধরাও অংশ গ্রহণ করেছে। এতে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে। সারাদেশে যখন পূজামন্ডপে উত্তেজনা চলছে ঠিক তখন বান্দরবানে শান্তি পূর্ণভাবে সকলের অংশ গ্রহনেই শেষ হয়েছে দুর্গাপূজা। শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে ইদে মিলাদুন্নবী। এখন প্রবারণা পূর্ণিমা অনুষ্ঠানও সকলের অংশ গ্রহনে শেষ হচ্ছে অত্যান্ত আনন্দে ও শান্তিতে। এসময় তিনি বান্দরবানের এ সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে সন্তুটি প্রকাশ করে ভবিষ্যতেও যেন এ সম্প্রীতি বজায় থাকে তার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।