চকরিয়ায় বদরখালী কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ

fec-image

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা লঙ্গনের মাধ্যমে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদের বদরখালী কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কলেজ গর্ভনিং বড়ির আপত্তির মুখে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও সম্প্রতি সময়ে মুজিবুর রহমান নামের এক প্রার্থীকে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার অফিসাদেশ দেওয়া হয়েছে।

অনিয়মের এ ঘটনায় কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য ও বদরখালী সমিতির সাবেক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন খান বাদি হয়ে দায়ের করা একটি রিট মামলার প্রেক্ষিতে হাইর্কোটের বিজ্ঞ বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বৈঞ্চ মামলার শুনানী শেষে কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে রুলনিশি জারি পুর্বক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন। বাদিপক্ষের কৌশলী হাইর্কোটের সিনিয়র আইনজীবী মোজাহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম হাইর্কোট স্থগিত ঘোষণা করলেও দায়িত্বভার হস্তান্তর ছাড়াই সর্বশেষ মঙ্গলবার(৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে কলেজে উপস্থিত হয়ে (নিয়োগের প্রক্রিয়াধীন অধ্যক্ষ) মুজিবুর রহমান অতর্কিত অধ্যক্ষের অফিসকক্ষ ও পাশের একটি নামাজের স্থানে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি সেখান থেকে বেশ কিছু আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন।

এ ঘটনায় কলেজের শিক্ষক, গর্ভনিং কমিটি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

কলেজ গভর্নিং বডির অন্যতম সদস্য জয়নাল আবেদিন খাঁন বলেন, জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের নীতিমালার আলোকে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বদরখালী কলেজের জন্য অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়।

এরই প্রেক্ষিতে মোট ১৩ জন প্রার্থী আবেদনপত্র দাখিল করলেও ওইসময় ৯জনকে বাদ দিয়ে নিয়োগ কমিটির সংশ্লিষ্টরা অপর চার প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে সুযোগ দেন। যদিও পরীক্ষায় অংশ নেয়া চার প্রার্থীর মধ্যে মহেশখালী আলমগীর ফরিদ টেকনিকেল কলেজের শিক্ষক মুজিবুর রহমানসহ তিনজন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার আলোকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে যথেষ্ঠ যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে।

তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা পরবর্তী ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট কলেজ গভর্নিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কলেজের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ছাড়াও অধ্যক্ষ পদে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন কমিটির বেশিরভাগ সদস্য। এরই আলোকে কলেজ কমিটির সাবেক সভাপতি প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন।

সভার সিদ্বান্তের আলোকে অধ্যক্ষ পদে পরীক্ষায় অংশনেয়া প্রার্থীদের যোগ্যতা মুল্যায়ন পুর্বক প্রতিবেদন দিতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির সদস্যরা হলেন কলেজ কমিটির সদস্য ও বদরখালী সমিতির প্রয়াত সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী, জয়নাল আবেদিন খান, সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, মাস্টার শাহাব উদ্দিন ও কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আফছারুজ্জামান।

জয়নাল আবেদিন খান বলেন, পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের গঠিত মুল্যায়ন কমিটি কলেজ সভাপতির কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। কিন্তু মুল্যায়ন কমিটির ওই প্রতিবেদন উপেক্ষা করে সাবেক সভাপতি হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ একক ক্ষমতাবলে কলেজের অধ্যক্ষ পদে মুজিবুর রহমানকে পরীক্ষা পরবর্তী উর্ত্তীণ দেখিয়ে নিয়োগ দিতে জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ে সুপারিশপত্র প্রেরণ করেন।

বিষয়টি জানতে পেরে কলেজ গভর্নিং কমিটির বেশিরভাগ সদস্য উল্লেখিত সুপারিশপত্রের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর উকিল নোটিশ দেন। এরই মধ্যে সভাপতির পাঠানো সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের কলেজ পরির্দশক ড.মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে মুজিবুর রহমানকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন।

তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জারিকৃত নিয়োগ চুড়ান্ত করণের বিরুদ্ধে কলেজ গভর্নিং কমিটির সদস্যরা ২০১৯ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত সভায় ফের অভিযোগ উপস্থাপন করেন। এরই আলোকে ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট কলেজ কমিটির সভায় অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর একই বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে ফের আরও একটি উকিল নোটিশ দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, অধ্যক্ষ নিয়োগে দীর্ঘসময় জটিলতার কারনে কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানাধরণের প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়ায় সর্বশেষ চলতি ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত গর্ভনিং বডির সভায় বিষয়টির আলোকে আলোচ্যসুচী উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে উল্লেখিত বিষয়ে বিশদ আলোচনা শেষে সভার সিদ্বান্ত মোতাবেক জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের ১৯ সালের জনবল কাঠামো নীতিমালা অনুযায়ী ফের অধ্যক্ষ নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করতে অনুমোদন দেয়া হয়।

কলেজ কমিটির সদস্য খান জয়নাল আবেদিন দাবি করেছেন, নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে অনুমোদন দেয়া হলেও উল্টো কোন ধরণের পরীক্ষা ছাড়াই ১৯ জানুয়ারি কলেজ কমিটির সভাপতি একতরফাভাবে বহুল বিতর্কিত মুজিবুর রহমানকে ফের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ চুড়ান্ত করে অফিসাদেশ দেন।

এরই প্রেক্ষিতে উল্লেখিত অফিসাদেশের বিরুদ্ধে  ২ ফেব্রুয়ারি কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য জয়নাল আবেদিন খান বাদি হয়ে হাইর্কোটে একটি রিট মামলা (১৩৭৩/২০) দায়ের করেন। বাদিপক্ষে আদালতে মামলাটি শুনানী করেন সিনিয়র আইনজীবী মোজাহিদুল ইসলাম।

শুনানী শেষে হাইর্কোটের বিজ্ঞ বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বৈঞ্চ কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে রুলনিশি জারি পুর্বক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন।

মামলার বাদি জয়নাল আবেদিন বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম হাইর্কোট স্থগিত ঘোষণা করলেও দায়িত্বভার হস্তান্তর ছাড়াই সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সকালে কলেজে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত মুজিবুর রহমান (নিয়োগের প্রক্রিয়াধীন অধ্যক্ষ) অতর্কিত অধ্যক্ষের অফিসকক্ষ ও পাশের একটি নামাজের স্থানে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন।

একইসঙ্গে তিনি সেখান থেকে বেশ কিছু আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনায় কলেজের শিক্ষক, গর্ভনিং কমিটি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে অভিযুক্ত মুজিবুর রহমানের রবি নাম্বার মোবাইলে একাধিকবার কল দেয়া হয়। তিনি ফোনটি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে কলেজ কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদিন খান বলেন, হাইর্কোটের আদেশ মোতাবেক কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত সবধরণের কার্যক্রম স্থগিত রাখা না হলে পরবর্তীতে এব্যাপারে আদালতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করতে আমরা সিদ্বান্ত নিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্ট
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন