কারেন্ট পোকায় বিপর্যয় বান্দরবান কৃষি খাত

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের ফুট্টাঝিরি গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম চলতি রোমা-আমন মৌসুমে চাষ করেছেন প্রায় ২৫কানি জমিতে। গত এক মাস আগে হঠাৎ করে জমিতে ছড়িয়ে পড়ে কারেন্ট পোকার আক্রমন। এতে অন্তত ৭ কানি জমির ধান মাঠে নষ্ট হয়। বাকী ধান রক্ষার জন্য কিটনাশক ছিটানোর মাধ্যমে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

উত্তর ছালামী পাড়া গ্রামের মো. হানিফ ৭ কানি বর্গা জমিতে চাষ করেছেন। ইতোমধ্যেই চার কানি জমির ধান কারেন্ট পোকার আক্রমনে নষ্ট হয়েছে। ছালামীপাড়ার নুরুল আলমের ৩কানি চাষের মধ্যে ১কানি এবং জয়নাল আবেদীনের ২কানি ধানের মধ্যে ১কানি ধান মাঠে নষ্ট হয়েছে। এসব কৃষকদের মধ্যে সবাই অন্যের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়েছেন কানি প্রতি ৬ হাজার টাকায়। প্রতি কানি ধান রোপনে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।

এসব কৃষকদের মধ্যে কেউ মানুষের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য আমন মৌসুমে ধান রোপন করেছিলেন আবার কেউ মানুষের কাছ থেকে কর্জ্য নিয়ে পরিবারের দুমুঠো ভাত নিশ্চিত করার জন্য চাষ করেছিলেন। বর্তমানে তারা সবাই পথে বসার উপক্রম হয়েছে। মাঠে থাকা বাকী জমির ধান রক্ষা করার জন্য আবারও নতুন করে কর্জ্য নিতে হচ্ছে তাদের। এই চিত্র শুধু নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের নয়। বাইশারী, সোনাইছড়ি, ঘুমধুম ও দোছড়ি ইউনিয়নেও মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে কারেন্ট পোকার আক্রমণ।

সোমবার জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্লকে ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে। শত শত কৃষকের জমির ধান বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমনে ধ্বংস হয়ে গেছে। হঠাৎ ‘কারেন্ট পোকার’ আক্রমণে চাষীরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। উপজেলায় চলতি বছর রোপা আমন রোপণের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধান উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষক।

একাধিক কৃষক পার্বত্যনিউজকে বলেন- ধান পাকার মাত্র কয়েকদিন বাকি-এমন সময় কারেন্ট পোকার আক্রমণে গাছ শুকিয়ে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে পুরো ক্ষেতে। তাদের অভিযোগ কৃষি কর্মকর্তারা ঠিকমতো মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিলে কৃষকদের এই বিপর্যয় হতোনা। তবে এই বক্তব্য অস্বীকার করে কৃষি বিভাগ বলছে- পোকা দমনে ধান ক্ষেত পরিদর্শন, প্রচারপত্র বিলি, কমিটি গঠন এবং পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

নাইক্ষ্যংছড়ি ৩নং ওয়ার্ডে নিয়োজিত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুহিব উল্লাহ কারেন্ট পোকায় কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয় স্বীকার করে বলেন- আমার চাকরি জীবনের ষোল বছরের মধ্যে কারেন্ট পোকার এমন আক্রমণ চোখে পড়েনি। সম্প্রতি এই রোগ চিহ্নিত হওয়ার পর প্রতি মূহুর্তে কৃষকদের ধান দেখভাল করছেন তারা। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে আনার জন্য কৃষি বিভাগের লোকজন নির্ঘুম রাতযাপন করছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সপ্তায় উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে এই কারেন্ট পোকার আক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে। এই খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে উপজেলা কৃষি বিভাগের ঘুম ভাঙ্গে। নড়েচড়ে বসে কৃষকের ধান ক্ষেত রক্ষার জন্য। এই জন্য কৃষি বিভাগ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের শোকজসহ সবার ছুটি বাতিল করে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেন। পরবর্তী এই কারেন্ট পোকার আক্রমণ নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, সোনাইছড়ি, ঘুমধুম ও দোছড়ি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে পোকার আক্রমন এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, আগামী তিন-চার বছর এই পোকার আক্রমণ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলেছেন- এ বছর আবহাওয়া কারেন্ট পোকা আক্রমণের অনুকূল। তাই আগে থেকেই কৃষি বিভাগ সতর্ক হলে এই রোগ দ্রুত মাঠে বিস্তার হতো না। বর্তমানে যখন রোগ মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে তখন কৃষি বিভাগ তৎপর হয়ে উঠেছে। ক্ষতি যা হওয়ার তা কৃষকের হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ্যংছড়ি সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুছ বলেন- পাচঁ ইউনিয়নের মধ্যে সবখানেই কমবেশি কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। উপজেলায় ৬ হেক্টর বা প্রায় ৪০কানি জমি আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগ ধরা পড়ার পর প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাইকিং, প্রচারপত্র, প্রতিদিন মাঠ পরিদর্শনসহ কৃষি বিভাগের সাধ্যমতো প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই রোগ দমনে কৃষকের পাশে থাকতে সকল স্টাফদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কারেন্ট পোকায়, বান্দরবানের
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন