কক্সবাজারে সংবাদকর্মীকে ইউএনওর অশ্রাব্য গালমন্দ, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড়

fec-image

মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপহারের ঘর নিয়ে সংবাদের সূত্র ধরে সাইদুল ফরহাদ নামের একজন সংবাদকর্মীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু। তুই-তোকারিসহ সাংবাদিকের জাত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

প্রায় চার মিনিটের অডিও রেকর্ডটি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন অশ্রাব্য ব্যবহার শুনে হতভম্ব সব শ্রেণির মানুষ। ক্ষুব্ধ হয়েছে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।

তারা এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা দাবি করে অডিও রেকর্ডটি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথক স্ট্যাটাস লিখেছেন, বিভিন্নজন স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেছেন।

কয়েকজনের স্ট্যাটাস/প্রতিবাদ/কমেন্ট তুলে ধরা হলো:
Nazrul Islam (সভাপতি, রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজার):
নিউজ পরবর্তী টেকনাফের ইউএনও সাহেব সাংবাদিক Sydul Islam Farhad কে ফোন করে যেভাবে গালিগালাজ করলেন তাতে প্রশ্ন জাগলো তিনি ইউএনও হওয়ার ফিট লিস্টে কিভাবে এলেন???
আরেকটা কথা হল ইউএনও বললেন, সেখানে কোন পানি নেই তাহলে নিউজের ছবিতে পানি আসল কি করে ইউএনও সাহেব??

Osman Goni (সাধারণ সম্পাদক, রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজার):
ঢাকার একটি গণমাধ্যমের কক্সবাজার প্রতিনিধি Sydul Islam Farhad কে ইউএনওর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজারের পক্ষে থেকে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
একজন ইউএনওর ভাষাগত এমন আচরণ কক্সবাজারের সাংবাদিক সমাজ কখনো আশা করে না। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউএনও কায়সার খসরুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে।
অতি দ্রুত ইউএনওর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাকে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য সকল কর্মকর্তাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে বন্ধুসূলভ আচরণের নির্দেশ দিতে হবে।

Md Shahidullah (সাধারণ সম্পাদক, BMSF কক্সবাজার):
টেকনাফ উপজেলার ইউএনও সাহেব সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিতর্কিত আচরণ করার পেছনের কারণ কী?
বিগত কিছুদিন আগে শামলা পুর বাজারের পাশে সরকারি খাস জায়গায় উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরাম (উখিয়া -টেকনাফ) এর নির্মিতব্য কার্যালয় ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ একই জায়গায় অর্ধশত দোকান ঘর রয়েছে সেই দোকান ভাঙার কোন প্রকার নির্দেশনা প্রদান করেননি। সরকারি খাস জায়গায় নির্মিত দোকান ঘর থাকতে পারলে সাংবাদিক সংগঠনের কার্যালয় থাকতে পারবেনা কেন? কেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ইউএনও টেকনাফের এমন বিমাতা সূলভ আচরণ? কক্সবাজার জেলা বিএমএসএফ এর কারণ জানতে চাই।
টেকনাফ উপজেলার গৃহহীন পরিবারদের দেওয়ার জন্য মুজিব বর্ষের ঘর নিচু জায়গায় নির্মাণ করায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়। উক্ত সংবাদ প্রকাশের জের ধরে টেকনাফ উপজেলার ইউএনও জেলা প্রতিনিধি Sydul Islam Farhad এর সাথে মোবাইল ফোনে অশালীন ও অশোভন আচরণ করেছেন।
ইউএনও টেকনাফের এমন আচরণের বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলা বিএমএসএফ এর পক্ষে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

Syed Alam: লিখেন
বক্তব্য নিলেও খারাপ না নিলেও খারাপ। সাংবাদিকরা যাবে কোথায়?
টেকনাফের ইউএনও সাহেব এটা কি করলেন? এরকম ভাষা কি কাম্য??
নোট : প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে কেন পানি উঠল তাতে জানোয়ারের বাচ্চা হয়ে হল ছোট ভাই কক্সবাজার প্রতিনিধি ফরহাদ। মন খারাপ করিওনা তোমার সাহসী গতিতে এগিয়ে যাবে এটা তোমার জন্য একটা মারমুখি ক্লাস মনে কর।

সিরাজুল ইসলাম:লিখেন
সাংবাদিকরা ভুক্তভোগীদের বক্তব্য নিয়ে রিপোর্ট করতেই পারেন, অসঙ্গতি থাকলে তিনি ভালোভাবে বলতে পারতেন। কিন্তু টেকনাফের ইউএনওর এমন বাজে আচরণ খুবই বেদনাদায়ক।

Muslim Uddin:লিখেন
গোলামের হুমকি! “উচ্চশিক্ষা আর সুশিক্ষা এক নয় তার প্রমাণ অডিও ক্লিপে।
অডিওর বিপরীত দিকের কথাগুলো শুনে আপনারা হয়তো হতবাক হবেন। টেকনাফ উপজেলার ইউএনও মহোদয় যে এতো সুন্দর ভাষায় কথা বলতে পারেন তা আমাদের জানা ছিল না। এ টি আমাদের জন্য নজীরবিহীনও বটে।
গৃহহীনদের ঘর পানিতে তলীয়ে গেছে। তা তো স্পষ্ট। প্রতিবেদন করেছেন জেলা প্রতিনিধি সহকর্মী সাইদুল ফরহাদ।
তারপর এমন ভাষায় হুমকি আসে ক্ষিপ্ত ইউএনওর অফিসিয়াল নাম্বার থেকে।
ব্যবহার বংশের পরিচয়।
আজ টেকনাফের ইউএনও’র এমন কুরুচিপূর্ণ ভাষা শুনে Ariful Islam Rigan ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল।

Ayasul Sifat:লিখেন
ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা প্রতিবাদ জানানোর।
জেলা প্রতিনিধি অনুজ Sydul Islam Farhad কে “জানোয়ারের বাচ্চা”র মতো জঘন্য বিশেষণে সম্বোধন করেছেন টেকনাফের মহামান্য ইউএনও….
রাষ্ট্রের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা কীভাবে এতো শালিনতা বর্জিত আচরণ করেন?!!
নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করেছিলো জেলা প্রতিনিধি সহকর্মী সাইদুল ফরহাদ। এই প্রতিবেদনে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরায় ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য গালিগালাজ করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু। আসলে এখন শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রশ্নবিদ্ধ!

Aroze Faruk: লিখেন
মানুষের উত্তেজনা বাড়তেই পারে কিন্তু তাকে চিন্তা করতে হবে তার পজিশন কী সে কি রিপ্রেজেন্ট করছে! এসমস্ত বিষয় চিন্তা করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাই ব্যক্তি পরিচয়। এমন অকথ্য ভাষা কাম্য নায়, অডিওর ভাষা শুনে বিস্মিত হলাম।
Sydul Islam Farhad থমকে যেওনা, এগুতে থাকো।

Azim Nihad (প্রধান প্রতিবেদক, টিটিএন):লিখেন
নিউজ পরবর্তী টেকনাফের ইউএনও সাহেব সাংবাদিক Sydul Islam Farhad কে ফোন করে যেভাবে গালিগালাজ করলেন তাতে প্রশ্ন জাগলো তিনি ইউএনও হওয়ার ফিট লিস্টে কিভাবে এলেন???
Azim Nihad এর স্ট্যাটাসে যারা কমেন্ট করেছেন তাদের কয়েকজন-
শাহীন মাহমুদ রাসেল লিখেন: ইউএনওরা তো মহান মানুষ! তারা না থাকলে কি সিঙ্গাপুর হবে?

Mohammad Hasan: লিখেন
সেল্টার তৈরির পূর্ব পরিকল্পনার ব্যর্থতা সাংবাদিকের উপর চালিয়ে দেয়া অযৌক্তিক। সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি প্রতিবেদনকারীকে অন্তঃস্থল থেকে সম্মান জানালাম সাধারণ নাগরিক হিসেবে।

Ariful Islam Asad: লিখেন
ইউএনও খসরু সাহেব টাকা খেয়ে মুজিব বর্ষের ঘরগুলা নিচু জায়গা এবং দুর্বলভাবে তৈরি করে অর্থ লুট করেছেন।
আবদুর রহমান ইবনে আমিন: রাষ্ট্রের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা কিভাবে এতো শালিনতা বর্জিত আচরণ করে?

Jasim Uddin: লিখেন
এমন জঘন্য বক্তব্যের পর আবার গালাগালি!
মো.মিজবাহ উদ্দিন সিকদার:
এমনি কিছু সাংবাদিক আছে মানুষকে হয়রানির করার জন্য ইচ্ছে করে ওল্টা পাল্টা নিউজ করে। অডিওটা শুনে দেখ ইউএনও কথা কি ছিল।

উল্লেখ্য, ২১ জুলাই “নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে” শিরোনামে সংবাদ করেন সাইদুল ফরহাদ। ওই সংবাদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরুর বক্তব্যও ছাপা হয়।

এ বিষয়য়ে দ্রুত বিহিত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, অডিওটি জেলা প্রশাসনের নজরে আনার জন্য ধন্যবাদ।
জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদার প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। সংবাদকর্মীদের সাথে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহমর্মিতা। এটি কোনভাবেই যাতে বিঘ্নিত না হয় সে বিষয়ে আমরা সজাগ আছি।

তিনি বলেন, আলোচ্য বিষয়টি যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুগ্রহ করে সকলকে ধৈর্য্য ধারনের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
জেলা প্রশাসনের কাজে আপনাদের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, আমরা সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করি। মিডিয়াকর্মীদের সাথে আমাদের আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। জেলা প্রশাসনের অবস্থান সুস্পষ্ট। বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন