স্বপ্ন কেড়ে নিয়ে মা’ বাবাকে কোয়ান্টাম’র লাশ হস্তান্তর

fec-image

লামার সরইয়ে খালে ভাসা অবস্থায় উদ্ধার করা দু’শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য মিশনারী সংস্থা- কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে দুষছেন নিহতের স্বজনরা। তারা বলছেন, এই মৃত্যুর দায় কোয়ান্টাম কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

মঙ্গলবার (৮জুন) সকালে বান্দরবান জেলা মর্গের সামনে লাশের অপেক্ষায় থাকা নিহত শ্রেয় মোস্তাফিজ ও আব্দুল কাদের এর স্বজনরা উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের এসব কথা বলেন। পরে লাশ বুঝে নিয়ে ঠাকুরগাঁও চাপাই নবাবগঞ্জ ও চাপাই নবাবগঞ্জের উদ্দেশে এ্যাম্বুলেন্স যোগে বান্দরবান ছেড়ে যান তারা।

এরআগে সোমবার (৭জুন) বেলা সাড়ে দশটার দিকে লামার সরইয়ের ঢেঁকিছড়া খালে ভাসতে থাকা এই দু’শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় জনতা। পরে পুলিশকে খবর দিয়ে লাশগুলো হস্তান্তর করে তারা।

নিহতদের একজন শ্রেয় মোস্তাফিজুর রহমান (১০) এবং অপরজন আব্দুল কাদের জিলানী (১১)। এরমধ্যে শ্রেয় মোস্তাফিজ ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বুলবুল মোস্তাফিজের ছেলে এবং আব্দুল কাদের চাপাই নবাবগঞ্জ সদরের রাণীহাট চকবহরম গ্রামের রজব আলীর ছেলে। দেশের উত্তর বঙ্গের মঙ্গাপীড়িত এলাকার এই দু’শিশু মিশনারী সংস্থা -কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালিত লামা কসমো স্কুল অ্যা- কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

পুলিশ ও কোয়ান্টাম কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার সকালে বৃষ্টির মধ্যেই ভিজে ভিজে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা খেলছিলো। পরে স্কুলের পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি ঝিরিতে কাদামাখা শরীর ধুতে গিয়ে পানির পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তের মধ্যে পড়ে। সেসময় তারা ভেসে গিয়ে প্রথমে ওই ঝিরির পানি নিষ্কাসনে বসানো পাইপের ভেতরে আটকা পড়ে। ওই সময় সহপাঠিদের আত্মচিৎকারে স্কুলের কর্মচারিরা এগিয়ে এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের উদ্ধার করতে পারেনি। পরে সেই ঝিরি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঢেঁকিছড়া খালে দু’শিশুর লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা উদ্ধার করে।

নিহত শ্রেয় মোস্তাফিজের জ্যেঠা জাকির মোস্তাফিজু মিলু উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, করোনাকালিন সময়ে সারাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সরকারের এই নির্দেশ উপেক্ষা করে মিশনারী সংস্থা- কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালিত কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজটি খোলা রাখা হয়েছে। এরমধ্যে শিশুদের নিরাপত্তা না দিয়েই অবহেলায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে প্রাণ হারিয়েছে দু’অবুঝ শিশু।

তিনি আরও বলেন, এই মৃত্যুর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। দুর্যোগের মধ্যে কোমলমতি শিশুদের ছেড়ে দিয়ে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে স্কুলের শিক্ষক ও পরিচালকরা। তিনি এই মৃত্যুর জন্য সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করেন। একইভাবে নিহত আব্দুল কাদের জিলানীর পরিবারও বিচার চেয়ে সেখানে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

লামার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের পর লাশ স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বজনরা লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করবে বলে জানিয়েছে। এছাড়া কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন