কুতুপালং ক্যাম্পে রাতে চলে সন্ত্রাসীদের রাম রাজত্ব

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একেরপর ঘটনা ঘটে আসছে। দিন দিন বাড়ছে অপরাধ প্রবনতা। খুন খারাপির পাশাপাশি ইয়াবা, অস্ত্র, স্বর্ণ এবং ত্রাণের মালামাল ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে ঘটনা ঘটছে বলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের অভিমত।

সোমবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হাতে খুন হওয়া  মো. ইয়াছিন (২৫) নামের এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারকৃত মৃতদেহটি ওই ক্যাম্পের মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে।

সোমবার (৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৪/২ওয়েস্ট ব্লক থেকে এ মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়।

উখিয়া থানার ওসি/তদন্ত গাজী সালাহউদ্দিন বলেন, মৃতদেহটির ঘাড়ে ধারালো দায়ের কোপের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘটিত ঘটনার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

ওই ক্যাম্পের মােহামদুল্লাহ বলেন, ক্যাম্প ২ ওয়েস্ট ডি-ব্লকে রোববার রাতে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী আসার মৌলভী হামিদ ও আনাসের নেতৃত্বে কয়েকশত সন্ত্রাসী রা দা-লাঠি সোটা নিয়ে এসে ক্যাম্পের অর্ধশতাধিক ঝুপড়ি ঘর ও ৫০টি দোকান ভাংচুর করেছে। প্রায় রোহিঙ্গাদের ঘরে তল্লাশী করে মৃত মৌলভী কাদের বক্সের দুই ছেলে রিদুয়ানশাহ (২০) ও ইয়াছিনশাহকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়।

ওই দুই ভাইয়ের চাচা মাতু জানান, সোমবার সকালে ডি-৪ এলাকায় দুইজনকেই জবাই করে খুন করার খবর পেয়ে মৃতদেহ ফেরত চাইলে সন্ত্রাসী মৌলভী হামিদ ৫ লাখ টাকা দাবি করে অন্যথায় লাশ দেবে না বলে জানিয়ে দেয়।

কুতুপালং পুরাতন রেজিস্ট্রার্ড শরণার্থী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ জানান, আনাস গ্রুপ ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে সংঘটিত ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে কয়েক’শ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু কুতুপালং ক্যাম্প ছেড়ে অন্য ক্যাম্পে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। বর্তমানে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে বলে রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন।

এদিকে গত ৫ দিনের ঘটনায় ক্যাম্পে ১ নারীসহ ৪ জন খুন হয়েছে। আহত হয়েছে ৪৫ জনের বেশি রোহিঙ্গা নারি, পুরুষ, শিশু। এ নিয়ে ক্যাম্পে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থী সংগঠন আরসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে একের পরে এক নিরীহ রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা, ভাংচুর, গোলাগুলি, অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ আদায় ও খুন করার ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, আরসা সন্ত্রাসীদের দাবি বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে তাদের বিরোধী মতাবলম্বীরা কুতুপালং ২-ইষ্ট ক্যাম্পের তাবলীগ জামাতের মারকজে আশ্রয় নিয়ে থাকে। আর তাদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে আরসার প্রতিপক্ষ মুন্না গ্রুপ। তাছাড়া আরসার ইয়াবা ক্রয় – বিক্রয়ের গোপন তথ্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট মুন্না গ্রুপের লোকজন দিয়ে থাকে।

মূলত রোহিঙ্গা উগ্রপন্থী সংগঠন আরসা ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে এসব নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলে আসছে বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা জানান। এসব নিয়ে গত মাসাধিক কালের বেশি সময় ধরে প্রতিরাতে ক্যাম্প গুলোতে শোনা যায় গুলির শব্দ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়জিত ১৪ এপিবিএনের পরিদর্শক ইয়াসিন ফারুক জানান, নতুন এবং পুরাতন রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে খুনের ঘটনা গুলো ঘটছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন