চট্টগ্রামে কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ১৭ বছর উপলক্ষে মিছিল, আলোচনা সভা, পিবিসিপি’র প্রতিবাদ

Kalpana abduction day, 12 June 2013, Khagrachari

পার্বত্য নিউজ ডেস্ক:

হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে গণতান্ত্রিক যুক ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে আজ ১২ জুন বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জামাল খানস্থ গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি জিকো মারমা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংগঠক বকুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য এসি মং মারমা, বন্দর থানা শাখার সভাপতি বিজয় চাকমা, সদস্য শুভ চাক, শ্রমিক নেতা অর্পন চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সুকৃতি চাকমা।

বক্তারা বলেন, গত ১৭ বছরে প্রত্যেক সরকার মরিয়া হয়ে কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের রক্ষা করেছে। তদন্তের নামে প্রহসন করা হয়েছে। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে গেছে।

মাত্র কয়েকজন অপরাধীকে রক্ষা করতে গিয়ে সেনাবাহিনী নামক গোটা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিও আজ প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে আলোচকবৃন্দ আরো বলেন, ঘটনার সময় অপহরণকারী লে: ফেরদৌসসহ কয়েকজনকে চেনা গেছে বলে অভিযোগ করার পরও সাক্ষীদের বক্তব্য আমলে নেয়া হয়নি।

নেতৃবৃন্দ তদন্তের নামে তালবাহানা না করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে অবিলম্বে অপহরণকারীদের গ্রেফতার পূর্বক যথাযথ শাস্তি বিধানের দাবি জানান।

এদিকে, কল্পনা চাকমা’র চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস’কে গ্রেফতার ও এসপি কর্তৃক কল্পনা অপহরণ তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। আজ ১২ জুন বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় উপজেলা মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি চেঙ্গীস্কোয়ার হয়ে শাপলা চত্বরের দিকে যেতে চাইলে মহাজনপাড়াস্থ সূর্য্যশিখা ক্লাবের সামনে পুলিশ বাঁধা দেয়। পুলিশি বাঁধার কারণে মিছিলটি সেখান থেকে ফিরে চেঙ্গী স্কোয়ারে এসে সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি উমেশ চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামে’র সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্য সিং মারমা, পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এমএন লারমা পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক অমর সিং চাকমা। সমাবেশ পরিচালনা করেন পিসিপি নেতা অংকন চাকমা।

সমাবেশে মাইকেল চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের ১৭ বছর পরও সরকার দোষীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এভাবে দোষীরা গ্রেফতার ও শাস্তি না পাওয়াতে পাহাড়ে একের পর এক পাহাড়ি নারী ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি সম্প্রতি ভূমি কমিশন আইন সংশোধনী ও বহিরাগত বাঙালিদের ৭২ ঘন্টা হরতালকে সমালোচনা করে বলেন, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইন ব্যবস্থা মেনে না নিয়ে কমিশন আইন শতবার সংশোধনী আনা হলেও এই কমিশনকে দিয়ে ভূমি সমস্যা সমাধান করা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন আইন সংশোধনীর পর সেটলার বাঙালিদের একটি অংশকে উস্কে দিয়ে সরকার ও বিরোধীদলের উগ্রসাম্প্রদায়িক অংশটি পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করা চক্রান্ত চালাচ্ছে। পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়কে সাম্প্রদায়িক উস্কানীতে কান না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

পিসিপির সভাপতি থুইক্য সিং মারমা বলেন, কল্পনা চাকমাকে নির্বাচনের সাত ঘন্টা আগে কজইছড়ি ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. ফেরদৌসে নেতৃত্বে এক দল সেনা ও ভিডিপি সদস্য কর্তৃক লাল্যাঘোনার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। এই ঘটনা চাক্ষুষ স্বাক্ষী কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা। কিন্তু অপহরণকারীরা চিহ্নিত হলেও সরকার ১৭ বছর ধরে এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তারা কোন কূল কিনারা বাহির করতে পারেননি। তিনি বলেন সরকার এত তালবাহানা না করে চিহ্নিত অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আসল ঘটনা জানা যাবে।

এদিকে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,  পার্বত্যাঞ্চলকে নিয়ে উপজাতীয় নেতাদের কল্পিত “স্বাধীন জুমল্যান্ড” ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কল্পনা অপহরন নামক নির্লজ্জ্ব “কল্পনা ড্রামা” কাহিনী সৃষ্টি করা হয়। “কল্পনা ড্রামা” বর্ষপূর্তি পালনের মাধ্যমে উপজাতীয় নেতারা বিশ্বের দরবারে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

পার্বত্য অঞ্চলকে “জুমল্যান্ড” বাননোর পথে বড় বাধা বিভিন্ন মিশন শেষে আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পার্বত্য অঞ্চল থেকে সরানোর লক্ষ্যে সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে নির্লজ্জ্ব “কল্পনা ড্রামা” সৃষ্টি করে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিন্তানের পক্ষ অবলম্বনকারী উপজাতীয়দের কাছ থেকে এর চেয়ে ভাল কিছু আশা করায যায় না। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের মাধ্যমে দেশের ভূখন্ড নিরাপত্তহীন করার লক্ষ্যে উপজাতীয় নেতাদের দাবী যার প্রমান।

আরো প্রমানিত হয় যে, উপজাতীয় এবং উপজাতীয় নেতা হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমা পার্বত্য অঞ্চলকে সেনাশূন্য করতে আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি পার্বত্যাঞ্চল নিয়ে “জুমল্যান্ড” বানানোর ষড়যন্ত্রের বর্হিপ্রকাশ। ”কল্পনা ড্রামাও” জুমল্যান্ড ষড়যন্ত্রের নীলনকশার অংশ হিসেবে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক উপজাতীয় নেতাদের এহেন নির্লজ্জ্ব কর্মকান্ড বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য সরকারের প্রতি বিনীত আহবান জানাচেছ। রাষ্ট্রের সম্মান, অখন্ডতা রক্ষ্যার্থে উপজাতীয় নেতাদের ষড়যন্ত্রমূলক যেকোন কর্মকান্ড প্রতিহত করতে পার্বত্য বাঙ্গালী সমাজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন