অদম্য ইচ্ছাশক্তিতেই ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে চকরিয়ার নুফা
লক্ষ্য ছিল অটুট, আত্মবিশ্বাস ছিল প্রবল। ২০২১-২২ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফলে হয়েছে সফল। গ্রামীণ জনপদে বড় হওয়া প্রথম চান্সে ঢাকা মেডিকেলেই সুযোগ পাবে, ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে নেবে, এটা ভাবিনি। মেধা তালিকায় স্থান করে উপলব্ধি করছে ঢাকার বাইরে পড়াশোনা করেও সেরা হওয়া যায়। নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও সময়কে কাজে লাগিয়ে সদ্য প্রকাশিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্যতম তানাজ্জাতুল ইসফার নুফা।
মেধাবী শিক্ষার্থী নুফা’র ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল সে চিকিৎসক হবে। তার সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেধা তালিকায় চান্স পেয়েছেন। নুফা ভর্তি পরীক্ষায় (সর্বমোট ২৮৫) পেয়ে জাতীয় মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গত কয়েকমাস নিজ বাড়িতেই রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন তিনি। তার সাফল্যে খুশি পরিবারের সবাই। মেধাবী শিক্ষার্থী নুফার এমন অভাবনীয় সাফল্যের খবরে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু -বান্ধব, এলাকাবাসী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের মাঝে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া কৃতি শিক্ষার্থী নুফা কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশকাটা এলাকার এক শিক্ষক দম্পতির কন্যা। তার বাবা মো: জাহাঙ্গীর আলম ঢেমুশিয়া মোহছেনিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক, তার মা, ছাদিয়া মোস্তারী ওই এলাকার দরবেশকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা। তিনি প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও চিকিৎসক ডা: শামসুল আলমের নাতনী।
তানাজ্জাতুল ইসফার নুফারা দুই বোন। তার কোন ভাই নেই। ছোট বোন নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত। নুফা’র প্রথম স্কুল দরবেশকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তারপর মাধ্যমিক স্কুল কক্সবাজারের শ্রেষ্টতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠে ভর্তি হন। সে ছিল অত্যান্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি ছিল তার। এসএসসিতে জিপিএ ৫ সহ সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে পরবর্তীতে চট্টগ্রামে সরকারি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়। এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ সহ সাধরণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। এছাড়াও নুফা বেসরকারি অনেক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম হয়েছে। শিক্ষা জীবনে তার ধারাবাহিক ভাবে সাফল্যের জন্য তিনি সকল শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব ও শুভকাঙ্খীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তানাজ্জাতুল ইসফার নুফা জানান, শৈশব থেকে স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হব। আমার চেষ্টা, শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, অভিভাবকদের সহযোগিতা সব কিছুর সমন্বয়ে সাফল্য এসেছে। আমার জন্য বাবা-মা খুব কষ্ট করেছেন। তাদের প্রচেষ্টা আর পরিশ্রম কাজে লেগেছে। স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে, কেমন লাগছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তবে আজকে এই পর্যন্ত আসার পেছনে বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল সরকারি মেডিকেলে কলেজে চান্স পাওয়ার। নিজেরও প্রত্যাশা ছিল। সেটি পূরণ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। চিকিৎসক পেশা মানুষকে সেবা করার মোক্ষম সুযোগ। এ সফলতার পেছনে বাবা-মা’র পাশাপাশি দাদা-দাদি, চাচা-ফুফু, নানা-নানী এবং শিক্ষকদের অবদানের কারণে আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমি মহান সৃষ্টি কর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করছি।
তিনি জানান, তিনি দেখেছেন তার বাবা-মায়ের পরিশ্রম। সে পরিশ্রম সন্তানদের জন্য। তাই তিনি বাবা-মায়ের শ্রমকে সার্থক করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন বলে জানান। প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়েছেন। সময়কে কাজে লাগানো খুবই জরুরি। তার চেয়ে অনেক অগ্রসর পরিবারের সন্তানরাও ব্যর্থ হয়েছেন। এর কারণ তারা সময়কে যথাযথ কাজে লাগাননি। আর কিছু নয়। অনেক বড় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার। তিনি যেতে চান অনেক দূর। এজন্য সবার কাছে দোয়া চান তিনি।
নুফা’র বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে, খুবই ভালো লাগছে। আমরা শুধু ওর প্রতিভা বিকাশে সহযোগিতা করেছি। সবার কাছে আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাই সে যেন মানবিক ডাক্তার হয়ে এদেশের মানুষের সেবা করতে পারে। তার লেখাপড়ার পেছনে ও রেজাল্টের জন্য পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের অবদান রয়েছে। বিশেষ করে আমার আপা, স্নেহের দু’ভাইয়ের অকৃত্রিম প্রেরণা, শিক্ষকদের পরিশ্রম ও তাদের প্রচেষ্টার কারণে সে আজ এই পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে। অনেক কষ্ট করে হলেও মেয়ের ভবিষ্যৎ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। তার মেয়ে ভর্তিতে মেধা তালিকায় স্থান করে নেয়া এটা ভাবতেই তিনি পুলকিত, আনন্দিত ও গর্বিত বলে জানান।
চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নুরুল আখের বলেন, তানাজ্জাতুল ইসফার নুফা শিক্ষার্থী হিসেবে খুবই মেধাবী ছিল। সে পড়া-লেখার পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে ছিল পারদর্শী। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নুফা সবার কাছে অনুকরনীয় ও আলোকিত দৃষ্টান্ত। শিক্ষকদের অনুপ্রেরণার পাশাপাশি তার দৃঢ় মনোবলে এতদূর এগিয়ে গেছে সে। আমরা তার সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা করছি। উল্লেখ্য, কৃতি শিক্ষার্থী নুফা’র পুরো পরিবার সদস্যরা সকলেই উচ্চ শিক্ষিত।
তার নানা এ.বি.এম সাইফুদ্দীন ছিলেন সাহারবিল বিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক। তার ফুফু উম্মে মোখলেছা খানম রেশমা চকরিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তার বড় চাচা জাহেরুল হক একজন চাটার্ড একাউন্টেন্ট ও ছোট চাচা সাজেদুল হক একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তারা উভয় বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চপদস্থ কর্মরত রয়েছেন।