কী ঘটতে চলেছে খাগড়াছড়ির ৬ উপজেলায়

18.02.2014_--Khagrachari Upazila election pic6 (2)

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

রাত পোহালেই শুরু হবে খাগড়াছড়ির ছয় উপজেলায় ভাগ্য নির্ধারণী ভোট। খাগড়াছড়ির ছয় উপজেলার ৩ লাখ ১৩৮ জন ভোটার আগামী চার বছরের জন্য তাদের অভিভাবক নির্বাচিত করবেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় জেলার নির্বাচনে ভিন্নমাত্রা যোগ করার পাশাপাশি রয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠাও। এ নির্বাচনে খাগড়াছড়ির ছয় উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বাইরেও প্রার্থী দিয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ ও জেএসএস (এমএন লারমা)।

ছয় উপজেলার নির্বাচনকে ঘিরে একদিকে বর্তমান চেয়ারম্যানরা তাদের ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে তৎপর আর অন্যদিকে নতুনরা তাদের ক্ষমতায় ভাঙ্গন ধরিয়ে দায়িত্ব নিয়ে প্রাপ্তির ঢেকুর ফেলতে চায়। টিকে থাকা আর না থাকার লড়াইয়ের মহেন্দ্রক্ষনের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে জেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের ৭৭ প্রার্থী। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে বসে নেই ভোটাররাও। তবে সবকিছু নির্ভর করছে ভোটাররা কতোটা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে তার উপর। কেননা অতীতে দেখা গেছে, দূর্গমেএলাকার ভোটাররা ইউপিডিএফ’র হুমকির মুখে তাদের ভোট দিতে বাধ্য হয়েছে। এবারেও তেমন কিছু ঘটলে শেষ মুহুর্তে পাল্টে যেতে পারে সকলের সকল হিসাব।

খাগড়াছড়িতে লড়াই হবে বিএনপি-আওয়ামীলীগ
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বিজয়ের লক্ষ্যে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সদর উপজেলা বিএনপির ভোট ব্যাংক হওয়ায় দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর চেয়ে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী কংচাইরী মগ। খাগড়াছড়িতে বিএনপি প্রার্থীর সাথে দ্বিমুখী লড়াই হবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শানে আলম‘র এমনটাই বলছেন সাধারণ ভোটাররা। এখানে লড়াই থেকে পিছিয়ে নেই মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে চঞ্চুমনি চাকমাও।  

সদর উপজেলায় ৭১ হাজার ৮শ ১৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী সুবিধা নিতে চাইলেও আওয়ামীলীগের সমর্থন নেয়ার কারণে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে আছেন বিগত নির্বাচনে দল নিরপেক্ষ মো. শাহ আলম।

মাটিরাঙ্গায় লড়াই হবে আওয়ামীলীগ-বিএনপি

বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত মাটিরাঙ্গায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন চার প্রার্থী। এখানে সমানে সমানে লড়ছেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: শামছুল হক ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম তাজু। ভোটাররা অনেক বেশী হিসেবী হওয়ায় কেউই মুখ খুলতে রাজি না হলেও মাটিরাঙ্গায় মুল লড়াই হবে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে। আবার দুজনের স্বপ্নে চিড় ধরাতে পারেন নির্বাচনপ্রিয় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কাশেম ভূঁইয়া ।

৭২ হাজার ৯শ ৭০ জন ভোটারের মাটিরাঙ্গা বিএনপির ভোট ব্যাংক হওয়ায় ক্যারিসমাটিক রাজনীতিক খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবু ইউসুফ চৌধুরীর প্রত্যক্ষ নজরদারীর ফলেএখানে বাড়তি সুবিধায় রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম তাজু। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামসুল হকও পিছিয়ে নেই। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এ আসনে।

রামগড়ে লড়াই হবে বিএনপি-আওয়ামীলীগ

সর্বাধিক সাতজন প্রার্থী চেয়ারম্যান হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে লড়ছেন নির্বাচনী ময়দানে। ৪৪ হাজার ৬শ ভোটারের রামগড়ে শুরু থেকেই নির্বাচনী আমেজে ভিন্নমাত্রা যোগ করে চাচা-ভাতিজা ও ভাগিনার লড়াই। নির্বাচনী ময়দানে নানা কারনে চাচা পিছিয়ে পড়লেও মুল লড়াইয়ে যুক্ত হচ্ছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী রামগড় উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো: শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদ। দলীয় নেতাকর্মীদের নানা ধরনের হুমকি-ধমকি ও সাধারন ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনের পরও বিএনপির অবাধ বিচরণ ভুমি রামগড়ে বিজয়ের কাছাকাছি রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো: শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদ। তার সাথে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ সমর্থিত একেএম আলীম উল্লাহ দ্বিমুখী লড়াইয়ে যুক্ত হবেন বলে মনে করছেন রামগড়ের ভোটার মহল।

পানছড়িতে লড়াই হবে বিএনপি-ইউপিডিএফ

জেলার সীমান্ত ঘেষা পানছড়ি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে ৪২ হাজার ৩শ ৭১ জন ভোটারের পানছড়িতে বিএনপি-ইউপিডিএফ দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও বিজয়ের কাছাকাছি রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অনিমেষ চাকমা রিংকু এমনটাই আলোচিত হচ্ছে পানছড়ির সাধারন ভোটার মহলে। তবে ইউপিডিএফও ছেড়ে কথা কইবে না।

মানিকছড়িতে ঘটতে পারে বিস্ময়

মানিকছড়িতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ম্রাগ্য মারমা ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো: এনামুল হক এনাম এর সাথে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে বিজয়ের লক্ষ্যে লড়ছেন বিএনপি থেকে বহিস্কৃত এসএম রবিউল ফারুক। ৩৬ হাজার ৫শ ২৫ জন ভোটারের মানিকছড়িতে তিন প্রার্থীর মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের ধারণা করছেন মানিকছড়ির ভোটররা। তবে মানিকছড়িতে ভোটের ময়দানে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত এসএম রবিউল ফারুক সবাইকে বিস্মিত করতে পারেন বলে মনে করছেন মানিকছড়ির ভোটাররা।  

মহালছড়ির দখল নিতে পারে জেএসএস

বিএনপির প্রার্থী বিহীন মহালছড়ি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের দখল নিতে পারে  জেএসএস (এমএনলারমা) সমর্থিত প্রার্থী বিমল কান্তি চাকমা এমনটাই বলছেন মহালছড়ির ভোটার মহল। সেক্ষেত্রে তার সাথে দ্বিমুখী লড়াইয়ে যুক্ত হবেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী নীলোৎপল খীসা। ৩১ হাজার ৮শ ৫৮ জন ভোটারের মহালছড়িতে বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা ভাগ্য বিধাতা হিসেবে আভির্ভুত হবে বলে ধারনা করছে সচেতন মহল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন