এশিয়া কাপ টি টুয়েন্টি ফাইনাল: প্রবাসীদের ভাবনা

টি টুয়েন্টি এশিয়া কাপ – ২০১৬ ফাইনাল আজ রবিবার। ঢাকার মাঠে খেলবে বাংলাদেশ বনাম ভারত। স্বাভাবিকভাবে ১৬ কোটি বাংলাদেশীর সকলে দেশে বা বিদেশে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে রয়েছে তারা উদ্বেলিত। বাংলাদেশের খেলা দেখতে, বিজয় প্রত্যাশায় দেশের সমর্থকদের মতো প্রবাসী বাংলাদেশীরাও প্রতীক্ষার প্রহর গুণছে নানা ভাবনায়। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের এ ভাবনার কথা জানিয়েছেন পার্বত্যনিউজকে। তাদের সেসব ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন পার্বত্যনিউজের প্রধান উপদেষ্টা মেহেদী হাসান পলাশ

এখন সময় যুদ্ধ জয়ের- সাইফুল আজম সিদ্দিকী

saiful 2

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জেনারেল মোটর্সের বাংলাদেশী অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল আজম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, মার্চ মাস মানেই অধিকার আদায়ের মাস। বুক উঁচিয়ে যুদ্ধে যাবার মাস। যুদ্ধ থেকে জয় আদায়ের মাস। ২০১৪ সালের মার্চ মাসের ১৯ তারিখে মেলবর্ন ক্রিকেট মাঠে যা ঘটেছিল তাতে সারা বিশ্ব স্তব্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিদায় নিয়েছিল খালি হাতে। আমরা হারিনি, হেরেছিল ক্রিকেট। আমাদের বুকে হয়েছিল অনেক রক্তক্ষরণ। ওই রক্তক্ষরণ থামাতে আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা ইতোমধ্যে যা দেখিয়েছে তাতে বাংলাদেশিরা আজ গর্বিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে দেখলে বিশ্বের সব দলের কাঁপুনি চলে আসে। এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট আনন্দে নেচে উঠবে। এ জয় হবে আমাদের কোটি প্রাণের উচ্ছাসের। এই জয় হবে অহংকার চুরমার করার, লাখ শহীদের সম্মানে। আমাদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে।

মেলবোর্নের গ্যালারিতে হয়ত লাল সবুজের গর্জন অনুপাতে কম ছিল। তবে এবার দেখাবো বাঘের গর্জন, তোমরা মাঠে গর্জে ওঠো, সারা বাংলার ১৬ কোটি গর্জন এভারেস্টে প্রতিধ্বনিত হয়ে কাঁপিয়ে দেবে সারা বিশ্ব । মিরপুর থেকে মিশিগান, স্টেডিয়াম থেকে ড্রয়িংরুম প্রতিক্ষণ থাকবে আমাদের দখলে। সৌম্য কিম্বা তামিম, আল আমিন কিম্বা তাসকিন, সাব্বির বা মুশফিক, সাকিব কিম্বা রিয়াদ, যে কেউ জ্বলে উঠলেই প্রতিবেশীর কাঁপুনি শুরু হয়ে যাবে। বিবিসি বাংলার সংবাদ শিরোনামের মত বলছি -‘বাংলাদেশ দলকে উপেক্ষা করলে বুড়িগঙ্গায় যেয়ে পড়তে হবে’ ।

এ জয়ে লেখা হবে ইতিহাস, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড যে ইতিহাস লেখা হয়নি। রেকর্ড ভাঙা-গড়া আর রানের বানে ভেসে যাবে প্রতিবেশীর দাম্ভিকতা। জয় হবে লাল সবুজের, জয় হবে বাংলা মায়ের।

বাংলার ক্রিকেট আনন্দের অফুরন্ত বহিঃপ্রকাশ- প্রকৌশলী রিমন হাসান

rimon 2

মেক্সিকোর কন্টিনেন্টাল অটোমোটিভ কর্পোরেশনের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার সাড়ে চার মিলিয়ন মানুষের শহর গুয়াদালাহারা, মেক্সিকোতে আমার জানা মতে আমিই একমাত্র বাংলাদেশী। অনেক খুঁজলাম কিন্তু কাউকেই পেলাম না বাংলাদেশী, ভারতীয় অনেক আছে, আর কিছু পাকিস্তানিও আছে, কিন্তু বাংলাদেশী নেই ।

দেশের পরিবার বা বন্ধু আর আমেরিকার বাংলাদেশী বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ শুধু ফোনের মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে আজকাল দেশের সব খবরাখবর পাই ফেইসবুকে। দেশের সকলের অবস্থা জানা যায় ফেইসবুক দেখে। দেশের হৃদস্পন্দন শোনা যায় সবার ফেইসবুক পোস্ট দেখে। সেই হৃদস্পন্দন সবচেয়ে জোরে শোনা যায় তখন যখন সেই হৃদস্পন্দন এক তালে বাজে? যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিজয়ী হয়।

অনেক বিষয়েই আমরা বাংলাদেশীরা একমত হতে পারি না। সেটা হোক রাজনীতির বিষয়ে বা পহেলা বৈশাখ উদযাপন বা নিউ ইয়ার উদযাপন, এমনকি ঈদ উদযাপন বিষয়েও দেখেছি মতভেদ ! কিন্তু এক বিষয়ে সব বাংলাদেশী একইসাথে নির্দ্বিধায় আনন্দে মাতে ,সেটা হলো বাংলাদেশী ক্রিকেট দলের বিজয়।

এত এত পোস্ট, এত আনন্দের অফুরন্ত বহিঃপ্রকাশ শুধু বাংলাদেশ জিতলেই দেখা যায়। দেশে না থেকেও, দেশের মানুষ না দেখেও কিছুটা হলেও দূরত্বটা কম মনে হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট দল যখন খেলে তারা শুধু নিজের জন্যে খেলে না। রাস্তার খেট়ে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, পতাকা হাতে দু’বছরের শিশু থেকে শুরু করে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা প্রবীণ, হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশী, সবার জন্যে খেলে।

আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের প্রতিটা খেলোয়াড় এই কথাটা জানে, আর জানে বলেই তারা প্রতিটা ম্যাচ এ প্রাণ দিয়ে খেলে। তাদের কঠিন পরিশ্রম আর দেশপ্রেমের ফল আমরা খেলার পর খেলাতে দেখে যাচ্ছি। অনেক বাঁধা বিপত্তি টপকে আমাদের ক্রিকেট দল উপহার দিচ্ছে আমাদের অনেক অনেক আনন্দ। সেই আনন্দ আশা করি আরো হাজার গুণ বেড়ে যাবে এই রবিবারে। যখন আনন্দে সোফা থেকে লাফ দিয়ে বলে উঠব- “বাংলাদেশ”! আর আবার আনন্দে সামিল হব ফেইসবুকে, ফোনে।

মানসিক শক্তিতে জয় আমাদের হবে- সৈয়দ মোঃ জাফরী আল ক্বাদরী(পিএইচডি)

zef 2

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অবস্থিত জেনারেল মটরর্সের হাইব্রিড এন্ড ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল সেকশনের পাওয়ার ইলেক্ট্রনিক্স এনালাইসিস স্পেশালিস্ট জয় পরাজয় একটা ফলাফল হলেও খেলার মূল ব্যাপার হল কিছু প্রসেস। খেলার মাঝের সেই ছোট ছোট প্রসেসগুলো আমার চেয়ে আপনাদের খুব ভাল জানা। আমি চাই খেলায় ফলাফল যাই হোক বাংলাদেশের সব খেলোয়াড়রা সেই প্রসেসগুলো ঠিক ঠাক মত করার চেষ্টা করেছে সেটা দেখতে। নিজেদের এই সজাগ দৃষ্টি সবাইকে দেখাতে পারলে মানসিক শক্তিটা প্রকাশ পায়, সাথে সাথে পেশাদারিত্বও ফুটে উঠে। আমাদের অধিনায়কের মত বাকি সবারও এটা বুঝতে হবে। বাংলাদেশ এখন আর যেন তেন দল নয়, সবার জন্য উদাহরণ, বিদেশে আমরা যারা থাকি তাদের জন্য এটা কত বড় প্রাপ্তি বলে বুঝানো যাবে না।

ভারত-পাকিস্তানের নাগরিকেরা আমাদের ক্রিকেটের আলোচনায় এখন সমীহ করে কথা বলে। বুকটা ভরে যায় তখন, কৃতজ্ঞতায় চোখে জল আসে। ধন্যবাদ আপনাদের, সারারাত খেলা দেখে দিনের বেলায় অফিসে গিয়ে ঢুলু ঢুলু চোখে মিটিং করা সার্থক আমার। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে শুভকামনা।

উৎসব পাগল জাতির স্বপ্ন এশিয়া কাপ- মাহমুদুল খান (আপেল)

apple 2

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের কম্পিউটার স্পেশালিস্ট মাহমুদুল হক খান বলেছেন, এ ভূখণ্ডে বাঙ্গালীসহ আরও ছোটখাট যে কয়েকটা জাতি-উপজাতি বসবাস করে সবাই মিলেই আমরা বাংলাদেশী, আর বরাবরই জাতি হিসাবে বাংলাদেশীরা উৎসব পাগল জাতি। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উৎসব করবার মতো উপলক্ষ তেমন কিছু না থাকলেও জাতীয় উৎসব গুলি বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবেই পালন করি আমরা। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পালন করি নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব গুলি, আর জাতীয় উৎসব যেমন ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন ইত্যাদি পালন হয় জাতীয়ভাবে। ইদানীং যোগ হয়েছে ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি ইত্যাদি যেগুলি পালন হয় সামাজিকভাবে।

এই সমস্ত উৎসবে যেভাবে বাধভাঙ্গা প্রাণের উচ্ছাস দেখা যায় সেটা সত্যিই বিশ্বে বিরল। উন্নত দেশগুলিতে যেখানে উৎসব পালন হয় ঘরোয়াভাবে, সেখানে আমরা সেটা পালন করি সম্মিলিত ভাবে। জাতি হিসাবে আমরা পরিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ একটি জাতি হলেও একটা অভাব আমাদের অনেকদিন থেকেই ছিলো, সেটা হলো আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আমাদের পরিচিতি এবং উৎসবের উপলক্ষ, যেটা পরিপূর্ণ করেছে আমাদের ক্রিকেট দল। বিশ্বের বাঘা বাঘা দলগুলিকে ঘরাশায়ী করে এক সময় চমক দিতাম, এখন আমরা প্রতিযোগিতার অন্যতম সেরা শক্তি, আর কেউ বলে না আন্ডার ডগ, দু’দিন পরে হয়তো বলবে ক্রিকেট জায়ান্ট।

ক্রিকেট এখন আমাদের আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের সবচেয়ে বড় উৎসব করবার উপলক্ষ! নানান রাজনৈতিক-সামাজিক ইসুতে যখন সারা দেশ অস্থির, তখন ক্রিকেট গড়ে দেয় ঐক্যের বন্ধন, এনে দেয় প্রশান্তি! এই উৎসব আবার দেশের সীমা পেরিয়ে ছড়িয়ে যায় বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মাঝেও! শতব্যস্ততার মাঝেও হাতের সব কাজ একটু তাড়াতাড়ি সেরে নিয়ে একটুখানি ফুরসৎ বের করে নিয়ে সামিল হই এই মহাউৎসবে।

কখনও কিছু বন্ধু মিলে, আবার কখনও পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে খেলা দেখার আনন্দে মেতে ওঠে। একটা সময় ছিলো, যখন নিজের দেশ প্রতিযোগিতায় না থাকায় অন্য কোন দল বা দেশ কে সমর্থন করতো সবাই, কিন্তু সেখানে থাকতো না কোন সতস্ফুর্ততা, আর নিজের দেশ স্বয়ং যখন প্রতিযোগিতায়, তখন খেলা দেখার সময় ষোল কোটি মানুষের হার্টবিট ওঠানামা করে প্রতিটি বলের সঙ্গে, সেটা যে যেখানেই থাকুক, ফিলিংসটা ফিল করে সমানভাবেই।

এক্ষেত্রে খেলার সময়টা একটা বড় ফ্যাক্টর। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাংলাদেশীরা এসব প্রতিযোগিতায় সামিল হয় বিভিন্ন সময় জোনে, কারো রাত তিনটা তো কারো বিকাল পাঁচটা। এবারের এশিয়া কাপের শুরুটা হয়েছিলো হারের মধ্যে দিয়ে, তাই বলে আশা ছাড়িনি, পরবর্তীতে বাকি সবাই কে হারিয়ে বীরের বেশেই ফাইনালে এসেছি। তবে প্রথম হারটা কেনো যেনো মনে হচ্ছে প্রতিপক্ষ কে সাহস যোগানোর, ফাইনালে এসে হিসেব পুর্ণ করার সুপ্ত বাসনা নিয়ে। এসব খেলায় স্বাভাবিক আমেজের পাশাপাশি প্রতিপক্ষ যদি হয় ভারত বা পাকিস্তান, তাহলে তো কথায় নেই, সেটা হয়ে ওঠে আমাদের প্রেস্টিজ ইসু।

এই দুই দলের সাথে বরাবরই হিসেব আমাদের আলাদা। এরা যেমন আমাদেরকে একটু টেরা চোখে দেখে, ঠিক তেমনি আমরাই এদের দিকে গরুচখা দৃষ্টিতে দেখি। টিম হিসাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এখন আর আন্ডার ডগ নয়, এরা এখন প্রবল প্রতিপক্ষ! প্রতিপক্ষ ভারত র‌্যাঙ্কিং-এ অনেক উপরে থাকলেও খেলা মাঠে বাংলাদেশের বিপরীতে একদমই বিড়ালের আচরণ করে। এর আগের বার তিন ম্যাচ সিরিজের এদিনের ম্যাচে প্রথন দুইটাতে হেরে এমন অবস্থা যে পরের ম্যাচে হারলে তারা ফিরে গিয়ে দেশের মাটিতে পা দিতে পারবে কিনা সন্দেহ ছিলো, আর তাই হয়তো বাংলাদেশ একটু করুণা দেখিয়ে অনেকটা নিজে থেকে হেরে যায়।

ইতিপুর্বে বাংলাদেশ টিমের সাফল্য বলতে ছিলো বিচ্ছিন্নভাবে আসা কিছু জয়, কিন্তু মাশরাফির মতো চৌকস ক্যাপ্টেনের হাতে পড়ে পুরোপুরি বদলে যায় বাংলাদেশ। একই খেলোয়াড়রা, একই ধরনের কোচ তারপরও কোন উল্লেখ করবার মতো সফলতা ছিলো না, আর এখন ধারাবাহিক সাফল্য আসছে একের পর এক, এবং এর কৃতিত্ব শতকরা আশিভাগ দলপতি মাশরাফিরই প্রাপ্য! এর পুর্বে দলপতি যেই হউক গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলোয়াড়রা রেসারেসিতে লিপ্ত থাকতো, যেটা মারাত্মকভাবে দলের পারফমেন্সে গিয়ে প্রতিফলিত হতো।

সবকিছু ছাপিয়ে দেশের ষোলকোটি মানুষের পাশাপাশি বিদেশে বসবাসরত অগুণিত বাংলাদেশীর স্বপ্ন এবারে এশিয়া কাপ জয় করে বাংলাদেশ ক্রিকেট এশিয়ার নতুন পরাশক্তি হিসাবে আবির্ভুত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। পরিশেষে বলি “প্রতিপক্ষ কে সেটা বিষয় নয়, আমরা কি সেটা হলো মূল বিষয়!”।

রাজাদের সিংহাসনচ্যুত করবো- মোহাইমেন হারুন

harun 2

কানাডার টরেন্টো’র ফোড মটর কোম্পানীর প্রকৌশলী ও ক্রীড়া উদ্যোক্তা মোহাইমেন হারুন বলেছেন, আশা রাখি, আমরা টি টুয়েন্টি ক্রিকেটের রাজাদের সিংহাসনচ্যুত করবো। বাংলাদেশের ধারাবাহিক সাফল্য আমাদের উদ্বেলিত করছে । জয় হোক তোমাদের, এবার কেবল সামনে এগিয়ে যাবার পালা। আমাদের হিংস্র বাঘেদের সৌভাগ্য কামনা করছি!

আমরা প্রস্তুত- ইথার মজুমদার

ithar 2

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থানরত রেজিস্টার্ড রেস্পিরেটরী কেয়ার প্রাক্টিশনার ইথার মজুমদার বলেছেন,  আমি হারলেও বাংলাদেশ, জিতলেও বাংলাদেশ টাইগার টিমের অন্ধ সমর্থক। অতিরিক্ত চাপ নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। টি-২০ এশিয়া কাপের ইতিহাসে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে । তোমাদের মত আমরাও প্রস্তুত। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের (ম্যাশ বাহিনী) সুস্থতা ও সফলতা কামনায়..

বেস্ট ইজ ইয়েট টু কাম- নিনা রাহমান

nina 2

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ফিনান্সিয়াল উপদেষ্টা ও সঙ্গীত শিল্পী নিনা রাহমান বলেছেন, আমাদের ছেলেরা যদি নির্ভার হয়ে দেশের ষোলো কোটি মানুষের ভালবাসায় অনুপ্রাণিত হয়ে খেলতে পারে, ইনশাল্লাহ আমরা আবারও ২০১৫ এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবো। এগিয়ে যাও বাংলাদেশ। ষোলো কোটি প্রাণের অফুরন্ত ভালবাসা ও আশির্বাদ রয়েছে তোমাদের সাথে। আমরা প্রবাসীরা বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এশিয়া কাপের ফাইনাল জেতার প্রত্যাশায় আগাম শুভেচ্ছা ! আমদেরও বিশ্বাস ‘বেস্ট ইজ ইয়েট টু কাম’।

আমরা থেমে যেতে চাইনা- শামস রিয়াজ

sams 2

আমেরিকান মিশিগান স্টেট ইউনির্ভাসিটির ফিজিসিয়ান সাইন্টিস্ট শামস রিয়াজ বলেছেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি মাঠে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর আমাদের উপর ছড়ি ঘোরানো। তাদের তুলনায় একেবারেই ক্ষুদ্র দেশ হওয়ায় আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্র ছাড়া- ক্রিকেট। বিগত পাঁচ বছর যাবত ক্রিকেটাররা আমাদের দেখিয়েছে যে, অধিনায়কত্ব থেকে শুরু করে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, তারা ক্রিকেটের সকল শাখায় অসাধারণ । বিশেষত আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের আলাপচারিতার সময় ক্রিকেট আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতিটা জয় আমাদের পুরো পৃথিবীর সামনে শক্তিশালী এবং গর্বিত অনুভব করায়। এশিয়া কাপের ফাইনাল এ পৌঁছানো আমাদের জন্য অবশ্যই সম্মানদায়ক। কিন্তু আমরা থেমে যেতে চাইনা। ক্রিকেটাররা এই এশিয়া কাপ-২০১৬ এর ফাইনাল জিতে আমাদের ট্রফি উপহার দিবে এই শুভকামনা করছি। চল বাংলাদেশ… খেলবে আমার দেশ…।

 

সাহসী প্রজন্মের প্রতীক- জাকিরুল হক

jakir 2

আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার এন্ড আকিটেক্টের প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল মটর্সের প্রকোশলী জাকিরুল হক বলেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রবাসীদের জন্য এক আনন্দ ও গর্বের আধার। এরা আমাদের সাহসী প্রজন্মের প্রতীক। আমার ত্রিশ বছরের প্রবাসী জীবনে এমন দিনের কল্পনা কয়েক বছর আগেও করিনি। এখনো মনে আছে, আমাদের স্কূল জীবনে শুধু ব্রজেন দাস, নিয়াজ় মোরশেদ, এদের বাইরে গর্ব করার মতো কিছু খুঁজে পেতাম না. এখন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, তাসকিন এদের দেখে সত্যি মনে হয়, বাংলাদেশ বীর পুত্র প্রসবিনী।

বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে এশিয়া কাপের চলমান আসর থেকে বিদায় নিয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলাঙ্কা। এশিয়া কাপ টি-২০ টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে লাল-সবুজের জার্সি পরে দেশের মাটিতে খেলবেন মাশরাফিরা। দূর পরবাস থেকে আমরা থাকব তোমাদের সাথে। এবার আমাদের চ্যাম্পিয়ন হবার পালা ।

বিজয় আমাদের, আনন্দ আমাদের- ডি এম নূর রুহুল আলম

nur

বিশ্বখ্যাত জেনারেল মটর্সের প্রকৌশলী ডি এম রুহুল আলম বলেন, অরুণ প্রভাতে সূর্যস্নানে দণ্ডায়মান যুবকের চোয়ালে প্রতিজ্ঞার ছায়া দেখেছ? পরিত্যক্ত খোলস ছেড়ে হামাগুড়ি দিয়ে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত সর্পরাজের বেরিয়ে আসা? কিংবা- জ্বলে ওঠার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে টাটকা বারুদের লালাভ রশ্মির আত্ম প্রকাশের ভাষা? অদম্য জীবন শুধা পানের তীব্র উন্মাদনা যেভাবে ছাই ভস্মে পরিণত করে কঠিন আগ্নেয়গিরির শিলালিপিকে– শিশিরের সিক্ততার কানাকড়িও নেই সেখানে। শুভ্র বলাকার নীলাকাশে মেলে দেয়া মোলায়েম পাখার তুলতুলে নরম স্পর্শ এখানে অচিন্তনীয়। এলকাট্রাজ থেকে পলায়নরত কুখ্যাত আসামীর সরু দু’চোখের মণিতে উপস্থিত যে সাবধানী দ্যুতি- তার তুলনা হতে পারে কেবলই নুতন সৃষ্টি সুখের উল্লাসের সাথে——।

আজ আমরা এমনই এক উল্লাস পালন করব সাফল্যের ইতিহাস গড়ে। আজ আমরা কেবল জীবন সাফল্যকে ছুঁয়ে দেখব না ,অনন্তর হৃদয়ের পদ্মাসনে কেবল বসিয়ে রাখব না। ধোপার হাতের ময়লা কাপড় বানিয়ে, তুমুল আক্রোশে স্বচ্ছ পানিতে আঁচড়িয়ে, মেঘের তুলো বানিয়ে ফুঁ দিয়ে উড়াতে চাই এবং উড়াবই ——

জীবনের সফলতা কত বড় ? যাকে পেতে হবে বিন্দু বিন্দু করে, যাকে সাধনা করতে হবে নিশ্বাসে প্রশ্বাসে, যাকে সাজাতে হবে কল্পনাতে মনের মাধুরী মিশানো রঙে—

আমারা জীবন সাফল্যের মস্তকে দাঁড়িয়ে ভারত নাট্যম নাচতে চাই, তৃষ্ণার্ত পথিকের বাকুলতায় তাকে এক গ্লাস রুহ আফজা বানিয়ে এক নিশ্বাসে পান করতে চাই, ক্রোধে অন্ধ হয়ে হাতের কাছে পাওয়া মূল্যবান তৈজসপত্র ভেবে জমিনে আঁচড়িয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলতে চাই ।

সাফল্যকে এত দিন দেখেছি মস্তক অবনত করে, ভিক্ষুকের দৃষ্টিতে চেয়েছি কাঙ্গালের মত, পাব না জেনে স্পর্শ করতে ছেয়েছি ভগ্ন মনোরথে। আজ থেকে পুরনো চিন্তার শিরচ্ছেদ। সফলতার সৃষ্টি হবে আমাদের স্পর্শে, ক্ষণিকে ক্ষণিকে প্রতিনিয়ত আমরা চাইলেই তা হবে দীপ্যমান, না চাইলে যবানিকা পাত, হবে তিরোধান…………
আজ যখন আমরা এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে মোকাবেলা করব, আমাদের জন্মভুমির সবুজ আর লাল রঙের আভায় উদ্ভাসিত এগারজন সৈনিকের মনে কেবল এই একটি মন্ত্রই কাজ করবে, আর তা হলো , বিজয়, বিজয় আর বিজয়। পরাজিত কেন হব আমরা? আমরা কি পারি না? আমরা আমার ভাষাকে ভালবেসে জীবন দিয়েছি, দেশের মাটিকে ভালবেসে জীবন দিয়েছি, নিজের আত্মসন্মান রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছি। আমাদের এই ছোট্ট পরিসরের দেশের মানুষ বিশ্ব সেরা নোবেল পুরস্কার নিয়ে আসে।

ক্ষমতার খরা কখনই ছিল না আমাদের। ছিল শুধু প্রয়োগের অভাব। সময়ের স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল আমাদের গন্তব্যের বিপরীতে। আজ আর সেই দিন নেই। আজ আমারা অনুভব করতে পারি আমাদের ক্ষমতাকে। আমরা আজ তাই—–
এলেবেলে হেসে খেলে অনিয়ম জীবনের পথিক, জেনেশুনে না বুঝে নুতন নব রত্নের আশিক
হেলে দুলে ঘষেমেজে জীবনের চক্রকে করি বক্র, নব নব সজ্জায় আগে ভাগে জনতার অগ্র
জাতে মাতাল হলেও তালে তালে সবাইকে ছাড়িয়ে, নীলিমার দিগন্তে ডানা মেলি কল্পনাকে মাড়িয়ে
আমারা ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নের তিরোহিত আগ্রার মস্তক, তুলে ধরি ভুলোকে লাথি মারি আসমান ষষ্ঠক
না পাওয়ার বেদনা হেরে যাওয়া জখমের যাতনা, ছুঁড়ে মারি আক্রোশে খনন করি প্রাণান্ত সাধনা
নিচু থেকে উঁচুকে বাক্সে বন্দী করে দেই তালা, হাসতে হাসতে সন্তর্পণে মিটিয়ে দেই জীবনের অসহ্য জ্বালা ।

আজ তাই বুক ফুলিয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়ব আমরা। আমাদের বিজয়ে পুনরায় রচিত হবে আমাদের আগামী প্রজন্মের আরও সামনে এগিয়ে যাবার পথ। পরাজিত হব? মোটেও না … তারপরেও যদি হই … এখন আর ভয় পাই না। কারণ আমরা এখন বিশ্বাস করি, আমরা বীর …।

আমারা জানি বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা …

আর তাই নতজানু না হয়ে সুউচ্চ কণ্ঠে বলতে শিখেছি, পরাজয়ে ডরে না বীর । তারা কেবল এগিয়ে চলে আর সুন্দর আগামীকে বর্তমানে নিয়ে আসার প্রচেষ্টায় থাকে ব্যাকুল। তাদের মুখে থাকে অনাগত সুন্দরের অপার্থিব সুষমা হাসির রেশ।

বাঘগুলোর আবার ঘুম ভেঙেছে- রাহাত খান

রাহাত

যুক্তরাষ্ট্রের ফোড মোটর কোম্পানীর অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার রাহাত খান বলেছেন, আমাদের ঢাকার বাসাতে একটা পুরাতন ভায়োলিন ছিল। সেই ধুলো ধরা বাদ্যযন্ত্র যে কতটুকু স্মৃতিভরা ছিল আমার ধারনাই ছিল না। যখন প্রথম টিভিতে ভায়োলিন বাজানো দেখলাম, তখন খুব জানতে ইচ্ছে হল, কার এই ভায়োলিন, কেন পরে আছে এই বাসায়।

একদিন কৌতূহল আর ধরে রাখতে পারলাম না। জানতে পারলাম… দিনে স্টেনগান আর রাতে তাঁর ভায়োলিন। একই হাতের কাজ। কে জানে কত শত্রু বাহিনীর রক্তে রঞ্জিত ছিল সেই সূক্ষ্ম ভায়োলিন এর হাত। সে আমার ছোট কাকা।

কতবার যেন সেই মনুষ্যত্বকে বাদ্যযন্ত্রের আকিদায় স্নান করাতে হতো। ঘুমন্ত এক বাঘ, তার থাবাগুলো লুকিয়ে ছিল মনুষ্যত্বর আড়ালে। তাই হয়ত ওরা ভেবেছিল এদেশের জনগন বেশ দুর্বল, দেখতে আবার খাটো, চামড়াটাও ময়লা, কেমন কুৎসিত, ওদের মানুষ হবার যোগ্যতা কে দিল? তবে বাঘকে বিচার করতে এসে সেই অমানুষরা অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছিল। ভুলের ক্ষতিপুরণ ছিল ওদের রক্ত!!! সেই বাঘগুলোর আবার ঘুম ভেঙেছে। এবার একটু ভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। এর নাম ক্রিকেট।

গর্জে ওঠো টাইগার্স- রায়হান শেখ

raihan 2

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন কলেজের ছাত্র রায়হান শেখ জানিয়েছেন বিজয় টা কখনই সহজ ছিল না। তবুও ‘৭১ এ আমরা বিজয় পেয়েছি, ইনশাল্লাহ এবারও জয়ের হাঁসি টা আমরাই হাসবো। এখনি সময় জ্বলে ওঠার, গর্জে ওঠো টাইগার্স।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন