কাউখালীতে ছেলেকে গাছের সাথে বেঁধে পেটালেন বাবা, অভিমানী ছেলের বিষপানে আত্মহত্যা!

Kawkhali  Suicide News pic copy

আরিফুল হক মাহবুব, কাউখালী প্রতিনিধি:
পিতা-পুত্র ও শ্বশুর বাড়ী কর্তৃক শারীরিক, মানষিক নির্যাতন সইতে না পেরে রাঙামাটি কাউখালীতে আমির হোসেন (২৮) নামে এক যুবক বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।

সোমবার (১০ আগস্ট) দিবাগত রাত তিনটায় উপজেলার হাতিমারা গ্রামে এঘটনা ঘটে।

কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল করিম পরিবার কর্তৃক নির্যাতন ও আত্মহত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

প্রত্যক্ষর্দশীরা জানায়, উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের হাতিমারা গ্রামের আবুল কাশেমের ৩য় ছেলে আমির হোসেন দীর্ঘদিন যাবৎ শ্বশুর বাড়ী ও নিজ পরিবার কর্তৃক মানষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিল। রমজানের আগে রাঙ্গুনীয়ার ধামাইরহাট এলাকার মোঃ ইউনুছের মেয়ে মনি বেগমের সাথে বিয়ে হয় আমির হোসেনের।

বিয়ের কিছুদিন পর থেকে নতুন বউয়ের সাথে তার পরিবারের সদস্যদের বনিবনা হচ্ছিলনা। পারিবারিক কলহ সামাল দিতে না পেরে আমির হোসেন তার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ী পাঠিয়ে দেয়। ঈদের আগে কয়েক দফা আমির তার স্ত্রীকে আনতে শ্বশুর বাড়ী গেলে সেখানে তাকে অপদস্ত করা হয়। এক পর্যায়ে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। এ নিয়ে নিহতের পরিবারে সাথে বিভিন্ন সময় ঝগড়া বিবাদের কথা জানায় এলাকাবাসী।

দু’দিক থেকে মানষিক নির্যাতনের শিকার আমির হোসেন ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় নিজ বাড়ীতে গিয়ে তার বাবা আবুল কাশেমকে মারধর করার চেষ্টা চালায়। এসময় পিতা আবুল কাশেম ও ছোট ভাই ইমন (২৫) মিলে আমির হোসেনকে গাছের সাথে বেঁধে রাতভর লাঠিপেটা করে। সারারাত তার উপর শারীরিক নির্যাতন চললেও তাকে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসেনি।

খবর পেয়ে ১০ আগস্ট ভোর সাড়ে ছটার সময় কাউখালী স্বাস্থ্য কম্পে­ক্সের নৈশ প্রহরী মোঃ মামুন আমিরের বাড়ীতে যায়। সেখানে গাছের সাথে পেছন দিক থেকে হাত বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায় আমীরকে উদ্ধার করে কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সারাদিন সে হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করলেও পরিবারের কোন সদস্য তাকে দেখতে আসেনি। নিজেকে বাঁচাতে অসহায় আমির তার নিজে কেনা পানির মটর বিক্রি করতে গেলে সেখানে বাঁধা দেন তার বাব আবুল কাশেম।

সন্ধ্যায় কোন একসময় অভিমানী আমির সবার অজান্তে হাসপাতল থেকে অসুস্থ অবস্থায় বেরিয়ে আসে এবং রাতে বিষপান করে। মুমুর্ষ অবস্থায় রাত আটায় পরিবারের সদস্যরা তাকে কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। কিন্তু সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তৎক্ষণাৎ চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন কর্তব্যরত ডাক্তার। ১০ আগস্ট দিবাগত রাত আড়াইটায় চমেক হাসপাতালে আমিরের মৃত্যু হয়।

কাউখালী স্বাস্থ্য কম্পে­ক্সের কর্মরত ডাঃ মুর্তাজা রশিদ শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি শিকার করে জানান, নিহত আমিরের সারা শরীরে মারাত্মক সব আঘাতের চিহ্ন ছিল।

সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করতে যাওয়া পাচলাইশ থানার এসআই আব্দুর রাজ্জাক জানান, মৃত আমির হোসেনের মাথায় এবং সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত ছিল। তিনি জানান, আমিরের মৃত্যু বিষপানে হলেও তাকে সীমাহীন শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।

এদিকে মৃত্যুর পূর্বে আমির হোসেন তার স্ত্রী মনি বেগমকে বিবাদী করে এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কাউখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীর কপি পাওয়া গেলেও থানায় লিপিবদ্ধ হওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর পূর্বে আমির হোসেন তার লিখা সাধারণ ডায়েরীতে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন কর্তৃক সীমাহীন নির্যাতনের কথাও তুলে ধরে। কিন্তু তার সাধারণ ডায়েরী থানা পর্যন্ত পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছে অফিসার ইনচার্জ আব্দুল করিম।

এবিষয়ে স্বাভাবিক নিয়মে থানায় অপমৃত্যু মামলার কথা থাকলেও কাউখালী থানায় এখন পর্যন্ত মামলা রেকর্ডভুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছন ওসি। তিনি জানান, নির্যাতনের বিষয়ে থানায় এখনো কেউ অভিযোগ করেনি।

এঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকাবাসী এঘটনার জন্য দুই পরিবারকে দায়ী করে এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন