৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার সুফল

কক্সবাজারে ৮ ঘণ্টায় ধরা পড়লো ১৫ হাজার ইলিশ

fec-image

মাত্র ৮ ঘণ্টা জাল ফেলে ধরা পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার ইলিশ। যার প্রতিটির ওজন এক কেজিরও বেশি। দীর্ঘ ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার পরে এমন ইলিশের দেখা পেয়ে খুশি মৎস্যজীবীরা। সরগরম হয়ে ওঠেছে কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ফিশারিঘাটসহ জেলার উপকূলীয় পল্লী। সাগরে ছুটছে মাছ ধরার নৌকা। সব মিলে পূর্ণ কর্মচাঞ্চল্যে মৎস্যজীবীরা।

কক্সবাজার জেলায় নিবন্ধিত জেলে ৬৩ হাজার ১৯৩ জন। মাছ নির্ভর জীবন চলে প্রায় তিন লাখ মানুষের।

মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর গত ১৯ মে মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। শনিবার (২৩ জুলাই) ওঠে যায় সেই নিষেধাজ্ঞা। মধ্যরাতেই সাগরে ছুটে জেলেরা।

তবে, প্রথম দিনে ইলিশের দাম চড়া। কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয়রা। বেশি দামের আশায় ট্রলারভর্তি ইলিশ ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে জেলার বাইর।

আবদুস শুক্কুর নামক ব্যবসায়ী বলেন, ‌‘ঢাকাসহ অন্যান্য জেলাতে ইলিশের চাহিদা রয়েছে। তাই বাড়তি দামে ইলিশ কিনে দ্রুত তা প্যাকেটজাত করে গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।

মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দু রহিম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা যাওয়ার পর রোববার প্রথম দিন। তাই জেলেরা অতিরিক্ত দাম হাকাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে বেশি দামে ইলিশ কিনতে হচ্ছে। ১ কেজি বেশি ওজনের ইলিশ প্রতিশতে বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৫০ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। মাঝারি আকারের ইলিশ ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।’

রবিবার (২৪ জুলাই) সকালে ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণ ইলিশ, তাইল্লা, মাইট্টা, লাল পোয়া, ফাইস্সা, কামিলা ইত্যাদি মাছ। ভরে গেছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পল্টুন।

দেখা গেল, একের পর এক ট্রলার ভিড়ছে ঘাটে। আর ট্রলারে বসে একেকটি ইলিশ গুনছেন জেলেরা। দু’হাতে ভরছেন ঝুড়িতে। আর বেচাবিক্রির জন্য দ্রুত তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পল্টুনে। মৎস্য ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও জেলেদের হাঁকডাকে সরগরম কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। দীর্ঘদিন পর পল্টুনে ইলিশ দেখে স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের।

মৎস্যজীবীরা বলছে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বাঁকখালী নদীর মোহনা দিয়ে বড় বড় ট্রলার যাচ্ছে সাগরে শিকারে। আবার কিছু কিছু ট্রলার ফিরছে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে। প্রতিটি ট্রলারে জেলেদের মুখে রয়েছে হাসি।

তারা বলছেন, সাগরে জাল ফেলতেই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।

ফখরুল নামের এক ট্রলার মাঝি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার মধ্যরাতে সাগরে মাছ শিকারে যায়। কিন্তু গভীর সাগরে না গিয়ে মাত্র ৪ ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে জাল ফেলতে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়েছে ইলিশ। তাও আবার আকারে অনেক বড়। কয়েক ঘণ্টা মাছ শিকারের পর ৫ হাজার ইলিশ নিয়ে দ্রুত ঘাটে ফিরেছি।’

আরেক জেলে রুস্তম বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম পানি বেড়েছে। তাই জালে বড় বড় ইলিশ ধরা পড়েছে। রাতে গিয়ে জালে ফেলে তা ট্রলার ভরে যায়। সকাল ১১টার দিকে অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে ফিরলাম। ইলিশের ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। খুব খুশি লাগছে।’

তবে নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ না হতেই অনেক ট্রলার সাগরে নামে বলে অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে প্রথম দিনেই মাছ নিয়ে ফিরেছে জেলেরা। আর এসব ট্রলারের মাছগুলোর বেশি দাম হাকাচ্ছে। সাগরে মাছ ধরা শুরু হলেও বাজারে দাম রয়েছে আগের মতোই। এসবের মাঝেও পরিস্থিতিতে ইতিবাচক দেখছেন বিজ্ঞজনেরা।

ব্যবসায়ীরা বলছে, সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনেছেন ট্রালার মালিক ও জেলেরা। তাই ট্রলারভর্তি মাছ পাচ্ছেন। প্রথম দিনে আকারভেদে কেজিতে ৮০০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে কমে আসবে এই দাম।

একজন মৎস্যজীবী বলছেন, একদিন আগে মাছ ধরতে গেছেন। প্রথম জালেই প্রায় ৩ হাজার ইলিশ পড়েছে। দাম ধরে বিক্রির জন্য দ্রুত ঘাটে চলে এসেছেন। এখন আবার যাবেন।

মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি ওসমান গণি টুলু বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার মধ্যরাত থেকে কক্সবাজার উপকূলের জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে গেছে। কিন্তু সকাল না হতেই অনেক জেলে ট্রলার ভর্তি ইলিশ নিয়ে অবতরণ কেন্দ্রে ফিরেছে। মাছগুলো অনেক বড় আকারের। সাথে অন্যান্য মাছও প্রচুর ধরা পড়েছে। এটা মূলত সরকারের সফলতা।

এ প্রসঙ্গে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার তারাপদ চৌহান জানান, সাগরে আগে যেতে পারলে দাম একটু বেশি পাবে। তাই জেলেরা প্রতিযোগিতা করে সাগরে গেছে। প্রথম রাতেই ছোট বোটগুলো কাছাকাছি স্থানে মাছ ধরেছে। কম সময়েই অধিক মাছ নিয়ে ফিরেছে। ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার সুফল পাচ্ছে জেলেরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইলিশ, কক্সবাজার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন