কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন আজ

fec-image

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে এর রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ আজ রোববার (২৯ আগস্ট) অনলাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রান্তে থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান, কক্সবাজারের সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা।

সমুদ্র তীরবর্তী জমি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে সরকার বিমানবন্দটির আরও উন্নয়ন ঘটানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যাতে আন্তর্জাতিক বিমান কোম্পানিগুলো তাদের বড় বড় বিমানকেও এই বিমানবন্দরে অবতরণ করাতে পারে।

প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে নতুন ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হবে, যার ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বোইং ৭৭৭ ও ৭৪-এর মতো বড় আকারের ফ্লাইটগুলো এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে এবং এর ফলে এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পথ সুগম হবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর এই রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা বিশ্ববাসীর কাছে নতুনমাত্রায় পরিচিতি লাভ করবে এবং পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশ্বের উপকূলীয় শহরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর কাতারে নাম লিখিয়ে দেশকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন এবং অ্যাভিয়েশন সেক্টরে রিজিওনাল হাব হিসেবে এটিকে গড়ে তোলাই সরকারের প্রচেষ্টা।

সুত্র জানায়, সিএএবি চীনের চ্যাংজিয়াং ইচ্যাং ওয়টারওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউইবি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সস্ট্রাকশন করপোরেশন-এর (সিসিইসিসি) সঙ্গে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার এই প্রকল্প ২০২৪ সালের মে মাসে সম্পন্ন হবে। সরকার ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়।

সিএএবি কর্মকর্তারা জানান, বিস্তারিত নকশা এবং সাইট অফিস, সড়ক নেটওয়ার্ক ও জেটির মতো অস্থায়ী স্থাপনাগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর প্রকল্পটির মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকেরা সরাসরি কক্সবাজারে আসতে পারবেন।

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, কক্সবাজারে নির্মিতব্য দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ে হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এই রানওয়ের এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সাগরের বুকে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দর হবে বিশ্বের সাগর উপকূলে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বিমান বন্দরগুলোর অন্যতম।

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার বিমানবন্দরে বোয়িং-৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ উদ্‌বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমানবন্দরটির রানওয়েকে সম্প্রসারণের নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করা হয়। প্রথমে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে নয় হাজার ফুটে এবং প্রস্থ ১২০ ফুট থেকে ২০০ ফুট করা হয়। এখন এটিকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। মহেশখালী চ্যানেলের দিকে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই রানওয়ে।

এতে বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহণ ক্ষমতাও বাড়বে। বৃদ্ধি পাবে ফ্লাইট অপারেশনের সংখ্যা। ভবিষ্যতে কক্সবাজারসংলগ্ন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশের বড় বড় এয়ারলাইনসের এয়ারক্রাফটও অবতরণ করতে পারবে কক্সবাজারে। আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এই প্রকল্প।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মহেশখালী ও সোনাদিয়া দ্বীপের পাশেই সমুদ্রে বালি ভরাটের কাজ চলছে। বিমানবন্দরের ভেতরে টার্মিনাল ভবনটির কাজও প্রায় শেষের দিকে। নির্মাণ কাজে জড়িত একজন প্রকৌশলী জানান, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। নির্মাণ কাজে তিন শতাধিক শ্রমিক যুক্ত রয়েছেন। তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা কাজ চলছে। রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, বিমানবন্দর, রানওয়ে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন