এমপিও না হওয়ায় কাপ্তাইয়ের কেআরসি স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষোভ

fec-image

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনায় ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জেলা পর্যায়ে খ্যাতির শীর্ষে থাকা ঐতিহ্যবাহী কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয় এমপিওভুক্তি না হওয়ায় শিক্ষক-অভিবাবকদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। ২০০২ সালে ‘কেআরসি লি.’ এর পাশাপাশি বিদ্যালয়টিকেও পে-অফ করার পর স্বেচ্ছাশ্রমেই বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন শিক্ষকরা। কিন্তু সর্বশেষ প্রকাশিত এমপিও তালিকা সকল যোগ্যতা সম্পন্ন ৩৫ বছরের পুরাতন এই বিদ্যালয়টিকে যুক্ত না করায় শীঘ্রই পাঠদান থেকে বিরত থাকার কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানান বিদ্যায়টির ইংরেজি শিক্ষক মো. রফিক আলম।

কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আলম বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি অধ্যুষিত অঞ্চল সীতা পাহাড়, ফুট্টছড়ি, ডলুছড়ি, মিতিঙ্গাছড়ি সহ প্রভৃতি এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র শিক্ষার্থীরাই বিশেষত এই বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ৮৪ সাল থেকে রাঙামাটি জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক বৃত্তি, জুনিয়র বৃত্তি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম স্থানের পাশাপাশি সহপাঠ ক্রমিক কার্যক্রমেও স্কুলটির ছাত্রছাত্রীরা জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি জামাত জোট সরকার ২০০২ সালে বিদ্যালয়টির সকল শিক্ষক কর্মচারীদের পে-অফ করার পর শিক্ষকরা বিনা বেতনে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে তাদের নৈতিক দায়িত্ব থেকে না সড়ে স্কুলের পাঠদান চালিয়ে যান। বিগত ১৭ বছর হয়ে গেলেও অদ্যবধি স্কুলটির কোন কুলকিনারা না পাওয়ায় আর্থিক দুঃখ কষ্টের মধ্যে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে আমাদের। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের গঠিত মানদন্ডের বেশি শর্ত পূরণে সফল পর্যাপ্ত অবকাঠামো সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়টিকে এমপিও ভুক্ত করা এখন অত্রাঞ্চলের সাধারণ মানুষ তথা শিক্ষকদের প্রাণের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী শিক্ষক মো. রফিক আলম বলেন, বর্তমানে শিক্ষা বান্ধব সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রায় ২৭৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্তির ঘোষণা করা হলেও দুর্ভাগ্যবশত কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম এমপিও’র তালিকাভুক্ত হয়নি। এমপিও না হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে যে কোন সময় বিদ্যালয়ের পাঠদান থেকে বিরত থাকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। গত ২৬ই অক্টোবর এমপিও ভুক্তি না হওয়ার প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষনা দিলেও উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাসে তা স্থগিত করার কথা জানান তিনি। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৪’শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।

বিদ্যালয়টির সিনিয়র শিক্ষিকা মন্দিরা বড়ুয়া বলেন, পরিবার পরিজনকে এত বছর যে আশার বাণী শুনিয়েছি এমপিও ভুক্তির ঘোষণার মাধ্যমে তা মিথ্যা প্রতিফলিত হয়েছে। অনেক শিক্ষক কর্মচারীদের সংসারে অশান্তি ও অনিশ্চয়তা কথা জানতে পেরেছি।

এই বিষয়ে বিদ্যালয়টি শিক্ষক কাজী সালেহ আহম্মদ, সমাপ্তি বড়ুয়া শেখ ফরহাদ, নূর নাহার, আমেনা আক্তার, রুপশ্রী চাকমা সঙ্গে কথা বললে তারা প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং আপামর জনসাধারণের আশা আকাঙ্খার শেষ আশ্রয়স্থল আপনি (প্রধানমন্ত্রী)। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলের শিক্ষার মানোন্নয়নে বিদ্যালয়টিকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে একে এমপিও ভুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এগিয়ে যাবে শিক্ষাখাত, সমৃদ্ধতর হবে বাংলাদেশ।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, ঐতিহ্যবাহী কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয় এমপিও ভুক্তির দাবি রাখে। আমরা এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখবো। অত্রাঞ্চলের শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশাসনিকভাবে সর্বাত্বক সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন তিনি।

ফটো ক্যাপশনঃ ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন