সময়রেখায় রোহিঙ্গা সংকট

fec-image

মিয়ানমারে নৃশংস সেনা অভিযান থেকে বাঁচতে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার তিন বছর পূর্ণ হলো চলতি মাসে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে শুরু হয়েছিল এই প্রাণে বাঁচার পলায়ন। তিন বছর ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন শিবিরে বাস করছেন তারা। এর মাঝে বহুবার তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হলেও দেখা যায়নি কোনো অগ্রগতি। চলমান এই সংকটের তিন বছরপূর্তি উপলক্ষে এর একটি সময়রেখা প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

পাঠকদের জন্য সে সময়রেখা বাংলায় তুলে ধরা হলো:

২৫শে আগস্ট, ২০১৭- মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ৩০ পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে হামলা চালায় বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)।

২৬শে আগস্ট, ২০১৭- একদিকে, আরসা ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যকার লড়াই তীব্র হতে শুরু করে। অন্যদিকে, রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা।

২রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭- মিয়ানমার সরকার জানায়, রাখাইনের অধিকাংশ এলাকায় ২ হাজার ৬০০’র বেশি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

১১ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭- মিয়ানমারের সামরিক অভিযানকে ‘জাতি নিধনের নিকৃষ্টতম উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করে।

১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭- মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করেন। কিন্তু জাতি নিধনের অভিযোগ এড়িয়ে যান।

১২ই অক্টোবর, ২০১৭- মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েলের সঙ্গে এক বৈঠকে মিয়ানমার সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং লেইন বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের স্থানীয় নয়।

২রা নভেম্বর, ২০১৭- সেনা অভিযান শুরুর পর প্রথমবারের মতো রাখাইন পরিদর্শনে যান সুচি। জনগণকে ‘ঝগড়া না করতে’ আহ্বান জানান।

২৭শে নভেম্বর, ২০১৭- মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফরে আসেন পোপ ফ্রান্সিস। বাংলাদেশে শরনার্থী শিবির পরিদর্শনের আগ পর্যন্ত ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি তিনি।

২১শে ডিসেম্বর, ২০১৭- রোহিঙ্গা নির্যাতনের জন্য দায়ী ১৩ ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির’ ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র।

১০ই জানুয়ারি, ২০১৮- মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জানায়, তাদের সেনারা রাখাইনের ইন দিন গ্রামে ১০ মুসলিমকে হত্যা করেছে।

২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সহিংসতার সময় জনশূন্য হয়ে পড়া ৫৫ গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার।

১২ই মার্চ, ২০১৮- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ও মসজিদ ধ্বংস করে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করছে সামরিক বাহিনী।

১১ই এপ্রিল, ২০১৮- ইন দিন হত্যাযজ্ঞের শাস্তি- হিসেবে মিয়ানমারের সাত সেনাকে ১০ বছর কঠোর পরিশ্রমের শাস্তি- দেওয়া হয়।

১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮- সুচি বলেন, তার সরকার রাখাইনের পরিস্থিতি আরো ভালো করে সামলাতে পারতো।

১৫ই নভেম্বর, ২০১৮- রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের একটি প্রচেষ্টা থেমে যায় ও শিবিরগুলোয় বিক্ষোভ দেখা যায়।

৪ঠা জানুয়ারি, ২০১৯- রাখাইনের জাতীয়তাবাদী আরাকান আর্মি মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। নতুন করে ফের সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে।

১৮ই মার্চ, ২০১৯- ২০১৭ সালের সামরিক নৃশংসতা তদন্ত করতে সামরিক আদালত গঠনের ঘোষণা দেয় মিয়ানমার।

২৭শে মে, ২০১৯- মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানায়, ইন দিন হত্যাযজ্ঞের দায়ে শাস্তি- দেওয়া সাত সেনাকে আগেভাগে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

২২শে জুন, ২০১৯- মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরাকাম আর্মি অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানায় এক অপারেটর।

২০শে আগস্ট, ২০১৯- জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানায়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কোনো শরণার্থী ফেরত যেতে না চাওয়ায় এবারও ব্যর্থ হয় প্রত্যাবাসন।

১১ই নভেম্বর, ২০১৯- মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া।

১৪ই নভেম্বর, ২০১৯- ভিন্ন একটি মামলায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তের অনুমোদন দেয় আইসিজে।

২৬শে নভেম্বর, ২০১৯- গু দার পায়িন গ্রামে ২০১৭ সালে সামরিক অভিযানের সময় হত্যাযজ্ঞের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সামরিক তদন্ত শুরু করে মিয়ানমার। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী জানায়, এ ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি- দেওয়া হয়েছে।

১১ই ডিসেম্বর, ২০১৯- হেগ শহরে আইসিজে’র শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে লড়তে হাজির হন সুচি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ‘অসম্পূর্ণ ও ভুল’ বলে দাবি করেন।

২০শে জানুয়ারি, ২০২০- মিয়ানমারে সরকারি প্যানেল রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করে জানায়, গণহত্যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে যুদ্ধাপরাধ ঘটে থাকতে পারে।

২৩শে জানুয়ারি, ২০২০- আইসিজে মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেও নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

২৫শে জানুয়ারি, ২০২০- মিয়ানমারে এক গ্রামে দুই রোহিঙ্গা নারীকে হত্যা করা হয়। আহত হন আরো সাত জন। স্থানীয় এক আইনপ্রণেতা, গ্রামবাসী ও আরাকান আর্মি এর জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করে। তবে সেনাবাহিনী অভিযোগ অস্বীকার করে।

২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০- মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানায়, ২০১৭ সালে আরো দুই রোহিঙ্গা গ্রামে নির্যাতনের অপরাধে দায়ী সেনাদের কোর্ট-মার্শাল করা হবে।

১৬ই এপ্রিল, ২০২০- মালয়েশিয়া প্রবেশের ব্যর্থ চেষ্টার পর ফিরে আসা ৩৯৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে বাংলাদেশ।

২৯শে এপ্রিল, ২০২০- মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত জানান, রাখাইনে যুদ্ধাপরাধ করছে দেশটি। বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে বেসামরিকদের ওপর বিমান ও কামান দিয়ে হামলা চালানোর পর এমনটা জানান তিনি। তবে মিয়ানমার জানায়, এ অভিযোগ পক্ষপাতদুষ্ট।

২৫শে মে, ২০২০- রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় নেওয়া ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে আইসিজে’তে প্রতিবেদন জমা দেয় মিয়ানমার।

সূত্র: মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা সংকট, সময়রেখায়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন