অধিকার বাস্তবায়নসহ ৭ দফা দাবি পুরণ না হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত, সুবিধা বঞ্চিত স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে মানববন্ধন ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দীর্ঘ ৩ বছর ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক কর্মরত এনজিও, আইএনজিও ও দাতা সংস্থাদের একচেটিয়া মনোভাবের কারণে স্থানীয় উচ্চ শিক্ষিত ও যোগ্যতা সম্পন্ন যুবকরা বঞ্চিত হয়ে আসছে।

স্থানীয়দের অধিকার পুন:উদ্ধারের দাবীতে পালংখালী অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃত্বে সর্বস্তরের জনসাধরণের অংশ গ্রহণে ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ কর্মসচি পালিত হয়। কর্মসূচি শেষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয় ও দপ্তর সমূহে ৭ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

১ সেপ্টম্বের (মঙ্গলবার) সকাল ৯টায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের থাইংখালী স্টেশনে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচীতে রাজনৈতিক, সামাজিক, সুশীল সমাজ, কৃষক-শ্রমীক জনতাসহ পালংখালীর ইউনিয়রে রোহিঙ্গাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রম্ত সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বক্তরা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার চাপে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১২ হাজার একরের অধিক বনভূমি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যা এখন বিরান ভূমিতে পরিনত হয়েছে। যার ফলে উখিয়া-টেকনাফের বনভূমি এখন শূণ্যের কোটায়। তাছাড়াও রোহিঙ্গাদের কারণে ফসলী জমি, ক্ষেত-খামার, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, সার্বিক নিরাপত্তা, সামাজিক অবক্ষয়, শ্রমবাজার ধ্বংস হয়ে পড়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে ও জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত উখিয়া-টেকনাফের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। শিক্ষার্থীদের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত এনজিও, আইএনজিও ও দাতা সংস্থার গাড়ি বহরের কারণে দীর্ঘ যানজটের ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিরাপদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। ৩ বছরে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলকায় সড়ক দুর্ঘনাটায় নারী, শিশু, ডাক্তারসহ ৪২ জনের অধিক প্রাণ হারান। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে সহস্রাধিক।

৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও, আইএনজিও ও দাতা সংস্থা গুলোর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মাত্রাতিরিক্ত আত্বীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের কারণে স্থানীয় উচ্চ শিক্ষিত, যোগ্যতা সম্পন্ন মেধাবী যুবক/যুবতীরা চাকরি থেকে বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবি সমূহ পূরণ করা না হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারী দেন বক্তরা।

রিদুয়ানুল আজিজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী, পালংখালী ইউনিয় আওয়াগী লীগের সভাপতি এম. মঞ্জুর, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাবিবুর রহমান, প্রভাষক ছৈয়দ নূর, এড. আব্দুল মালেক, অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিয়ার রবিউল হাসান, ছাত্রনেতা আনোয়ারুল হোসাইন সহ প্রমুখ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল গফুর নান্নু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, তাহিজুল আকতার জুয়েল, নুরুল কবির রানা, একমিনানুল হক, জসিম উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক লোকমান হাকিম, মো. তারেক, মো. হারুন,

অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির ৭ দফা দাবি সমূহ:

১. ইউএন (জাতিসংঘ) অর্গনাইজেশন বা এনজিওগুলো তাদের বাজেটের ৩০ শতাংশ স্থানীয়দের উন্নয়নে ব্যয় করার যে ঘোষণা দিয়েছে সেই অনুযায়ী কাজের সঠিক বাস্তবায়ন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

২. সরকারের নিদর্শনা অনুসারে রোহিঙ্গা প্রোগ্রাম এনজিওর চাকরিতে স্থানীয় জনগণের যে ৭০% কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ নং পালংখালী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. নিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল করতে হবে।

৪. মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করতে এনজিওদের বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে।

৫. স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কোটায় অথবা আওতাধীন করে হবে তার ম্যাপ/সীমানা নির্দিষ্ট করতে হবে।

৬. এনজিওতে চাকরির জন্য প্রতিটি অফিসে সরাসরি আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. ইউনিয়নের স্থানীয় জনসাধারণের জন্য আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে এবং ইমার্জেন্সি রোগীর জন্য ২৪ ঘণ্টা ফ্রি এম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়ায়, মানববন্ধনে, হুঁশিয়ারি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন