কক্সবাজারে অবৈধভাবে মালামাল গুদামজাত: ২ প্রতিষ্ঠান সিলগালা, ১ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

fec-image

কক্সবাজার শহরতলীর লিংকরোড বিসিক শিল্প নগরীতে পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত সাগর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডকে (কালু হাজির গুদাম) অবৈধভাবে মালামাল গুদামজাত করার অপরাধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সাথে মজুতকৃত সমস্ত মালামাল আগামী ৫ দিনের মধ্যে অন্যত্র সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: শামীম হোসেন এ অর্থদণ্ড প্রদান করেন। ভোক্তা অধিকারের ৪৫ ধারা মতে, প্রতিশ্রুত পণ্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ না করার অপরাধে এই দণ্ড দেয়া হয়েছে।

নিয়ম বহির্ভুতভাবে বিভিন্ন মালামাল গুদামজাত করার অপরাধে একই দিনের অভিযানে নিপা অয়েল এন্ড ফ্লাওয়ার মিলস ও কক্সবাজার ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেডকে সিলগালা করেছে জেলা প্রশাসনের টিম।

দেখা গেছে, নিপা অয়েল এন্ড ফ্লাওয়ার মিলে প্রতিটি কক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করার জন্য মজুত করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণ চাল, ডাল, ময়দা ইত্যাদির বস্তা। আর কক্সবাজার ফ্লাওয়ার মিলে মিলেছে সবগুলো গ্যাস সিলিন্ডার। যা অভিযানকারীদের হতবাক করেছে।

এ সময় ভোক্তা অধিকার কক্সবাজার অফিসের সহকারি পরিচালক এএসএম মাসুম উদ দৌলা, বিসিক কক্সবাজার অফিসের সহকারি মহাব্যবস্থাপক ছৈয়দ আহমদ, শিল্প নগরী কর্মকর্তা রিদওয়ানুর রশিদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সাগর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড ও কক্সবাজার ফ্লাওয়ার মিলসের মালিক আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে অগ্রণী ব্যাংকের প্রায় ৩০ কোটি এবং বিসিকের প্রায় ২০ লাখ টাকা পাওনা। চুক্তিমতে টাকা পরিশোধ না করেই সীলগালাকৃত গুদামে মালামাল মজুত ও ব্যবসা করছে মালিকপক্ষ।

বিসিক কক্সবাজার অফিসের সহকারি মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আহামদ জানান, মিল মালিকদের অনেকবার নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশের জবাব তো দেননি, বরং গায়ের জোরে মিলে বিভিন্ন পণ্য গুদামজাত করে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় সুত্র মারফত জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের বিসিকে (র‌্যাব ক্যাম্প সংলগ্ন) কালু হাজির গুদামটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত হিসেবে চিহ্নিত। ব্যাংক ও বিসিকের ঋণের কারণে তা অনেক দিন বন্ধ ছিল। কয়েক বছর ধরে তা গোপনে ভাড়া দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক একটি সিন্ডিকেট ওই গুদামটি ব্যবহার করছে। এখানে রোহিঙ্গাদের চাল, ডালসহ বিভিন্ন খাদ্যপন্য মজুত করা হয়।

নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র জানিয়েছে, গুদামে বিভিন্ন জায়গা থেকে কম দামে ভেজাল চাল মজুত করে ওখান থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করা হয়। একটি দাতা সংস্থার প্রায় ৩০ টাকায় টেন্ডারের চাল কেজিতে ১৭ টাকা দরে কিনেছে সাগর এন্টারপ্রাইজ ও খাজা ভান্ডার। বর্তমানে ৫০০০ টন চাউল সরবরাহ করবে চিহ্নিত সিন্ডিকেটটি। তবে, সাগর কোল্ড স্টোরেজে বেশিরভাগই নিম্নমানের খাদ্য পণ্য মজুত করা হয় বলে সুত্রটির দাবি।

জানা গেছে, দাতা সংস্থা ডব্লিউএফপির চাউলের টেন্ডার ২৯ জনের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। সাগর এন্টারপ্রাইজ, খাজা ভান্ডার, জহুরা কামাল ট্রেডিং ও সমতা ট্রেডার্স-এই চারটি প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেটের মূল।

সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে খাদ্যপণ্য সরবরাহে দুর্নীতি ও জালিয়াতি বন্ধ হবেনা বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন