গাম্বিয়ার করা মামলায় রোহিঙ্গা গণহত্যার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি

fec-image

উগ্র এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর উসকানিতে স্থানীয় চরমপন্থী এবং বার্মিজ সামরিক বাহিনীদের হাতে রোহিঙ্গাদের নিহত হওয়ার বিষয়টি কয়েক বছর আগে খবরের শিরোনাম হয়েছিল।এই নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বাংলাদেশসহ অন্যান্য জায়গায় পালিয়ে যায়।

এই হত্যাকাণ্ডকে গাম্বিয়া গণহত্যার সামঞ্জস্যতার সাথে তুলনা করে বার্মা তথা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের করে। মিয়ানমারের পক্ষে আদালতে আইনি লড়াইয়ে নেতৃ্ত্ব প্রদান করেন দেশটির বেসামরিক নেতা ও নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি।এই গণহত্যার সাথে জড়িত সেনাবাহিনীদের রক্ষার জন্যই মূলত তিনি নেতৃত্ব প্রদান করেন।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) এই কারণে আলাদা যে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে মামলার শুনানি করে তারা। মিস সু চি গতানুগতিকভাবে তার বক্তব্য রেখেছেন এবং সহিংসতার বিষয় অস্বীকার করেছেন।

অথচ তার দেশের বিরুদ্ধে যে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, সেগুলোতে ভয়াবহ বর্বরতার চিত্র উঠে এসেছে। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, কখনও সেই সব গ্রামে আগুন দেয়া ঘরে মানুষ আটকা পড়েছিল।

এই হামলার শিকার শুধু কয়েকশ বা কয়েক হাজার নয়, বরং প্রায় পৌনে এক মিলিয়ন মানুষ তাদের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গেছে। এদের মধ্যে যারা ভারতে গেছে, তারা সেখানে নাগরিকত্বের সুযোগও পাবে না, কারণ মোদির নতুন নাগরিকত্ব আইনে মুসলিম শরণার্থীদের সেখানে কোন স্থান নেই।

আদালত অং সান সু চির নিন্দা করেছে, এবং রোহিঙ্গাদের চরম অসহায় ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছে। সামরিক বাহিনীর হাত থেকে তাদেরকে রক্ষার জন্য মিয়ানমার সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

তবে, দুঃখজনক হলো এই আদেশ প্রয়োগের মতো কোন শক্তি নেই আদালতের। আদালত তার পর্যবেক্ষণগুলো শুধু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে তুলে দিতে পারে।যেখানে মিয়ানমারের বন্ধু চীন স্থায়ী সদস্য, যাদের ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

আবার আদালতের সিদ্ধান্তের একটা বাধ্যবাধকতা আছে। তাই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটা প্রস্তাবনা নিতে পারে, বা জেনেভার হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল এ ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারে।প্যারোলো মুক্তি পাওয়া কাউকে আদালতে যেভাবে রিপোর্ট করতে হয়, মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও সে ধরনের আদেশ দেয়া হয়েছে। আদালত একই সাথে মিয়ানমার সরকারের প্রতি এই শর্তও আরোপ করেছে যে, রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে কি ঘটছে, সে ব্যাপারে আদালতকে জানাতে হবে। প্রথমে চার মাস পর, এবং এর পর থেকে প্রতি ছয় মাস পর পর অগ্রগতি আদালতকে জানাতে হবে।

মিয়ানমার এই হত্যাকাণ্ডের বহু প্রমাণ পুর্বে ধ্বংস করে দিয়েছে। তবে এবার মিয়ানমারের প্রতি আরেকটা সতর্ক করা হয়েছে তারা যেন কোন হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ ধ্বংস না করে।

তবে, এখন বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক চাপের উপর, যা মিয়ানমারকে এই আদেশগুলো মানতে কতটা বাধ্য করতে পারে। আর মিয়ানমার এটা এড়িয়ে যাওয়ার যত চেষ্টা করবে, তত চাপ বাড়াতে হবে।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন