উত্তর রাখাইন থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করছে মিয়ানমার জান্তা

fec-image

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহীদের সাথে চলমান লড়াইয়ে পরাজয় বুঝতে পেরে জান্তা বাহিনী সৈন্যদের প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত রাখাইনের উত্তরাঞ্চল থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের পাশাপাশি জান্তা বাহিনী দক্ষিণে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বৃদ্ধি করেছে। রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে গত কয়েক দশক ধরে লড়াই করে আসা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) সোমবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোববার রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় মাইবোন শহরের দুটি পাহাড়ি ঘাঁটি থেকে সৈন্যদের হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নিয়েছে জান্তা বাহিনী। নিরাপত্তার স্বার্থে ওই সৈন্যদের রাখাইনের দক্ষিণাঞ্চলে পাঠানো হয়েছে।

এএ বলেছে, জান্তা বাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিশ্চিতভাবে হেরে যাবে। যে কারণে আমরা যে শহরগুলো দখল করার চেষ্টা করছি, সেখানকার সামরিক ফাঁড়ি ও পাহাড়ি ঘাঁটি পুড়িয়ে দিয়ে সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে জান্তা।
আরাকান আর্মির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মাইবোনের পাহাড়ের চূড়ার পয়েন্ট ৪০২ ও ৪০৮ এ জান্তা সেনারা ফাঁড়ির ভেতরে নিজেদের অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং কামান ধ্বংস করেছে।

হিন খা র‌্য গ্রাম থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ফাঁড়িগুলো থেকে জান্তা সৈন্যরা কেবল বহন করতে পারে, এমন সব অস্ত্র নিয়ে গেছে। উত্তর রাখাইনের দুটি ফাঁড়ি থেকে সৈন্যদের দক্ষিণ রাখাইনের অ্যান শহরে জান্তার পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। আরাকান আর্মি বলেছে, জান্তা সৈন্যদের দুটি ঘাঁটি থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চারবার সেখানে হেলিকপ্টার অবতরণ করেছে।

বর্তমানে রাখাইনের দক্ষিণের রামরিতে বোমাবর্ষণ শুরু করেছে জান্তা সৈন্যরা। সেখানে স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ থেকে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। এর আগে, শনিবার জান্তার গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় ৪ নম্বর কিং তায়ে ওয়ার্ডের অন্তত ১৫০টি বাড়ি পুড়ে গেছে।

এ ছাড়া থিম তাউং প্যাগোডা পাহাড়ে অবস্থানরত জান্তা সৈন্যরাও রোববার রামরি শহরে গোলাবারুদ নিক্ষেপ করেছে। রাখাইনের অন্যান্য এলাকাতেও আরাকান আর্মির সদস্যদের সাথে জান্তা সৈন্যদের সংঘর্ষ চলছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় রাখাইনে সংঘর্ষ কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছে আরাকান আর্মি। রাখাইনে অবস্থিত জান্তার সব সামরিক ঘাঁটি ও তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে আরাকান আর্মি। রাখাইনের এই বিদ্রোহীগোষ্ঠী বলেছে, জান্তা সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করা পর্যন্ত হামলা চলবে।

গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ)। পিডিএফভুক্ত তিন গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই তিন গোষ্ঠী একত্রে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামেও পরিচিত।

প্রায় চার মাসের সংঘাতে মিয়ানমারের অন্তত ৪০টি শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ শান প্রদেশসহ অন্তত ৫টি প্রদেশ দখলে নিয়েছে পিডিএফ। সম্প্রতি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশ দখলের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে আরাকান আর্মি

সূত্র: দ্য ইরাবতি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন