আয় বেড়েছে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার, শিক্ষা ও মামলায় শহিদুল ইসলাম, সম্পদে জাপার শেঠের

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ি সংসদীয়  আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. শহীদুল ইসলাম ভুঁইয়া ফরহাদ শিক্ষায় এগিয়ে থাকলেও মামলায় জর্জড়িত। অপর দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি’র নামে কোনো মামলা না থাকলেও গত পাঁচ বছরে কৃষি ও ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাতে তাঁর আয় বেড়েছে। বেড়েছে স্থাবর সম্পত্তি। পক্ষান্তরে জাতীয় পাটির(এ) মনোনীত প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের সম্পদের পাশাপাশি আয়ের খাত বেশি। তিন প্রার্থীর হলফনামা পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনীত সাবেক রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদ’র শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর। শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদের বাড়িভাড়া বাবদ আয় ছয় লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৫ টাকা। নিজের নামে সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত রয়েছে দুই লাখ ২০ হাজার ৮০০ টাকার। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২২ লাখ টাকা আর স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। একটি মোটরগাড়ির দাম ১২ লাখ টাকা। চাকরিজীবী স্ত্রীর বার্ষিক আয় পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৪০০ টাকা।

চট্টগ্রামে একটি দালানের দাম ৯৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছাড়াও অকৃষি জমির দাম ১১ লাখ ১৩ হাজার ৭৭১ টাকা। অন্যদিকে স্ত্রীর রয়েছে ৯ লাখ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি। ব্যবসায়িক পুঁজি পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

ফরহাদ’র নিজের নামে ৩৮ লাখ ৯৪ হাজার ৯০৮ টাকার পাশাপাশি স্ত্রীর নামে ২৫ লাখ ছয় হাজার ৯৯০ টাকা নগদ রয়েছে।

ফরহাদ ১১ মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে তিনটি মামলাসহ বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা বিচারাধীন।

খাগড়াছড়ি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির নামে কোনো মামলা নেই। তবে গত পাঁচ বছরে কৃষি ও ব্যবসা থেকে আয় বেড়েছে। এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেয়া হলফনামায় কোনো ধরনের ধারদেনা না থাকলেও পাঁচ বছরে পরে দায়-দেনাও বেড়েছে তার। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি’র পূবালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকে ১ কোটি টাকা দায় রয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক।

দশম সংসদ নির্বাচনকালীন হলফমানায় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি’র  কৃষি থেকে আয় দুই লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৫ টাকা এবং ব্যবসা থেকে ২০ লাখ টাকা। পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে কৃষি থেকে তিন লাখ এবং ব্যবসা থেকে ৫৫ লাখ টাকায়। বেড়েছে স্থাবর সম্পত্তি।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির ৫ বছর আগে অকৃষিজমি ছিল ৬০ একর, যা বেড়ে হয়েছে ৮৪ একর। বর্তমান এর বাজারমূল্য ৫৫ লাখ টাকা। হলফনামায় একটি নির্মাণাধীন বাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে ৬৫ লাখ।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির স্ত্রীর নামে নির্মাণাধীন বাড়ির মূল্য ২৫ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের ২৮ ভরি স্বর্ণের মুল্য দেখানো হয়েছে ১২ লাখ ১০ হাজার টাকা। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির দুটি প্রাইভেটকার ও একটি ল্যান্ড ক্রুজারের দাম দেখানো হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। তার নগদ টাকা রয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর স্ত্রীর রয়েছে তিন লাখ টাকা।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের  পরিমাণ ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ২২ লাখ টাকা।

স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে ১৪ লাখ টাকা, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের  চেয়ারম্যান হিসেবে বছরে সম্মানী থেকে আয় ১২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে চাকরি বাবদ স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬৪ টাকা।

স্ত্রীর নামে পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় পত্রে বা স্থায়ী আমানতের বিনিয়োগ আছে ১৪ লাখ টাকা।

সম্পদের পাশাপাশি আয়ের খাত বেশি জাতীয় পাটির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের। সোলায়মান আলম শেঠের শিক্ষাগত যোগ্যাতা আইকম (উচ্চ মাধ্যমিক)। তবে তার নামে কোনো মামলা নেই।

পেশায় ব্যবসায়ী সোলায়মান শেঠ বাড়িভাড়া থেকে বছরে আট লাখ ৬৪ হাজার, ব্যবসা থেকে আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৫৯ টাকা এবং বন্ড, ঋণপত্র খাত থেকে পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকা আয় করেন।

তার নগদ টাকার পরিমাণ এক কোটি ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা।  আর বিভিন্ন ব্যাংকে জমা আছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৩৫৪ টাকা। এছাড়াও সম্মানী ভাতা বাবদ তার বার্ষিক আয় ১২ লাখ টাকা।

সোলয়মান আলম শেঠের চারটি গাড়ির মূল্য হিসেবে ৬১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮০ টাকা, অরেজিস্ট্রিভুক্ত ৬টি কারের দাম এক কোটি ৭৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ও একটি মারসিডিজ কারের দাম ৭৬ লাখ টাকা বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

চট্টগ্রাম এবং খাগড়াছড়িতে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত অকৃষি জমির দাম দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি চার লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ টাকা। অন্যদিকে বিভিন্ন ব্যাংকে চার কোটি ৩৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩৩ টাকা দায় দেখিয়েছেন সোলায়মান আলম শেঠ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন