কেএনএফের উত্থানের কারণ কী?

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রামের এখন প্রধান আলোচ্য বিষয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট সংক্ষেপে কেএনএফ ও এর সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। ২০২২ সালের এপ্রিলে সংগঠনটির অস্তিত্ব জানা গেলেই এই গোষ্ঠীর সংগ্রামের ইতিহাস নতুন নয়। আমরা যদি একটু অতীতে তাকাই বা গুগলে সার্চ করলে দেখতে পাবো গ্রেটার কুকি ল্যান্ড নামে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই আছে। কল্পিত কুকি ল্যান্ডের যে ম্যাপটা দেখতে পাবেন সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি অংশ, মিয়ানমারের চিন ও কাচিন রাজ্য এবং ভারতের মিজোরাম, মণিপুর রাজ্যও এর অন্তর্ভুক্ত। এ অঞ্চলে যেসব উপজাতীয় জনগোষ্ঠী বসবাস করে, তারা নিজেদের একত্রে মিজো বা জো জাতি বলে পরিচয় দেয়। স্থানীয় ভাষায় ‘মি’ শব্দের অর্থ মানুষ এবং ‘জো’ শব্দের অর্থ পাহাড়। অর্থাৎ ‘মিজো’ শব্দের অর্থ পাহাড়ী মানুষ বা পাহাড়ের মানুষ। উল্লেখ্য যে, অঞ্চলটি অত্যন্ত উঁচু পর্বতময়। কাজেই কেএনএফের উত্থান যে আলাদা কিছু সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই।

দ্বিতীয়ত: কেএনএফ কেনো সৃষ্টি হয়েছে? কুকি-চিনের এই আন্দোলন বা কেএনএফ কেনো হলো তার একটা বড় কারণ বঞ্চনা। ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর যে শান্তিচুক্তি করা হলো, তার একটা ভালো উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু তাড়াহুড়ো করে হোক বা অসতর্কতাবশত হোক বা যারা এর সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের মতামত না নেয়ার কারণে হোক এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি রয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, পার্বত্য শান্তিচুক্তি করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটিমাত্র সংগঠন জেএসএসের একটি অংশের নেতা সন্তু লারমার সাথে। সে সময় এবং এখনো সন্তু লারমা পার্বত্য অঞ্চলের সকল জনগোষ্ঠির নেতা নন। জেএসএস সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো সংগঠন নয় বা জেএসএসেরও সর্বস্তরের তিনি নেতা নন। ফলে সন্তু লারমার জেএসএসের সাথে যখন শান্তি চুক্তি করা হলো তা অন্যদের কাছে সেভাবে গ্রহণযোগ্য হলো না বা তাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর অধিকার ও দাবি নিশ্চিত করা গেলো না।

জেএসএস মূলত একটা চাকমা উপজাতি ডমিনেটেড সংগঠন। সকল চাকমাও আবার জেএসএসের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো না। এই জেএসএসের সাথে শান্তি চুক্তির ফলে সরকার যে সমস্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোকে প্রদান করেছে এই সুবিধাগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মূলত চাকমা সম্প্রদায়ের লোকেরা ভোগ করছে। এর বাইরে জেএসএসের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর যারা, তারা এই সুবিধাগুলো ভোগ করছে। যার ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে জেএসএস বা চাকমার বাইরে যে সমস্ত জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে, তারা কিন্তু‘ প্রচন্ডভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে।

এক্ষেত্রে ছোট্ট একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সাঁওতাল সম্প্রদায় বসবাস করে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চাঁদনী সাঁওতাল নামে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একট মেয়ে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চাকরি পায়। পানছড়ির সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মধ্যে চাঁদনী সাঁওতালই প্রথম কোনো সরকারি চাকরি পেয়েছে। অথচ, চাকমাদের মধ্যে সচিব আছে, মেজর জেনারেল আছে, মন্ত্রী হয়েছে, এমপি হয়েছে, ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর হয়েছে, দেশ-বিদেশে অনেক কিছু হয়েছে। এই একটি উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, বঞ্চনা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সমস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে তাদের যে বঞ্চনা এবং শোষণের কথা তারা বলে আসছিল অর্থাৎ কুকি, চাক, খিয়াং, লুসাই, মুরং, পাংখুয়া প্রভৃতির মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা কিন্তু অনেকদিন ধরেই শোষণের কথা বলছিল। এই কেএনএফের পূর্ববর্তী যে সংগঠন কেএনডিও, তারাও কিন্তু এভাবে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকারের দাবিতেই সংগঠিত হয়েছিল! তখন তারা রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক কায়দায় এই বঞ্চনার কথা বলতো। আমার জানা মতে, কেএনডিওর দাবি তৎকালীন সরকার সহানুভূতির সাথেই বিবেচনা করেছিল।

২০২২ সালের ১০ এপ্রিল পার্বত্যনিউজের মাধ্যমেই কেএনএফের অস্তিত্ব প্রথম বাংলাদেশের মানুষের সামনে উঠে আসে। আরেকটি বিষয় হলো আমরা যদি দেখি, কেএনএফ এখন যে প্রভাব বিস্তার করছে ৬টা প্রান্তিক জাতির বঞ্চনার কথা বলে। কিন্তু এটি মূলত বম ডমিনেটেড একটি সংগঠন। বমরাই এখন এটা লিড দিচ্ছে। ২০২১ সালের যে জনশুমারি হয়েছে, সে জনশুমারিতে দেখা যায় বাংলাদেশে বম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৩,১৯৩ জন। এই ১৩ হাজারের পঞ্চাশ শতাংশ যদি মহিলা ধরি, তাহলে বম জনগোষ্ঠীতে পুরুষ আছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। শিশু এবং বৃদ্ধ যদি ত্রিশ শতাংশ বাদ দিই তাহলে ৪০০০ এর মতো বম জনগোষ্ঠীতে লোক থাকে, যারা আসলে যুবক বা যুদ্ধ করার মতো, অস্ত্র নিয়ে লড়াই করার মতো সংখ্যা। এখানে উল্লেখ্য, বমরা কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের একেবারে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বলা যাবে না। চাকমাদের মতো না হলেও শতভাগ খ্রিস্টান অধ্যুষিত বম জনগোষ্ঠী যথেষ্ট অগ্রসর জীবনযাপন করে এবং চাকরি ও অন্যবিধ কারণে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ছড়িয়ে আছে।

তাহলে এখন কেএনএফ যে দাবি করছে, তাদের হাজার হাজার ফাইটার আছে, বাস্তবেও তারা অনেকদিন ধরে ফাইট করছে, তো এ লোকগুলো কারা? এরা কোথায় থেকে এসেছে? তাই কেএনএফে শুধু বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় বম জনগোষ্ঠীর সদস্য লড়াই করছে বলে আমি মনে করতে পারি না।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্যণীয়, ইউক্রেন-রাশিয়া লড়াই চলছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। এই সময়ে রাশিয়ার মতো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমরাস্ত্র রপ্তানিকারক দেশেরও অস্ত্র ঘাটতি হচে্ছ। তাই তারা ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করছে। তাহলে কেএনএফ প্রায় এক বছর ধরে যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তাতে তাদের অস্ত্র ও গোলা-বারুদের সংকট হচে্ছ না কেন? তারা রকেট লাঞ্চার, মর্টারের মতো অস্ত্রগুলো, ইউরোপীয়, আমেরিকান, চাইনিজ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল যেগুলো তাদের ভিডিওতে দেখা যায়, কোথা থেকে পাচ্ছে? এগুলো বান্দরবানে তৈরি হয় না! থানচি, রুমা তো সমুদ্র সন্নিহিত উপজেলা নয়, যে সমুদ্র পথে আসবে। পশ্চিম দিক থেকেও তাদের কোনো সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কেননা, সেখানে বাঙালি ও অন্যান্য উপজাতি বসবাস করে, যারা কেএনএফের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়। তাহলে এটা পরিষ্কার যে এই অস্ত্র ও গোলাবারুদের যোগান পূর্ব সীমান্ত দিয়েই আসছে। মূলত কেএনএফ মিজোরামের মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) ও বার্মার চিন রাজ্যের চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সিএনএফ) এবং আরো দুয়েকটি বার্মিজ ইনসার্জেন্ট গ্রুপ থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সহায়তা পেয়ে থাকে।

কেএনএফ দাবি করছে যে, তারা প্রশিক্ষণ নেয় দুই ধরনের। প্রথমত তিন মাসের তাত্তিক প্রশিক্ষণ আর পরবর্তী তিন মাস তারা প্রাক্টিক্যাল প্রশিক্ষণ নেয়। প্রথম তিন মাসে যে তারা তাত্তিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে সেটা তারা নিচ্ছে মিজোরামে এবং এরপর মিয়ানমারে গিয়ে সেখানকার বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে মিলে মিয়ানমার আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে তারা প্রাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

এদিকে কেএনএফ যে ছয়টি জাতির অধিকারের কথা বলে, তারা প্রায় শতভাগ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং কেএনএফ শতভাগ খ্রিস্টান ডমিনেটেড সংগঠন। পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য ইনসার্জেন্ট গ্রুপগুলো ধর্মীয় কোনো পরিচয়কে ব্যবহার করে না। কিন্তু কেএনএফ এটা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে। সম্প্রতি কেএনএফকে একাধিকবার সেনাবাহিনী বা আন্তঃদলীয় সংঘাতে নিহত তাদের সদস্যদের খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় করিয়ে বিশ্বের খ্রিস্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্র ও সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে সহানুভূতি পাবার জন্য।

অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, কেএনএফ এরই মধ্যে মানাসেহ নামে ইসরাইলের একটি খ্রিস্টান সংগঠনের সাথে চুক্তি করেছে। কেএনএফের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মিজোরামে ইসরাইলের ইহুদীদের একটি লস্ট ট্রাইব রয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করার আশা রইলো। সে হিসেবে জেএমবি বা জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে যদি মুসলিম জঙ্গী সংগঠন আখ্যা দেয়া যায়, তবে কেএনএফ একটি খ্রিস্টান জঙ্গী সংগঠন।

এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আজকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে বিশ্ব রাজনীতি এবং ভারত মহাসাগরীয় রাজনীতির যে নতুন প্রপঞ্চ দৃশ্যমান, নানা ধরনের ষড়যন্ত্র, নীল নকশা, উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা শুরু হয়েছে তারও কোনো প্রভাব যে কেএনএফ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখেনি এমন কথা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। ভারত মহাসাগর কেন্দ্রিক পাশ্চাত্যের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস), ইন্দো-প্যাসিফিক ডিফেন্স ফোরাম (আইপিডিএফ), অকাস, কোয়াড, বার্মা অ্যাক্ট, জাপানের বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট ইনিশিয়েটিভ (বিগ-বি) অথবা ফ্রি এন্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওয়াইপি) বা চায়নার স্ট্রিং অভ পালর্স, ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভ (ওবিওআরআই), চায়না-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোর (সিএমইসি), গ্রেট কোকো আইল্যান্ডে ঘাঁটি নির্মাণ, ভারতের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), কালাদান মাল্টিমোডাল প্রজেক্ট, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপে মার্কিন নেভির বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তি, ভারতের চিকেন নেকের বিকল্প চট্টগ্রাম-রামগড়-সাবরুম পরিবহন করিডোর সুবিধা প্রাপ্তি, থেগামুখ স্থলবন্দর, রোহিঙ্গা সমস্যা, আরাকান আর্মির উত্থান, আরসা, আরএসও’র মতো জঙ্গী সংগঠনগুলোর উপস্থিতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল বিশ্ব রাজনীতির এক নতুন কুরুক্ষেত্রে উপনীত হয়েছে। মাত্র এক বছরের মধ্যে কেএনএফের এই ভয়াবহ রূপের পেছনে উল্লিখিত ভূরাজনৈতিক প্রপঞ্চের প্রভাব রয়েছে সন্দেহাতীতভাবে। এসব বিষয় নিয়ে পরবর্তী লেখাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হবে।

বাংলাদেশে কেএনএফ বা কুকি-চিনরা যখন সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম করছে, ঠিক তখনই ফুঁসে উঠেছে মণিপুর রাজ্যের কুকিরাও। শুরুতেই বলা হয়েছে, গ্রেটার কুকিল্যান্ড রাষ্ট্রের মানচিত্রে মণিপুর রাজ্যও অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এ দু’য়ের কোনো সংযোগ রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। তবে এর আরো একটি ডাইমেনশন রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে ভারতবর্ষ ছেড়ে যাবার প্রাক্কালে স্যার রিজিল্যান্ড কুপল্যান্ড নামের এক ব্রিটিশ সমরকুশলী বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার, মিয়ানমারের কাচিন ও আরাকান ও ভারতের সেভেন সিস্টার্সের মিজোরাম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড যা চায়না বর্ডার পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে ইসরাইলের মতো একটি খ্রিস্টান বাফার রাষ্ট্রের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন ব্রিটিশ রাণীর নিকটে। যেটার নাম তিনি দিয়েছিলেন ক্রাউন কলোনি। এটি কুপল্যান্ড প্ল্যান অভ ইন্ডিয়া নামে বিখ্যাত। তবে তারও আগে ১৯৪১ সালের ১৩ নভেম্বর আসামের তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল রবার্ট নাইল রাইডস শিলংয়ে ভারতবর্ষ ও বার্মার উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলে সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের তত্ত্বাবধানে ক্রাউন কলোনি নামক রাষ্ট্রের কথা সর্বপ্রথম ঘোষণা করেন।

কুপল্যান্ডের প্রস্তাব পাবার পর ব্রিটিশ রাণী ভিক্টোরিয়া প্রস্তাবের সাথে সম্মতি প্রকাশ করেও পর পর দুইটি বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেনের অর্থনীতির পক্ষে ভারতবর্ষে সৈন্য রাখা সম্ভব নয় বলে মত প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে গেলেও আমরা দেখতে পাই, এরপর এই অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ মিশনারি আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মিয়ানমারের সন্নিহিত রাজ্যগুলো এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে আসতে থাকে। এই মিশনারিরা যারা ঢুকেছে তারা যে সবাই প্রকৃত ধর্মগুরু বিষয়টা কিন্তু এরকম না।

অনেকের মতে, ব্রিটিশ তথা ইউরোপের বিভিন্ন সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ধর্ম প্রচারের নামে মিশনারি পোশাকে এসেছে কুপল্যান্ড প্ল্যান তথা খ্রিস্টান বাফার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে। আজকে যখন বিশ্ব প্রেক্ষাপট বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক বা ভারত মহাসাগর কেন্দ্রিক নতুন প্রপঞ্চগুলো সামনে চলে এসেছে, ব্রিটিশের বার্মা অ্যাক্ট নতুন করে, নতুন রূপে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরে পুনরুজ্জীবিত হতে দেখা যায়, তখন কুপল্যান্ড প্ল্যান আশঙ্কা নিয়ে হাজির হয় নতুন করে। কেএনএফের উত্থানের পেছনে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নতুন প্রপঞ্চগুলো ভূমিকা রেখেছে কিনা তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।

সম্পাদক, পার্বত্যনিউজ,চেয়ারম্যান, সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন