কচি তালে মাতোয়ারা রাঙামাটির হাট-বাজার

fec-image

তালের রস বা কচি তাল পছন্দ করেন না এমন লোকের দেখা পাওয়া ভার। তালের রস পান করা এবং পিঠা-পুলির জন্য তালের রসের যেমন জুরি নেই তেমনি কচি তালের শাঁসও খাদ্য হিসেবে অনেক সুস্বাদু।

হাট-বাজারগুলোতে আম, জাম, লিচু, কাঠাঁলের পাশাপাশি বিক্রি করা হচ্ছে কচি তাল। ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তালের উৎপাদন কম হওয়া এবং সব সময় হাটে না পাওয়ার কারণে যখনি বাজারে তাল বিক্রির জন্য তোলা হয় তখনি মানুষ ফলটি কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাই হাটের দিনে অনেক রসিক ক্রেতা রস্যবোধ করে বলেন, ‘তালে হয়েছে সকলে মাতাল’।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, রাঙামাটি শহরের কলেজগেইট এলাকার হাট-বাজারে মধু মাসে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমী অন্যান্য ফলের পাশাপাশি কচি তাল। বাজার জুড়ে তালের সমারোহ। ক্রেতারা মৌসুমী ফল ক্রয়ের পাশাপাশি পরিবারের জন্য কচি তাল কিনে বাড়িতে ফিরছে।

হাটে তাল বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ী অরুণ চৌধুরী বলেন, বাজারে তাল নিয়ে আসার সাথে সাথে বিক্রির ধূম পড়েছে। কারণ বাজারে তাল সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই ক্রেতারা দেখার সাথে সাথে তাল কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি বার হাজার টাকা দিয়ে দুইহাজার তাল চাষীদের কাছ থেকে কিনেছি। বড় আকারের পিস প্রতি ৩০ টাকা, মাঝারী আকারের ২৫ টাকা এবং ছোট আকারের তাল ২০ টাকায় বিক্রি করছি।

তিনি জানান, আশাকরি সব তাল বিক্রি হয়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে। লাভও বেশ ভাল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাজারে তাল কিনতে আসা ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, বছরের প্রথম ফল। বাচ্চারা তালের শাঁস খুবুই পছন্দ করে। অন্যান্য মৌসুমী ফলের মতো সচরাচর বাজারে তাল পাওয়া যায় না। তাই দামের চিন্তা না করে দেখা মাত্র কিনে নিচ্ছি।

কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়, রাঙামাটি জেলায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ১৭হেক্টর জমিতে তালের চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২৯ মেট্রিক টন ফলন উৎপাদন হয়েছে।

সূত্রটি বলছে, তাল চাষে খরচ নেই। চাষীরা অতি সহজে ফসলি জমিতে, নদীর ধারে, বাড়ির আঙিনায় তালের চারা রোপন করতে করতে পারে। তাল গাছ শুধু ফলের গাছ নয় এটি অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে প্রাণীকূলকে রক্ষা করে। তাই তালের সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত জরুরী বলে অভিমত ব্যক্ত করছেন সূত্রটি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, জেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশি করে তালের কাজ লাগানোর জন্য কৃষি বিভাগ থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

তবে তালের চারার সংকট এবং বেসরকারি পর্যায়ে তাল গাছ বিক্রি না করার কারণে মানুষও ফলটির গাছ রোপন করেন না। এছাড়া গাছটি দীর্ঘ সময় পর ফলন দেওয়া কারণে অনেক চাষী গাছটি রোপন করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।

তিনি আরও বলেন, তালের রস যেমন সুস্বাদু তেমনি তালের শাঁসও। কারণ তালের শাঁসে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই করোনাকালে সবারই উচিত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। শুধু গ্রীষ্মকালেই বাজারে কচি তাল দেখতে পাওয়া যায়। এর নরম কচি শাঁস খেতে ছোট বড় সবাই পছন্দ করে। এতে থাকা অনেক খাদ্যশক্তি এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান শরীরের বহু রোগের দাওয়াই বলে যোগ করেন কৃষি কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন