অভাবকে দূরে ঠেলে পানছড়ির তিন ভাইবোনের ধারাবাহিক সাফল্য
শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:
জেলার পানছড়ি উপজেলায় অভাবের সাথে যুদ্ধ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিজেদের জয়ী করে নিলেন তিন ভাইবোন। এই তিন মেধাবী ১নং লোগাং ইউপির অনিল পাড়া গ্রামের বর্তমানে পূজগাং মুখ এলাকার ধীরেন্দ্র মাস্টার পাড়ার কল্প রঞ্জন চাকমা ও পদ্মাসোনা চাকমার ছেলে বিশ্বান্তর চাকমা, জয়বর্ধন চাকমা ও মেয়ে প্রখরা চাকমা।
তিন ভাইবোনের ধারাবাহিক সাফল্যের খবর শুনে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিশ্বান্তর চাকমা ২০০৭ সালে কিষ্টমনিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি ২০১০ সালে পূজগাং মূখ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জে.এস.সিতেও ট্যালেন্টপুল বৃত্তি লাভ করে। অপরদিকে জয়বর্ধন ২০১০ সালে বনশ্রী শিশু বিদ্যানিকেতন থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে বৃত্তি ও ২০১৪ সালে একি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি লাভ করে প্রখরা চাকমা।
জানা যায়, তিন মেধাবীর পিতা কল্প রঞ্জন চাকমা একজন বেসরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও পদ্মাসোনা চাকমা একজন গৃহিনী। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতনের এই কর্মচারীর তিন ছেলে-মেয়ের ধারাবাহিক সফলতায় দিন দিন তার দুশ্চিন্তা বেড়েই চলছে। ছেলে বিশ্বান্তর এবারে খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজ থেকে দিবে এইচএসসি, জয়বর্ধন দিবে পূজগাং মুখ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পরীক্ষা ও মেয়ে পড়ে ৬ষ্ট শ্রেণিতে। তিনজনের যাবতীয় খরচ চালাতে গিয়ে মা-বাবা এখন দিশেহারা। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগুচ্ছে তিন মেধাবীর ভবিষ্যত জীবন।
এ ব্যাপারে পূজগাং মূখ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক বিজয় কুমার দেবের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ভাইবোন তিনজনই এ বিদ্যালয়ের ছাত্র। তারা খুবই মেধাবী। কিন্তু অভাবের সংসারে তাদের ঠিকমত শিক্ষা সামগ্রী যোগান দিতে পারছে না মা-বাবা। তাই তিনজনের সুন্দর ভবিষ্যত জীবন গড়ার লক্ষ্যে তাদের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার বলে তিনি মনে করছেন।
এ ব্যাপারে কল্প রঞ্জন চাকমা জানান, আমি একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও আমার তিন ছেলে-মেয়ের সফলতায় আমি গর্বিত। এ ব্যাপারে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদানের কথা ব্যক্ত করেন তিনি। বর্তমানে ওদের লেখা-পড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন এবং প্রতি মাসেই কিছু না কিছু টাকা ঋণ করছেন বলে জানান। আরো জানান ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলছে। এ মুহুর্তে তিনি সন্তানদের লেখা-পড়ার খরচ নিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন বলে অশ্রুসজল কণ্ঠে জানান।
অপর দিকে পদ্মাসোনা চাকমা জানান, বিত্তবানরা এগিয়ে না এলে আমার ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করানো সম্ভব হবেনা। তিনি সকলকে আর্শিবাদ ও দোয়ার পাশাপাশি তার ছেলে-মেয়ের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহবান জানান।
এলাকাবাসীরা জানান, কল্প রঞ্জন চাকমা ও পদ্মাসোনা চাকমা গর্বিত পিতা-মাতা। কল্প রঞ্জন চাকমা পূজগাং মুখ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হলেও তার তিন সন্তানই মেধাবী। তারা অত্র পূজগাং মূখ এলাকার গর্ব।