একটি সেতু হলেই বদলে যেতে পারে মানিকছড়ির পাঁচ গ্রামের চিত্র!

IMG_6536

মো. ইমরান হোসেন, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি):

মানিকছড়ির উপজেলা সদরের বুক চীরে প্রবাহিত ‘খালটির’ পূর্ব পাশে বসবাসরত পাঁচ গ্রামের ছয় সহস্রাধিক মানুষ বর্ষাকালে কার্যত গৃহবন্দী! কারণ খালের পূর্ব পাড়ের জনসাধারণের পারাপারে ব্রিজ বা সেতু নেই। ফলে ওই অঞ্চলের স্কুল শিক্ষার্থী এবং কৃষকরা বর্ষাকালে হাঁট-বাজার কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারে না।  এ নিয়ে দু’দশকেও পূরন হয়নি জনপ্রতিনিধিদের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মধ্যবর্তী এলাকার পূর্বাঞ্চলের চইক্কাবিল, মলঙ্গীপাড়া, লাপাইংদ, গাইদং পাড়া, হাফছড়ি এলাকার ছয় সহস্রাধিক লোকজন উপজেলা সদরে যাতায়াত, হাঁটবাজার, চিকিৎসা এবং স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়ার একমাত্র ভরসা ‘ধর্মঘর-চইক্কাবিল সড়ক’। উক্ত সড়কের একমাত্র মানিকছড়ি খালের ওপর কোন সেতু বা ব্রিজ না থাকায় ওই এলাকার আট সহস্রাধিক লোকজন বর্ষাকালে চরম দূর্ভোগে পোহাতে হয়। কেননা ওই এলাকায় কোন বাজার বা স্কুল নেই! ফলে স্কুল-কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীরা বর্ষাকালে সাঁতরিয়ে খাল পাড় হয়ে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা সম্ভব হয় না।

স্থানীয়রা বারবার স্বেচ্ছাশ্রমে কাঁঠের সাঁকো তৈরি করলে বর্ষার পানি স্রোতে তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। ফলে জনগনের দুঃখ যেন শেষ হচ্ছে না! জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচন এলে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটি পরে লাল ফিতায় বন্দি হয়ে যায়। চলতি বর্ষার মৌসুমে উক্ত এলাকার শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে যেতে না পারায় প্রত্যাশিত শিক্ষা বঞ্চিত রয়েছে।

খালটির বাস্তব অবস্থা ও জনদূর্ভোগ সরেজমিনে দেখতে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় খালের পাড়ে গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা বুক সমান পানি দিয়ে কৃষি পণ্য নিয়ে বাজারে আসছে। আর শিক্ষার্থীরা বই, খাতা মাথায় নিয়ে খাল পাড় হচ্ছে। এ সময় কথা হয়, লাপাইদং গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থী থুইঅংচিং মারমা ও উষা মারমার সাথে।

সে জানায় এ সড়কের ৫টি গ্রামে শতাধিক শিক্ষার্থী বর্ষাকালে স্কুলে আসতে পারে না। আমরা অতিরিক্ত পোষাক সাথে নিয়ে খাল পাড় হচ্ছি। এভাবে স্কুলে আসা কষ্টকর! কেউ আমাদের এ খালের ওপর সেতু বা ব্রিজ করে দিচ্ছে না। ফলে আমরা বছরের পর বছর এভাবেই যাতায়াত করছি।

লাপাইদং পাড়ার কার্বারী অংগ্য মারমা আক্ষেপ করে বলেন, উক্ত খালের পূর্বপাশে মানুষ বসবাস করছে বলে কেউ মনে করে না! কোন জনপ্রতিনিধি এসে খোঁজ খবর নিতে আমরা দেখি না। খালের ওপর সাঁকু না থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বর্ষাকালে ক্ষেতে পচে নষ্ট হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা ওই সময়ে স্কুল-কলেজে যেতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ধর্মঘর-চইক্কাবিল সড়কটি সংস্কার করেছি। উক্ত সড়কে যাতায়াতরত কৃষক ও স্কুল শিক্ষার্থীরা বর্ষাকালে খাল পাড় হতে চরম বেগ পেতে হয়। তাই সম্প্রতি পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডে ব্রিজ নির্মানার্থে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ প্রদান করে তাহলে সেটি জনগনের নিঃসন্দেহে উপকারে আসবে। এ ব্যাপারে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন