কাউখালীতে সীমাহীনভাবে বেড়ে চলেছে শিশু অপরাধ

কাউখালী

আরিফুল হক মাহবুব, কাউখালী প্রতিনিধি :

অভিভাবকদের অসচেতনতা, অর্থনৈতিক টানাপোড়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা, কোন কোন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আস্কারা পেয়ে কাউখালীতে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে শিশু অপরাধ। এসব কারণে বই, খাতা, কলমের পরিবর্তে এ এলাকার শিশুরা প্রতিদিন নতুন নতুন অপরাধের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে।

গত কয়েক মাসে কাউখালীর বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে শিশু অপরাধের এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। শিশুদের এসব অপরাধে জড়াতে পেছন থেকে শক্তি যোগাচ্ছে একটি গ্রুপ। ফলে তাদেরকে ন্যুন্যতম শাস্তির আওতায় আনাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত কয়েক মাসের কাউখালী সদরের প্রাণকেন্দ্রে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রথমদিকে এসব চুরির ঘটনায় স্থানীয় চিহ্নিত পেশাদার চোরদের সন্দেহ করা হলেও পরবর্তীতে তা ভুল প্রমাণিত হয়। স্থানীয়রা এসব চুরির ঘটনা উদ্ঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর শিশু চোরদের তালিকা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গত দুই মাসে অন্তত ২০টির বেশী চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। এসব চুরির ঘটনায় অসচ্ছল পরিবারের শিশুরা যেমন জড়িত তেমনি মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরাও বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে সমাজে নানা রকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

এসব শিশু অপরাধীরা প্রথম দিকে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ছোটখাট জিনিষ পত্র চুরি করলেও পরবর্তীতে তারা বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো টার্গেট করতে থাকে। সম্প্রতি সময়ে উপজেলা সদরের চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা চুরির এমন কয়েকটি ঘটনা সফলভাবে সম্পন্ন করে তারা। চুরির পর তারা ধরাও পড়েছে। কিন্তু এসব শিশু অপরাধীদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়। যার কারণে তাদেরকে ন্যুন্যতম শাস্তির আওতায় আনাও সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি সবচেয়ে বেশী চুরির ঘটনা ঘটছে সাপ্তাহিক দুই হাটের দিনে। বাজারে আসা লোকজনের ভিড়ে ঢুকে পকেট থেকে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা এমনকি সুযোগ বুঝে ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়েও পালিয়ে যাচ্ছে তারা। এসব ঘটনায় তারা প্রায়শই ধরা পড়লেও শিশু অপরাধী হিসেবে লঘু শাস্তির মাধ্যমে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা ছোটখাট চুরির পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের মাদক সেবনেও অভ্যস্ত হচ্ছে।

শুধু চুরির ঘটনা নয়, এদেরকে দিয়ে এক শ্রেণির মানুষ রূপী জানোয়ারের মাধ্যমে যৌন মিলনের কুরুচিপূর্ণ ছবি মোবাইলে ধারণ করে আবার তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায়ের ঘটনাও ঘটেছে।

এ বিষয়ে কথা হয় কাউখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কালা মিয়ার সাথে। তিনি সম্প্রতি সময়ে শিশু অপরাধের কথা স্বীকার করে জানান, দ্রুত এসব বিষয়ে এখনি লাগাম টেনে ধরতে হবে। এদেরকে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিয়ে শাসনের পাশাপাশি আদর স্নেহ দিয়ে বুঝাতে হবে। যারা এসব শিশুদের অপরাধ জগতে ঠেলে দিচ্ছেন তাদেরকেও শক্ত হাতে প্রতিহত করা প্রয়োজন। এজন্যে তিনি অভিভাকদের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতাকে দুষলেন।

তিনি জানান, এসব শিশুরা কি কারণে বিপথে পা বাড়াচ্ছে তা খতিয়ে দেখা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এখনি তাদেরকে শুধরানো না গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তারা ঝুঁকে পড়তে পারে বড় বড় অপরাধের দিকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন