ঈদে পর্যটক শূন্য থাকবে রাঙামাটি

fec-image

করোনায় পুরো পৃথিবী স্তব্দ। স্তব্দ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন। চারদিক কান্নার সুর। বাড়ছে স্বজন হারানোর বেদনা। সব জায়গায় চলছে অঘোষিত লকডাউন। মানুষ বাঁচতে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী হয়েছে। করোনার এই প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে আতঙ্ক।

আর সারাদেশের ন্যায় পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতেও করোনার ভয়াবহতা ছুঁয়ে গেছে। জেলার সকল প্রকার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। মানুষ বিনা কারণে ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

যান চলাচল বন্ধ রয়েছে, বন্ধ রয়েছে দোকান-পাট। তবে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কিছু শপিংমল সীমিত আকারে খুলেছে তাও আবার বিকেলের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যান চলাচল বন্ধ থাকায় এবং করোনার আতঙ্কের কারণে এইসব শপিংমলে নেই কোন ক্রেতা। ব্যবসায়ীরা বেকার সময় পার করছে।

এদিকে আসছে ঈদুল ফিতর। আর ঈদকে সামনে রেখে পাহাড়ি এলাকা নতুন রূপে সাজে। পাহাড়ের পর্যটন স্পটগুলোকে সাজিয়ে তোলা হয় নব রূপে। কিন্তু এইবার বৈশ্বিক করোনা সব পরিকল্পনা কেড়ে নিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে আনন্দ উল্লাস। এই বছর রাঙামাটিতে কোন পর্যটকের আগমন ঘটবে না। পর্যটকদের পদচারণায় মুখোরিত হবে না পাহাড়ি শহর রাঙামাটি।

তাই পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বেকার সময় পার করছে, গুণছে লাখ লাখ টাকার লোকসান। একদিকে তাদের ব্যাংক ঋণের বোঝা অন্যদিকে ব্যবসা বন্ধ সব মিলে নিদারূণ সমস্যার মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে তারা।

রাঙামাটি বোট মালিক সমিতির সভাপতি রমজান আলী বলেন, করোনার কারণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে রাঙামাটিতে পর্যটক আসা বন্ধ রয়েছে। প্রায় চারমাস বন্ধ থাকায় আমরা যেমন বোট মালিকরা কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে তেমনি বোটের শ্রমিকরা তীব্র কষ্টে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বোট মালিকদের মধ্যে অনেকে ব্যাংকের নিয়ে বোট ক্রয় করে পর্যটন ব্যবসায় নেমেছে। কিন্তু হঠাৎ করে এমন দুর্দশা নেমে আসবে তারাও এমনটি ভাবেননি। ঋণের বোঝায় তারা এখন জর্জরিত। আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় তাদের মাথায় বাজ পড়েছে।

এছাড়া বোটগুলো বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। আবার বোটগুলোকে সচল রাখলে পোড়াতে হচ্ছে জ্বালানী। যে কারণে আয় না থাকলেও ব্যয় বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আবার এই ঈদে পর্যটক আগমন না করার কারণে তারা বড় একটি আয় থেকে বঞ্চিত হবে বলে যোগ করেন।

তিনি জানান, সীমিত আয়ের মানুষ হওয়ায় আমরা আমাদের বোট চালক এবং শ্রমিকদের তেমন কোন সহযোগিতা করতে পারছি না। শ্রমিকদের সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসনকে এব্যাপারে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে যা দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে তো সারামাস চল যাবে না। যে কারণে শ্রমিকরা চরম বিপাকে পড়েছে।

রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দীন সেলিম বলেন, প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের সময় পর্যটক বরণের জন্য আমরা হোটেল-মোটেলগুলোকে নবরূপে সাজিয়ে তুলি। কিন্তু এই বছর করোনার ভয়াবহতায় আমাদের নেই কোন কাজ। কারণ পর্যটক আসবে না এই বছর।

হোটেলের শ্রমিকরা বেকার সময় পার করছে। কিছু কিছু শ্রমিক চলে গেলেও বেশকিছু শ্রমিক আমরা ধরে রেখেছিলাম ঈদের জন্য। মনে করেছিলাম ঈদেও আগে করোনা বিদায় নিবে। কিন্তু না করোনা আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। যে কারণে ধরে রাখা শ্রমিকদের অর্ধেক বেতন দিয়ে আমাদের দেখতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা হোটেল মালিকরা পর্যটক দিয়ে প্রতি বছরে কয়েককোটি টাকার ব্যবসা করি। কিন্তু এই বছর শূন্যহাতে আমাদের থাকতে হবে। গুণতে হচ্ছে কোটি টাকার লোকসান।

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন এর ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে সারা বছর পর্যটক থাকে। কিন্তু পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহাসহ নানা দিবসে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু করোনার কারণে আমরা প্রায় চারমাসের মতো ব্যবসা করতে পারিনি।

ম্যানেজার সৃজন বলেন, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে মাস প্রতি ৩৫লাখ টাকা আয় করি, জুন, জুলাই এবং আগষ্ট মাসে কিছুটা বেড়ে মাস প্রতি ৪৫লাখ টাকা এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত মাস প্রতি ৫৫লাখ টাকার ব্যবসা করি। এই বছর আর ব্যবসা হবে না। কারণ করোনার ক্রান্তিকালের দিন আরও বেড়ে যাচ্ছে। এই বছর সরকার কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।

তিনি জানান, যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয় তাহলে পর্যটন করপোরেশন ক্ষতি পুষিয়ে উঠার চেষ্টা চালাবে। চেষ্টা চলবে সরকারের আয়ের পরিধি বাড়াতে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, পর্যটন, রাঙ্গামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন