ঘূর্ণিঝড়ে ভিজে যাওয়া প্রিয় বই শুকানোর অপেক্ষায় শেফায়দা
কক্সবাজার প্রতিনিধি:
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু তাণ্ডবে লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে কুতুবদিয়া’র বিস্কৃন্ন এলাকা। ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। পানির নীচে তলিয়ে গেছে ঘর বাড়ি। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে অভ্যস্থ উপকূলবাসী সব হারিয়েও পুনরায় নতুনভাবে সবকিছু শুরু করছে। বাস্তব চিত্র দেখতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার উপর বসে খুব মনযোগ সহকারে ভিজে যাওয়া বই শুকাচ্ছিল এক মেয়ে শিশু। লক্ষ্য করা যায়, ওই শিশুটি তার ঘর-বাড়ি হারিয়ে যতটুকুনা কষ্ট পেয়েছে, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে বইগুলো ভিজে যাওয়ায়। শিশুটিকে খুব যত্নসহকারে রোদের মধ্যে ভিজে যাওয়া বই শুকাতে দেখা যায়।
জানা যায়, তার নাম শেফায়দা বেগম। বয়স ১১। শেফায়দা কুতুবদিয়া উত্তর ধুরুং আজগরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। সে ওই এলাকার জাফর আলমের মেয়ে। শেফায়দার সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২১ মে শনিবার ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর দিন দুপুরে তাদের ঘরে পানি ডুকতে শুরু করে। বাড়ির সবাই জিনিসপত্র নিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু দ্রুত পানি চলে আসায় জিনিসপত্র সরানো যায়নি কোনভাবে নিজেদের রক্ষা করা গেছে। ওই সময় শেফায়দার মনে একটাই চিন্তা ছিল, যদি তার বই ভেসে যায় তাহলে কিভাবে লেখাপড়া করবে। তাই সব কিছু বাদ দিয়ে বুকে আগলে ধরেছিল প্রিয় বইগুলো। বই খাতা রক্ষা হয়েছে। তবে ভিজে একাকার হয়ে গেছে শেফায়দার প্রিয় বইগুলো। এই বইগুলোর জন্য তার খুব মায়া। এই মুর্হুত্বে তার একটাই চিন্তা কখন প্রিয় বইগুলো শুকাবে। আর ওসব নিয়ে পুনরায় স্কুলে যাবে।
শেফায়দা’র বাবা জাফর আলমের সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে তিনি সর্বস হারিয়েছেন। ঘরের বেশিরভাগ জিনিসপত্র ভেসে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে তার প্রচেষ্টা ছিল কিভাবে ঘরের জিনিসপত্র বাঁচাবে। কিন্তু তার মেয়ে তাকে কোন ধরণের সহযোগিতা করেনি। শুধু বুকে আগলে ধরে রক্ষা করেছে তার প্রিয় বইগুলো। এই নিয়ে তার কোন কষ্ট নেই। বরং পিতা হিসেবে তার আনন্দ লাগতেছে তার মেয়ের এই বই প্রেমের দৃশ্য দেখে। শেফায়দা এখনও পর্যন্ত ঘরের কোন কাজে হাত দিচ্ছে না। না খেয়ে না পরে শুধু চেষ্টা করছে প্রিয় বইগুলো শুকাতে। আনন্দের সাথে বই নিয়ে আবার স্কুলে ছুটে চলে যেতে পারবে। তার মনে ধারণা এই বই না হলে আর লেখা পড়া হবে না। সে তার প্রিয় স্কুলের বন্ধুদের সাথে পড়রতে পারবে না।