ইউপিডিএফ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলো : গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার

fec-image

খাগড়াছড়ির গুইমারায় ইউপিডিএফ সমর্থিত কয়েকটি সংগঠনের তাণ্ডব ও রামসু বাজারে সহিংসতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আবুল কালাম শামসুদ্দিন রানা বলেছেন, খাগড়াছড়িতে একটা অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। ইউপিডিএফ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো জুম্ম-ছাত্র-জনতার ব্যানারে এই চেষ্টা করে। তারা একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিলো। তারা এটা করতে সফল হয়নি। আমাদের সেনাবাহিনী সহ নিরাপত্তা বাহিনী যারা আছেন তারা তাদের কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমন করতে পেরেছে।’

বাংলা এডিশন নামে একটি নিউজ চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার এসব মন্তব্য করেন। ৪ অক্টোবর অনলাইনে বাংলা এডিশন খাগড়াছড়ি ও গুইমারা সহিংসতার ওপর ওই সেনা কমান্ডারে সাক্ষাৎকারসহ একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রচার করে।

গুইমারায় ইউপিডিএফের সহিংসতা সম্পর্কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিবৃতি সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর ইউপিডিএফ ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকাল থেকে খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সাধারণ জনগণকে উস্কে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে গুইমারা-খাগড়াছড়ি রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে দশটায় ইউপিডিএফ কর্মী এবং সন্ত্রাসীরা এলাকার বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। এই পর্যায়ে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ইট-পাটকেল, গুলতি ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালায়। এতে সেনাবাহিনীর ৩ জন অফিসারসহ ১০ জন সদস্য আহত হন। একই সময় তারা রামগড় এলাকায় বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করে এবং বিজিবি সদস্যদের আহত করে। সংঘর্ষ চলাকালীন আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে রামসু বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪/৫ বার অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত পাহাড়ি, বাঙালি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে আনুমানিক ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে সংঘর্ষে লিপ্ত এলাকাবাসীর মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়। এমতাবস্থায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর টহল দল দ্রুত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করার লক্ষ্যে উক্ত এলাকায় যায়। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সশস্ত্র দলটি দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। সমসাময়িক সময়ে রামসু বাজার এবং ঘরবাড়িতে ইউপিডিএফ (মূল) এর বহিরাগত দুষ্কৃতিকারীরা অগ্নিসংযোগ করে এবং বাঙালিদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রামসু বাজার এবং গুইমারা এলাকায় অতিরিক্ত সেনাদল নিয়োগ করা হয় এবং বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের গুইমারা সহিংসতার ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি কাজ করছে। ৩০ সেপ্টেম্বর গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি জানান জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।

জানা যায়, খাগড়াছড়ির গুইমারার রামসু বাজারে সম্প্রতি সন্ত্রাসীদের হামলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী। ৩ অক্টোবর সকালে গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আবুল কালাম শামসুদ্দিন রানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দোকান, মালামাল ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি ঘুরে দেখেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজখবর নেন। পরিদর্শন শেষে গুইমারা রিজিয়নের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১০ লাখ টাকা অনুদান বিতরণ করেন।

এ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আবুল কালাম শামসুদ্দিন রানা জানান, চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ২০ লাখ টাকার অনুদান অচিরেই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

তিনি স্থানীয়দের উদ্দেশে বলেন, ‘রামসু বাজার ও আশপাশের এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা আমাদের অগ্রাধিকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি অপপ্রচার ও স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা প্রভাবিত না হওয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এই সেনা কর্মকর্তা আরো আশ্বাস দেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও বাজার পুনর্গঠনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি, গুইমারা, গুইমারা রিজিয়ন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন