কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কমেছে উৎপাদন, বেড়েছে লোডশেডিং

fec-image

গ্রীষ্মের রোদ্দুরের তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে গেছে। শুকিয়ে গেছে হ্রদের বেশির ভাগ অংশ। বৃষ্টিপাত না থাকায় এবং অন্যদিকে জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদের জন্য পানি ছেড়ে দেয়ায় হ্রদে পানি সবচেয়ে নিম্নস্তরে নেমে এসেছে। যে কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। পুরো জেলায় বেড়েছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা।

দেশের একমাত্র এই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বর্তমানে পাঁচটি মেশিনের মধ্যে একটি মেশিন দিয়ে ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে বাকী চারটি মেশিনের মধ্যে তিনটি চালু থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। বাকী একটি মেশিন বাৎসরিক সংস্কার কাজ চলছে। কিন্তু হ্রদের পানি পরিপূর্ণ থাকলে পাঁচ ইউনিট থেকে ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়। হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ২০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর অক্টোবর মাসে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর থাকে সর্বোচ্চ। এরপর জলেভাসা জমিতে চাষাবাদের জন্য পানি ছেড়ে দিতে হয়। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও পানি ব্যবহার হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে নভেম্বরের পর থেকে ধীরে ধীরে পানি কমতে থাকে। গ্রীষ্মকালে তীব্র তাপদাহের কারণে হ্রদের পানি খুব দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। এতে হ্রদের পানির ওপর নির্ভরশীল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়।

বর্তমানে হ্রদে পানি রয়েছে মাত্র ৭৪ কিউসেক। সচল রয়েছে মাত্র একটি ইউনিট। পাহাড়ি ঢল না নামলে এবং বৃষ্টিপাত না হলে একটি ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে পুরো জেলায় অন্ধকার নেমে আসবে।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি একেবারেই কমে যায়। কমে যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন; বেড়ে যায় লোডশেডিং।

বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপক আরো বলেন, কাপ্তাই হ্রদের রুলকার্ভ অনুসারে হ্রদে পানি থাকার কথা রয়েছে ৮২.৮০ এমএসএল (মিনস সী লেভেল)। কিন্তু হ্রদে পানি রয়েছে ৭৪.০০ কিউসেক । হ্রদে পানির ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ১০৯ এমএসএল। বর্তমানে একটি মেশিন দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৩৫ মেগাওয়াট। পানি কম থাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো ইউনিট একযোগে চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রের ১নং ইউনিটটি বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রের ২,৩ এবং ৪ নং ইউনিট পানির অভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার ১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলি নদীর ওপর দিয়ে নির্মাণ করে কাপ্তাই বাঁধ। কাপ্তাই বাঁধ সৃষ্টির পর থেকে মিঠা পানির হ্রদে মৎস্য উৎপাদন করা হয় সরকারিভাবে। পাশাপাশি জেলার ছয়টি উপজেলার সাথে অব্যাহত যোগাযোগ হয় এ হ্রদ দিয়ে। শুধু তা নয়; হ্রদের পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে সাড়ে পাঁচ হাজার জলেভাসা জমি ভেসে উঠে। এ জলেভাসা জমিতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল ফলায় এবং জেলাসহ দেশের খাদ্য সংকট দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কৃষকরা। তবে হ্রদের পানি কমে যাওয়ার মূল সমস্যা হলো হ্রদটি সৃষ্টির পর থেকে কোন ড্রেজিং না করা । প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে হাজার হাজার টন বর্জ্যে এবং পলিমাটি এসে হ্রদের তলদেশ ভরাট করে। এতে হ্রদের নাব্যতা অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। যে কারণে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায়, হ্রদ ঘিরে তৈরি হয় নানা সংকট।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কাপ্তাই, জলবিদ্যুৎ, লোডশেডিং
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন