খাগড়াছড়ি বিদ্যুতের গ্রিড সাব স্টেশনের কাজ ৪র্থ মেয়াদে শেষ হয়নি, কাজ বন্ধ থাকায় বর্ধিত ৫ মেয়াদেও শঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক,খাগড়াছড়ি:
ধীরগতির কারণে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার খাগড়াছড়ি বিদ্যুতের গ্রিড সাব স্টেশনের কাজ নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৮ মাস পার হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত চার দফা মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন চললে ৫ম দফা মেয়াদ। কিন্তু গত প্রায় দেড় মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় এ মেয়াদেও আদৌ শেষ হবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খাগড়াছড়ি বিদ্যুতের গ্রিড সাব স্টেশনের প্রকল্পের কাজ গত বছরের ১৭ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল। এ গ্রিড সাব গ্রিড স্টেশন থেকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির ১২টি উপজেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা রয়েছে।
জন্ম থেকে জ্বলছে খাগড়াছড়ির বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। সীমাহীন লোডশেডিং, লো-ভোল্টেজ ও লাইন ফল্ট খাগড়াছড়ির বিদ্যুৎ গ্রাহকদের যেন নিত্য দিনের সঙ্গী। লো-ভোল্টেজের পর হঠাৎ অতিরিক্ত ভোল্টেজ। নষ্ট হচ্ছে জিনিজপত্র। খাগড়াছড়িতে বর্ষাকালে দিনে রাতে চলে ৬/৭ ঘন্টা লোড শেডিং। আবার কখনো লাইন ফল্ট করলে টানা ২/৩দিন বিদ্যুতের দেখা মেলে না। বর্তমান শীত মৌসুমে লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজ।
খাগড়াছড়িতে বিদ্যুতের চাহিদা মাত্র ১৭/১৯ মেগাওয়াট। কিন্তু দীর্ঘ লাইনে কারণে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। ফলে শেয়ারিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুৎ নির্ভর মানুষের জীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় রান্না-বান্নায় বিঘ্ন হচ্ছে। ফ্রিজে রক্ষিত খাদ্য সামগ্রী পঁচে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। লো- ভোল্টেজ থেকে রেহায় পেতে ভোল্টেজ স্টেভালাইজার লাগিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।
খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আওতাধীন ৫৪ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক। বর্ষাকালে দিনে ১২/১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। কখনো আকাশে মেঘ দেখা দিলে টানা ২/৩দিন বিদ্যুতের দেখা মেলেনা। গ্রামাঞ্চলের অবস্থায় আরো ভযাবহ। এ অবস্থা চলছে বছরের পর বছর। সীমাহীন l দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলার কর্মজীবি, শিক্ষার্থী, গৃহিনী ও ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের দুরবস্থার কারণে এ অঞ্চলে শিল্প কারখানাও গড়ে উঠছে না।
খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ সংকট নিরসরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর গ্রীড সাব স্টেশন স্থাপনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। যার ব্যয় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। চলতি বছরের ১৭ আগস্ট এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
খাগড়াছড়ির হোটেল ব্যবসায়ী অরণ্য বিলাসের মালিক স্বপন দেব নাথ জানান, বর্তমানে শীত মৌসুমেও অধিকাংশ সময়-ই লো-ভোল্টেজের শিকার হচ্ছেন, গ্রাহকরা। প্রতিদিন জেনারেটরের ৫০ থেকে ৬০ লিটার তেল ব্যয় হচ্ছে।
কলা বাগানের গৃহিনী মরিয়ম বেগম জানান, এমনিতে বিদ্যুৎ থাকে না। থাকলেও লো-ভোল্টেজের কারণে কোন কাজ করা যাচ্ছে না।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক সুদর্শন দত্ত জানান, বিশেষ করে, বর্ষা মৌসুমে টানা দিনের পর দিন বিদ্যুৎ না থাকায় বিদ্যুৎ নির্ভর জন-জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বিদ্যুতের দুরবস্থার কারণে এ অঞ্চলে শিল্প কারখানাও গড়ে উঠছে না।
খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর জানান, হাটহাজারী উপ-কেন্দ্র থেকেই খাগড়াছড়ি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। দীর্ঘ প্রায় সোয়া ১’শ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় সময় লাইন ফল্ট হয়ে থাকে। আর তা খুঁজে বের করতে কয়েক দিন সময় পার হয়ে যায়। তাছাড়া দীর্ঘ লাইনের কারণে প্রতি মাসে প্রায় দুই কোটি টাকার বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। ফলে শেয়ারিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে নিমার্ণাধীন বিদ্যুতের গ্রিড সাব-স্টেশনের কাজ এ শীত মৌসুমে শেষ না হলে গরমকালে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
একটি সূত্র জানায়, রাঙামাটির চন্দ্রঘোনা থেকে ৩০১টি টাওয়ারের উপর ভর করে খাগড়াছড়ি গ্রিড সাব স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে।
গত ১৭ আগস্ট মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজের ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হয়নি। সর্বশেষ চলতি জানুয়ারি মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৩০১টি টাওয়ারের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৭০টি টাওয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। আর গ্রিড সাব গ্রিড স্টেশনের কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হলেও জটিল কাজগুলো এখনো হাত দেওয়া হয়নি।
সরেজমিন রবিবার(২১ জানুয়ারি) খাগড়াছড়িতে নিমার্ণাধীন বিদ্যুতের গ্রিড সাব-স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কাজ বন্ধ। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক শ্রমিক জানান, গত প্রায় চার মাস ধরে তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে।
তবে খাগড়াছড়ি ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ গ্রিড সাব স্টেশনের প্রকল্প পরিচালক মো. শফি উল্লাহ প্রকল্পের কাজ চলছে এবং আগামী মার্চের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে জানান।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি এ পার্বত্যনিউজকে জানিয়েছিলেন, প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এবং আগামী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। খাগড়াছড়ি জেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা এ পরিস্থিতির অবসান চেয়েছেন।