সীমান্তপথে আসছে অবৈধ অস্ত্র, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে সহিংসতা

fec-image

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা হয়ে দেশে প্রবেশ করছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এসব অস্ত্র মূলত পাচারকারীদের হাত ধরে রোহিঙ্গা শিবিরের পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছাচ্ছে, পরে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অপরদিকে, এই শিবির থেকেই রোহিঙ্গা তরুণদের একটি বড় অংশ নিচ্ছে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে চলমান সংঘর্ষে।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সীমান্তে নজরদারি জোরদার না করা হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দীর্ঘ ২৭১ কিলোমিটার, যার একটি বড় অংশই এখনো অরক্ষিত। বিশেষ করে শূন্যরেখায় কাঁটাতারের অভাব এবং নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে অনেক অংশ এখন নিয়ন্ত্রণ করছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’।

রাখাইন অঞ্চলের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে টেকনাফের নাফ নদী, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং থানচির নাগরাই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনায়াসেই প্রবেশ করছে ভারী অস্ত্র ও বিস্ফোরক। এসবের মধ্যে রয়েছে এন্টিপারসোনাল মাইন, গ্রেনেড, একে-৪৭, এলজি, ৯ এমএম বিদেশি এসএমজি, পিস্তল, ডেটোনেটর এবং রকেট লঞ্চারের মতো বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্র।

এই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যেমন আধিপত্য বিস্তার, দস্যুতা, মাদক পাচার ও অপহরণ।

চলতি মাসেই র‍্যাব একাধিক অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ ১৪ জন অস্ত্র চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করেছে। গত তিন মাসে র‍্যাব, বিজিবি, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে অন্তত ২৫টি অস্ত্রের চালান আটক করেছে। শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকেই এই বছর গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৫ জন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে।

বিজিবি রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় কিছু বাঙালির সহায়তায় এসব অস্ত্র ক্যাম্পে ঢুকছে। আরাকান আর্মিও এই অস্ত্র ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, জন্মভূমির টানে রাখাইনে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠনগুলো—যেমন আরএসও, আরসা ইত্যাদি। এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিবির থেকে নিয়মিতই যুবকরা পাড়ি জমাচ্ছে মিয়ানমারে।

একজন রোহিঙ্গা বলেন,”আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রতিদিন ক্যাম্প থেকে অনেক যুবক মিয়ানমারে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। যদি বাইরের কোনো দেশ সাহায্য করে, তাহলে আরও অনেকে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। আমাদের নেতাকে যদি বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তি দেয়, তিনিই সবাইকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।”

বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তে নজরদারি জোরদার না করা হলে বাংলাদেশে অস্ত্র, মাদক ও মানবপাচার পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

 

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অবৈধ অস্ত্র, রোহিঙা ক্যাম্প, সীমান্তপথ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন